নতুন রূপে সাজছে ঢাকা শিশু পার্ক
পুরনো চেহারা বদলে নতুন রূপে সাজছে ‘ঢাকা শিশু পার্ক’। রাজধানীর শাহবাগের এই পার্কে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ও সবুজ ঘাসের গালিচা এটিকে যেমন সবুজ উদ্যানে পরিণত করবে, তেমনি পার্কের মাঝখানে নয়নাভিরাম ফোয়ারা মুগ্ধ করবে যে কাউকে। পার্কটির প্রবেশপথ হবে স্বয়ংক্রিয়।
শুধু তাই নয়, পার্কটিতে যুক্ত করা হবে আধুনিক বেশ কিছু রাইড। এর মধ্যে থাকবে গার্ডেন সারাউন্ডিং ট্রেন, গ্রেট আর্থকোয়াক, ফোরডি ডার্ক রাইড, স্পেস শাটল, মাইন কোস্টার, ড্যান্সিং পার্টি, মিউজিক বোট, টি কাপ, সুপার সুইং, এয়ার বাইসাইকেল, জেলিফিশ, ক্যারোসেল, ক্লাইম্বিং কারসহ নানান রাইড।
রাজধানীর প্রাণ কেন্দ্রের এ শিশু পার্কটিকে এভাবে সাজাচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং শিশু পার্ক আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এজন্য ২৬৫ কোটি ৪৪ লাখ ৩০ হাজার টাকার প্রকল্প নেয়া হয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় গণপূর্ত অধিদফতর। অপরদিকে শিশু পার্ক আধুনিকায়নের দায়িত্ব দেয়া হয় ডিএসসিসিকে। প্রকল্পের মোট বরাদ্দ থেকে শিশু পার্কের জন্য রাখা হয় ৭৩ কোটি ২০ লাখ টাকা।
যদিও এ অর্থ নিয়ে পার্কের আধুনিকায়ন সম্ভব নয় বলে জানিয়েছিল সিটি করপোরেশন। পরে গত ৯ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ডিএসসিসির বৈঠকে শিশু পার্কে নতুন রাইড সংযোজনের জন্য আলাদা প্রকল্প নিতে সিদ্ধান্ত হয়। এজন্য সরকারের জিওবি তহবিল থেকে অর্থ দেয়া হবে। যার ফলে নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে নতুনভাবে পার্কটি সাজিয়ে তোলা যাবে বলে মনে করছে ডিএসসিসি।
জানা গেছে, অনুমোদনের আগে ১৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্প জমা দেয় ডিএসসিসি। পরে পার্কের জন্য টিকিট কাউন্টার, শেল্টার শেড, অফিস ভবন, পাবলিক টয়লেট, স্টোররুম, সিকিউরিটি রুম, গ্রাউন্ডফিল্ড ডেভেলপমেন্ট, প্লান্টেশন, বিউটিফিকেশন, স্যানিটারি, গুরুত্বপূর্ণ মুভি থিয়েটার, রাইডসের প্ল্যাটফর্ম, ট্রান্সফর্মার, সাবস্টেশন এবং ওয়াটার সাপ্লাইয়ের কাজ বাদ দেয়া হয় প্রকল্প থেকে। তখন এতে বরাদ্দ রাখা হয় ৭৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। এ কারণে প্রথমে দিকে পরিকল্পনা অনুযায়ী শিশু পার্কের সংস্কার করতে পারেনি ডিএসসিসি। এখন নতুন পরিকল্পনায় সাজছে রাজধানীবাসীর অন্যতম আকর্ষণের এ পার্ক।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, শিশু পার্কটিকে বিশ্বমানের করে সাজাতে চায় করপোরেশন। এতে সব ধরনের রাইড স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে শিশু পার্কের চেহারা পুরোপুরি বদলে যাবে।
জানা যায়, পার্কের মাটির নিচে পার্কিংস্থল নির্মাণ কাজ শুরু করার ফলে বিদ্যমান বিভিন্ন স্থাপনা, রাইড, ড্রেনেজ সিস্টেমসহ বিভিন্ন কিছু অপসারণ ও ভেঙে ফেলায় সেগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। যে কারণে চলমান প্রকল্পে সেই রাইডগুলো অন্তর্ভুক্ত করার জন্য গত বছর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়। বরাদ্দ দেয়া অর্থে পার্কের প্রকল্প পরামর্শকসহ নতুন রাইড সরবরাহ করতে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে সর্বনিম্ন দর পড়ে ৩১০ কোটি ৩ লাখ ৭০ হাজার ৬৭৭ টাকা, যা বরাদ্দ অর্থের কয়েকগুণ বেশি। ফলে এই অর্থ সংশোধিত প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করে নতুনভাবে প্রকল্প নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। প্রকল্পে আরও ১৮টি নতুন রাইড সংযোজনের সিদ্ধান্ত হয়।
