ছাদের ওপর ডিএসসিসির ‘প্রজাপতি পার্ক’
রাজধানীর ধলপুর আউটফল স্টাফ কোয়ার্টার। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসস্থলের ভেতরে বেদখল হয়ে থাকা একটি পার্ককে সাজানো হয়েছে নান্দনিক রূপে। প্রজাপতির আদলে তৈরি দৃষ্টিনন্দন পার্কটি ছোট-বড় সকলকে মুগ্ধ করছে।
১২ কাঠা জমির ওপর নির্মিত পার্কটিতে বেশ বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দৃষ্টিনন্দন হচ্ছে প্রজাপতির আকারের বাগান। পার্কের ভেতরে থাকা একতলা ভবনের ছাদের মধ্যে প্রজাপতির আদলে পাঁচটি কাঠামো রয়েছে। পার্কে সময় কাটানো কেউ সেখানে গেলেই মনে হবে পাঁচটি সবুজ প্রজাপতি রঙিন পাখা মেলে সেখানে বসে আছে। পাশেই দৃষ্টিনন্দন পাঠাগার ও কফি হাউস। নিচতলার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মিলনায়তনে বিয়ে, গায়েহলুদসহ সামাজিক অনুষ্ঠানের সুযোগ রয়েছে।
পার্কটির সামনের উন্মুক্ত জায়গায় সবুজ ঘাসে ভরা খেলার মাঠ। অন্যপ্রান্তে সুদীর্ঘ পুকুর। চারপাশে বিস্তীর্ণ ওয়াকওয়ে। রাতে বাহারি রঙের আলোর খেলায় আউটফল স্টাফ কোয়ার্টার শিশু পার্কটি যেন ভিন্ন রূপ পায়।
ডিএসসিসি কর্মকর্তারা জানান, আয়তনে ছোট হলেও পার্কটির নকশায় বৈচিত্র্য আনা হয়। মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের অগ্রাধিকার ‘জলসবুজে ঢাকা’ প্রকল্পের আওতায় ২০১৭ সালের ১ আগস্ট এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। দুই কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে সাজানোর পর গত বছরের ৬ ডিসেম্বর এটির উদ্বোধন করা হয়।
অপরূপ সৌন্দর্যের কারণে পার্কটিতে প্রতিদিন অভিভাবকসহ শিশু-কিশোরদের ভিড় লেগেই থাকত। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে পার্কটি বন্ধ রয়েছে। তবে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলমান।
স্থানীয়রা জানান, ছোট হলেও পার্কটি খুবই সুন্দর। স্থানীয়দের চিত্তবিনোদনের অভাব পূরণ করেছে পার্কটি। বিশেষ করে ছোট ছোট শিশু ও কিশোরদের পদচারণায় সবসময় মুখর থাকত এটি। করোনার কারণে আপাতত পার্কটি বন্ধ থাকলেও আশা করা হচ্ছে এটি চালু হলে ফের শিশু-কিশোররা এখানে হুমড়ি খেয়ে পড়বে।
ডিএসসিসি সংশ্লিষ্টরা জানান, মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন নির্বাচিত হওয়ার পর ১৯টি পার্ক আর ১২টি খেলার মাঠ আধুনিকায়নের জন্য প্রকল্প হাতে নেন। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এতে ব্যয় প্রথমে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা ধরা হলেও পরে নকশা পরিবর্তনের কারণে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ৭০০ কোটি ১৯ লাখ টাকায়। এই বরাদ্দের ৭০ শতাংশ দেয় সরকার, বাকি ৩০ শতাংশ বহন করে ডিএসসিসি।
ধলপুর আউটফল স্টাফ কোয়ার্টার শিশু পার্কটি সম্পর্কে মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর দেখেছি নগরবাসীর চিত্তবিনোদনের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই আমরা ‘জলসবুজে ঢাকা’ প্রকল্পটি গ্রহণ করি। এর আওতায় আমাদের ১৯টি পার্ক ও ১২টি খেলার মাঠ বিশ্বমানের করে সাজিয়েছি। এগুলোতে জল ও সবুজের মেলবন্ধন রাখা হয়েছে।
