ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

করোনা পরিস্থিতি উন্নয়ন ভাবনায় বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে

সায়েম সাবু | প্রকাশিত: ০৬:০২ পিএম, ০৮ এপ্রিল ২০২০

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ ও উন্নয়ন বিশ্লেষক। পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী প্রধান ও বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের চেয়ারম্যান এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাণিজ্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা।

করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি এবং এর সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে মুখোমুখি হন জাগো নিউজ’র। আলাপচারিতায় করোনার ভয়াবহতা মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। মতামত ব্যক্ত করেন সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণের উপায় নিয়েও। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের শেষটি থাকছে আজ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু

জাগো নিউজ : করোনা নতুন এক বিশ্বকে দেখাচ্ছে, অর্থনীতি, সমাজকে নানা চ্যালেঞ্জে ফেলছে। বাংলাদেশের জন্য কী চ্যালেঞ্জ?

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান : সমাজ, অর্থনীতির জন্য কী চ্যালেঞ্জ তার জন্য আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে। নানা বিষয় সামনে আসছে। আমাদের এখানে উন্নয়ন প্রসঙ্গে যে ধারণা, সেখানে আমূল পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। এই পরিবর্তন ছাড়া কোনো উপায় নেই, তা-ই করোনা দেখিয়ে দিচ্ছে। আমরা জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন নিয়ে ভাবিনি। এখন ভাবতে হচ্ছে যে, জনস্বাস্থ্য যদি ঠিক না থাকে, তাহলে অর্থনীতিও ঠিক থাকে না। করোনাভাইরাস কিন্তু তা-ই বুঝিয়ে দিলো। করোনা থেকে সমাজ ও অর্থনীতিতে মধ্য বা দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলছে। দ্বিতীয়ত, জনস্বার্থের হাত ধরে অর্থনীতির যে সংকট, তা-ও করোনা বুঝিয়ে দিলো।

জাগো নিউজ : এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আপনার পরামর্শ কী?

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান : এমন পরিস্থিতিতে সবাই বিপদগ্রস্ত থাকে। এর মধ্যেও বিভিন্ন শ্রেণী থাকে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিশাল একটি অংশ দিন আনে দিন খায়। এই জনগোষ্ঠীর খাদ্য সংকটকাল যাচ্ছে এখন। এক মাসে এই সংকট দূর হলে ভালো কথা। কিন্তু সংকট কাটাতে বড় ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে। এর বাইরে আরেকটি বড় জনগোষ্ঠী আছে। ক্ষুদ্র এবং মাঝারি উদ্যোক্তা। যেমন, ছোট একটি হোটেল। সেখানে কয়েকজন কর্মচারীও কাজ করতেন। এই হোটেলের মালিক কিন্তু রিকশাওয়ালাদের মতো নন। চাইলেই হাত বাড়াতে পারেন না তারা। আর হাত তারা বাড়িয়েও এই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবেন না। এরকম লাখ লাখ উদ্যোক্তা আছেন। তাদের আয়ের পথ বন্ধ। উৎপাদন নেই। বিক্রি নেই। আয় নেই। এই উদ্যোক্তাদের বেশিরভাগই অনানুষ্ঠানিক। এরাই মূলত বড় ধরনের ধাক্কা খাবেন। কারণ তাদের বেশিরভাগই ব্যাংক সুবিধা পান না।

এ কারণে আমি মনে করি, প্রতিষ্ঠান হিসেবে তারা যেন একেবারে পথে না বসে যান। ধরুন, এক মাস পর করোনা চলে গেল। কিন্তু তারা চাইলেই আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না। কর্মচারীর বেতন না দিলেও ঘরভাড়া হয়তো দিতে হচ্ছে। ঋণ নিয়ে থাকলে সুদ দিতে হচ্ছে। তাদের রক্ষার জন্য প্রণোদনা অবশ্যই দরকার।

jagonews24

জাগো নিউজ : গার্মেন্টে যেমন একটি প্রণোদনা ঘোষণা করেছে সরকার?