এদিকে ১৯টি পার্ক আর ১২টি খেলার মাঠ আধুনিকায়নের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নের শেষ পর্যায়ে রয়েছে ডিএসসিসি।
জানা গেছে, ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন নির্বাচিত হওয়ার পর ১৯টি পার্ক আর ১২টি খেলার মাঠ আধুনিকায়নের জন্য প্রকল্প হাতে নেন। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের ব্যয় প্রথমে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা ধরা হলেও পরে নকশা পরিবর্তনের কারণে ব্যয় দাঁড়ায় এক হাজার ৭০০ কোটি ১৯ লাখ টাকায়। এই বরাদ্দের ৭০ শতাংশ দেয় সরকার, বাকি ৩০ শতাংশ বহন করে ডিএসসিসি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্রে আরও জানা গেছে, ডিএসসিসি এলাকায় মাঠ ও পার্কের উন্নয়নে গ্রহণ করা ‘জল-সবুজে ঢাকা’ প্রকল্পের আওতায় ৩১টি মাঠ ও পার্কের নকশা প্রণয়ন করেন রফিক আযমের নেতৃত্বে ৭০ জন স্থপতি। মাঠগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি ইতোমধ্যে সর্বসাধারণের জন্য খুলেও দেয়া হয়েছে। আরও কয়েকটি মাঠ উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। মেয়র সাঈদ খোকনের মেয়াদকালেই (আগামী মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত) এ প্রকল্পের ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হচ্ছে।
প্রকল্পভুক্ত পার্ক ও মাঠগুলোর মধ্যে রয়েছে মতিঝিলের সিরাজ উদ্দৌলা পার্ক, বংশালের ত্রিকোণাকার পার্ক, কলাবাগান খেলার মাঠ, গোলাপবাগ খেলার মাঠ, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা পার্ক, মালিটোলা পার্ক, সিক্কাটুলী পার্ক, মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন পার্ক, আউটফল স্টাফ কোয়ার্টার শিশুপার্ক, বাসাবো মাঠ, শহীদ আব্দুল আলীম খেলার মাঠ, জোড় পুকুর মাঠ, রসুলবাগ পার্ক, গুলিস্তান পার্ক, নবাবগঞ্জ পার্ক,গজমহল পার্ক, হাজারীবাগ পার্ক, বাংলাদেশ মাঠ, পুরান ঢাকার বাহাদুরশাহ পার্ক,সাদেক হোসেন খোকা খেলার মাঠ, পান্থকুঞ্জ পার্ক, আজিমপুর শিশুপার্ক, শহীদনগর মিনি স্টেডিয়াম, সামসাবাদ খেলার মাঠ, দেলোয়ার হোসেন খেলার মাঠ, বালুরঘাট খেলার মাঠ, ওসমানী উদ্যান বা গোসস্যা নিবারণী পার্ক, বকশীবাজার পার্ক ও বশির উদ্দিন পার্ক।
‘জল-সবুজে ঢাকা’ প্রকল্পের আওতায় পার্ক ও মাঠগুলো বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, আমাদের ‘জল-সবুজে ঢাকা’ প্রকল্পের মাধ্যমে মাঠগুলোর উন্নয়ন করছি। এ প্রকল্পের আওতায় আমরা মাঠ ও পার্কের দৃশ্য বদলে দিয়েছি। আধুনিকায়নের মাধ্যমে এসব পার্ক ও খেলার মাঠগুলো আন্তর্জাতিক মানের করা হচ্ছে। পার্ক-মাঠের নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এরই মধ্যে অনেক মাঠের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় মাঠ বা পার্কগুলোতে যা থাকছে
ডিএসসিসি সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় মাঠ বা পার্কগুলোতে প্রায় একই রকম সুযোগ-সুবিধা থাকছে। এর বাইরে কোনো কোনোটিতে এলইডি লাইটিং, কফি হাউজ, ফুড কোর্ট, কার পার্কিং, জাদুঘর, পাঠাগার, গ্রিন জোন, পাবলিক প্লাজা, লেডিস কর্নার, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, হাতিরঝিলের মতো জলাধারের পাশাপাশি সবুজ বাগান ও বেষ্টনী। গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের ভাস্কর্যও থাকছে। ফলে পরিবার নিয়ে বেড়ানোর জন্য মনোরম জায়গা হয়ে উঠছে একেকটি মাঠ ও পার্ক।
এএস/এইচএ/পিআর