ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

রমজানের সব আনন্দ কেড়ে নিয়েছে করোনা

ফজলুল হক শাওন | প্রকাশিত: ০৮:৫৬ এএম, ১২ মে ২০২০

পবিত্র রমজান মাস মুসলমানদের জন্য একটি আনন্দের মাস। রমজান মাসে রোজা রেখে ইফতার করা ও ইফতার করানোও আনন্দের কাজ। বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন, অফিস-সহকর্মী, পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে ইফতার করা এবং রাজনৈতিক দলের ইফতার পার্টি আমাদের সংস্কৃতির একটি অংশ। এছাড়া পুরান ঢাকাসহ সারাদেশেই রকমারি ইফতারির পসরা সাজিয়ে ইফতার বিক্রি করে এবং ক্রয় করার মধ্যে রয়েছে আনন্দ।

বিশেষ করে আয়োজন ও জমায়েত করে ইফতার করলে যেমন আনন্দ পাওয়া যায় তেমনি একে অপরের মধ্যে সম্পর্কও আরও মজবুত হয়। কিন্তু এসবের কিছুই এবারের রমজানে নেই। করোনা রমজানের সব আনন্দই কেড়ে নিয়েছে।

সারাদিন রোজা থাকার পর বিকেলে ইফতার তৈরি করে প্রতিবেশীর ঘরে পাঠানো, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব বা সহকর্মীর বাসায় ইফতার পাঠানো এবং প্রতিবেশীর ইফতার নিজের ঘরে আসার সংস্কৃতি যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। এর মধ্যদিয়ে আমরা যেমন আনন্দ উপভোগ করি তেমনি আত্মীয়তার বন্ধনটাও দৃঢ় হয়।

কিন্তু করোনা এবার সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে। প্রতিবেশী বা যে কারো বাসায় ইফতার পাঠানো দূরের কথা; এবার কোনো আত্মীয় কারো বাসায় গেলেও দরজা খোলে না। খুললেও দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলেই বিদায় করে দিচ্ছে। বিষয়টি আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে অত্যন্ত বেমানান হলেও বাস্তবতার কারণেই সবাই এ পরিস্থিতি মেনে নিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছেন অনেকে।

পবিত্র রমজান মাসে একদিকে যেমন রোজার আনন্দ অন্যদিকে রোজার শুরু থেকে চাঁদরাত পর্যন্ত নিজের এবং আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের জন্য কেনাকাটারও একটা আনন্দ আছে। পাঞ্জাবি-পায়জামা, জুতা, স্যান্ডেল, শাড়ি, সালোয়ার কামিজ থেকে শুরু করে প্রসাধনী কেনাকাটায় পুরো মাসটা ব্যস্ততার মধ্যদিয়ে কেটে যায়। তবে এর মধ্যে আনন্দও আছে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এবার মার্কেট, সুপারমল, দোকানপাট সব বন্ধ। করোনার কারণে বড় বড় সুপারমলগুলো খুলবে না আগেই জানিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। রোজার মাঝামাঝি এসে দু-একটি দোকানপাট বা ছোটখাট মার্কেট খুললেও সেখানে কোনো ক্রেতা নেই। করোনা আতঙ্কের কারণে অনেকে ঘর থেকেই বের হচ্ছেন না। ফলে কেনাকাটার আনন্দ থেকেও দেশবাসীকে বঞ্চিত করছে করোনা।

রমজান মাস এলেই দেশের রাজনৈতিক দলগুলো বড় বড় ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে থাকে। সারা মাস এসব ইফতার মাহফিলে লাখ লাখ লোকের সমাগম ঘটে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ দেশের সব রাজনৈতিক দল ও এর অঙ্গ-সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলো ইফতার পার্টির আয়োজন করে। এর মধ্যদিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যেও সম্পর্ক আরও মজবুত হয়। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়সহ সহযোগী সংগঠনগুলোর অফিসেও প্রতিদিন শতশত মানুষের ইফতারের আয়োজন থাকত। আর গণভবনে নির্মাণ করা হতো বিশাল প্যান্ডেল। প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য ইফতারির আয়োজন করা হতো। মানুষের পদচারণায় যেসব জায়গাগুলো মুখরিত ছিল সেই স্থানগুলো এবারের রমজানে জনশূন্য খাঁ খাঁ করছে।

প্রতি রমজান মাসে আওয়ামী লীগ যে ইফতারকেন্দ্রিক রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত থাকত, এবার তা নেই। করোনা পরিস্থিতিতে সব পাল্টে গেছে। করোনার কারণে না খেয়ে থাকা মানুষজনের কাছে ত্রাণ আর ইফতারসামগ্রী নিয়ে হাজির হচ্ছেন দলটির নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণে রমজান মাসে ইফতারকেন্দ্রিক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ছন্দপতন ঘটলেও মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ বাড়িয়েছে এই ভাইরাস। তারা বলছেন, সারাদেশেই রমজান মাসে মানুষের মধ্যে আনন্দ এবং উৎসবমুখর ভাব থাকলেও এবার অন্যরকম এক আতঙ্ক বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মানুষকে সচেতন করে পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি সেই আতঙ্ক বা ভয়কে জয় করতে উৎসাহ আর অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছেন।

এ বিষয়ে কথা হয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিমের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রতিবছর রমজান মাসে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ইফতার মাহফিল করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে ইফতার করেন। কিন্তু এবার প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হয়েছে। তবে প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।’
তিনি বলেন, লকডাউনের কারণে সারাদেশে অনেক মানুষেরই কাজকর্ম নেই। বিশেষ করে লেবার শ্রেণির লোকেরা যারা ঘরে বসে দিন কাটাচ্ছেন-এমন গরিব ও অসহায় লাখ লাখ মানুষের পাশে ত্রাণ নিয়ে হাজির হচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

‘আওয়ামী লীগ সবসময় ত্যাগের রাজনীতি ধারণ করে এদেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে আসছে। করোনা মোকাবিলায়ও নেতাকর্মীরা যেমন ত্রাণ দিচ্ছেন আবার মানুষের মনে সাহস জোগাচ্ছেন করোনা প্রতিরোধে’-যোগ করেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।

দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক এ বিষয়ে জাগো নিউজকে বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে আগের রমজান মাস আর এবারের রমজান মাসের মধ্যে অনেক পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে। তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কারণে প্রত্যেকে আমরা একে অপর থেকে দূরে থাকলেও ত্রাণ এবং ইফতার নিয়ে গবির দুঃখী মানুষের কাছে ছুটে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। প্রতি রমজানে আমরা নিজেরা দলীয় নেতাকর্মী ছাড়া বিভিন্ন পেশার মানুষদের নিয়ে ইফতার করে যে আনন্দ উৎসব করতাম এবার তা না করে ক্ষুধার্ত মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করে এবং গবির দুঃখীদের পাশে দাঁড়াতে পেরে খুব আনন্দবোধ করছি।

তিনি বলেন, আমার নিজ এলাকায় বগুড়ায় আজ দেড়মাস ধরে ত্রাণ বিতরণ, ইফতার বিতরণ ও ছাত্রলীগকে সঙ্গে নিয়ে মানুষের ধানকেটে দেয়াসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজ করে দিন পার করছি। সারাদেশে আওয়ামী লীগের সব নেতারাই দাঁড়িয়েছেন ক্ষুধার্ত গবির মানুষের পাশে।

এফএইচএস/এসআর/জেআইএম