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান : হ্যাঁ। অবশ্যই গার্মেন্ট শ্রমিকদের জন্য ভালো একটি ব্যবস্থা এটি। কিন্তু এখানে অবশ্যই মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা জরুরি এই কারণে যে, প্রণোদনাটা আসলে শ্রমিকরা পাচ্ছে কি-না। পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে এমন ধারণা পোষণ করা অমূলক নয়। আমি আবারও বলছি, দুটি শ্রেণীর জন্য বিশেষ সহায়তা খুবই জরুরি। একটি হচ্ছে ছিন্নমূল মানুষ। আরেকটি হচ্ছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা। ছিন্নমূল মানুষেরা কিছু সহায়তা পাচ্ছে সরকার এবং ব্যক্তিপর্যায় থেকে। কিন্তু তা খুবই অপ্রতুল। এই সহায়তা বহুগুণ বাড়াতে হবে। একইভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য একটি আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করাটা জরুরি।

জাগো নিউজ : বিপুল অর্থের দরকার। যোগান আসবে কোথা থেকে?

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান : অনেক প্রকল্প আছে, যেখানে কৃচ্ছ্রসাধন করা সম্ভব। আর এর জন্য বাজেট রিভিউ করা দরকার এবং তা খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে। রফতানি কমে গেছে। রেমিট্যান্স কমে গেছে। এ দুটি খাত সরকারি আয়ের বড় অংশ। তাহলে অবশ্যই বিকল্প ভাবতে হবে। বাজেটের নানা দিক পর্যালোচনা করে এই দুই শ্রেণীর মানুষের জন্য সহায়তা ফান্ড বের করতে হবে। রাষ্ট্রীয় অনেক কেনাকাটা হয়, যা উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত নয়। এগুলো দ্রুত বন্ধ করে দেয়া উচিত। এর জন্য সরকারের আলোচনায় বসা দরকার। যারা অর্থনীতি নিয়ে কাজ করছেন, এসব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, তাদের সঙ্গেও আলোচনা করা যেতে পারে। আলোচনা করলেই বাজেটের পুনর্বিন্যাস করা সম্ভব হবে। শুধু আমলাতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্য দিয়ে করলে ফলপ্রসূ হবে না।

jagonews24

জাগো নিউজ : সরকারের দায়িত্বের কথা বললেন। বেসরকারি সংগঠনের জন্য কী বলবেন? বেসরকারি সংগঠনগুলো কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে?

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান : বেসরকারি সংগঠনগুলো কাজ করতে চায় বলে আমার বিশ্বাস। তবে এক্ষেত্রে সরকারের সিগন্যাল খুবই জরুরি। এখানে সরকারের দুর্বল অবস্থান লক্ষণীয়। মানুষ আসলে বুঝতে পারছে না, সরকার একাই করবে, নাকি বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও পাশে চাইবে। বেসরকারি সংগঠনগুলোকে যদি বিশেষভাবে দায়িত্ব দেয়া হয়, তাহলে অবশ্যই তারা বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারবে। প্রশ্ন হচ্ছে, সে ভূমিকা সরকার চাইবে কি-না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। এটি দূর করা সম্ভব।

জাগো নিউজ : আসলে সরকারের পক্ষ থেকে কী ধরনের সিগন্যাল প্রত্যাশা করছেন?

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান : সরকার ঘোষণা দিক বেসরকারি সংগঠন এই সময়ে মাঠে নামুক। অবশ্যই সরকারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার একটি অর্থ থাকে। কর্মপরিকল্পনা সমন্বয় করেই কাজ করা যাবে।

জাগো নিউজ : সামাজিক ভাবনায় নানা প্রশ্ন সামনে আসছে। করোনা পরিস্থিতিতে সমাজ পরিবর্তনের আমূল কোনো ইঙ্গিত পাচ্ছেন?

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান : করোনা পরিস্থিতি এখনো মোকাবেলার পর্যায়েই আছে। এখনো সমাজ পরিবর্তনের বিশেষ কোনো ইঙ্গিত মিলছে না। করোনা পরিস্থিতি উন্নয়ন ভাবনায় বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে। যেমন, জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে নতুন করে ভাবনার সুযোগ করে দিলো করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা।

এএসএস/এইচএ/এমএস