‘আউটফল স্টাফ কোয়ার্টার শিশু পার্ক এরই একটি। ধলপুরে ডিএসসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানরা যেন খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে সুন্দর পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারে, সেই লক্ষ্যে পার্কটি সাজানো হয়েছে। এটি প্রজাপতির আদলে তৈরি।’
সাঈদ খোকন আরও বলেন, আমাদের ‘জল-সবুজে ঢাকা’ প্রকল্পের মাধ্যমে মাঠগুলোর উন্নয়ন করছি। এ প্রকল্পের আওতায় আমরা মাঠ ও পার্কের দৃশ্য বদলে দিয়েছি। আধুনিকায়নের মাধ্যমে এসব পার্ক ও খেলার মাঠগুলো আন্তর্জাতিক মানের করা হচ্ছে। পার্ক-মাঠের নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এরই মধ্যে অনেক মাঠের কাজ প্রায় শেষপর্যায়ে রয়েছে।
ডিএসসিসি সূত্রে জানা যায়, এলাকার মাঠ ও পার্কের উন্নয়নে গ্রহণ করা ‘জল-সবুজে ঢাকা’ প্রকল্পের আওতায় ৩১টি মাঠ ও পার্কের নকশা প্রণয়ন করেন রফিক আযমের নেতৃত্বে ৭০ জন স্থপতি। মাঠগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি ইতোমধ্যে সর্বসাধারণের জন্য খুলেও দেয়া হয়েছে। আরও কয়েকটি মাঠ উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। মেয়র সাঈদ খোকনের মেয়াদকালেই (মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত) এ প্রকল্পের ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
ধলপুর আউটফল স্টাফ কোয়ার্টার শিশুপার্ক ছাড়াও প্রকল্পভুক্ত রয়েছে- মতিঝিলের সিরাজ-উদ্দৌলা পার্ক, বংশালের ত্রিকোণাকার পার্ক, কলাবাগান খেলার মাঠ, গোলাপবাগ খেলার মাঠ, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা পার্ক, মালিটোলা পার্ক, সিক্কাটুলী পার্ক, মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন পার্ক, গুলিস্তান পার্ক, বাসাবো মাঠ, শহীদ আব্দুল আলীম খেলার মাঠ, জোড় পুকুর মাঠ, রসুলবাগ পার্ক, বাহাদুরশাহ পার্ক, নবাবগঞ্জ পার্ক, গজমহল পার্ক, হাজারীবাগ পার্ক, বাংলাদেশ মাঠ, সাদেক হোসেন খোকা খেলার মাঠ, পান্থকুঞ্জ পার্ক, আজিমপুর শিশুপার্ক, শহীদনগর মিনি স্টেডিয়াম, সামসাবাদ খেলার মাঠ, দেলোয়ার হোসেন খেলার মাঠ, বালুরঘাট খেলার মাঠ, ওসমানী উদ্যান বা গোসস্যা নিবারণী পার্ক, বকশীবাজার পার্ক ও বশির উদ্দিন পার্ক।
প্রকল্পের আওতায় মাঠ বা পার্কগুলোর কোনো কোনোটিতে এলইডি লাইটিং, কফি হাউস, ফুডকোর্ট, কারপার্কিং, জাদুঘর, পাঠাগার, গ্রিন জোন, পাবলিক প্লাজা, লেডিস কর্নার, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, হাতিরঝিলের মতো জলাধারের পাশাপাশি সবুজ বাগান ও বেষ্টনী। গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের ভাস্কর্যও থাকছে এসব স্থানে। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়ানোর জন্য মনোরম জায়গা হয়ে উঠেছে একেকটি মাঠ ও পার্ক।
এএস/এমএআর/এমএস