করোনা মোকাবিলায় অর্থ ব্যয়ের পরিকল্পনায় হ য ব র ল
>> দুই দফায় মোট বরাদ্দ ২৫০ কোটি টাকা
>> ২১ কোটি টাকা ব্যয়ের কোনো পরিকল্পনা নেই
>> বরাদ্দের অধিকাংশ ব্যয়ই পরিকল্পনায় সীমাবদ্ধ
>> প্রকৃত ব্যয় মাত্র ৪৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুকূলে জরুরি ভিত্তিতে দুই দফায় ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু গত ২৫ মার্চ পর্যন্ত বরাদ্দকৃত এ অর্থের সিংহভাগই অব্যয়িত রয়ে গেছে। ২১ কোটি ২৬ লাখ ৮৬ হাজার ৩০০ টাকা ব্যয়ের কোনো পরিকল্পনাই নিতে পারেনি স্বাস্থ্য অধিদফতর। অর্থ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব সুশীল কুমার পাল স্বাক্ষরিত বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় এবং ভবিষ্যৎ ব্যয়ের পরিকল্পনা বিষয়ে একটি চিঠি গত ২৫ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ৪৫ কোটি ৩৯ লাখ ২২ হাজার ৮০০ টাকার ল্যাবরেটরি যন্ত্রপাতি, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই), কিটস ও ওষুধপত্র কেনার জন্য ক্রয়াদেশ দিয়ে পণ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
এছাড়া ৭৭ কোটি ২০ লাখ ১৫ হাজার ৯০০ টাকার ল্যাবরেটরি যন্ত্রপাতি, পিপিই, কিটস ও ওষুধপত্র কেনার জন্য ক্রয়াদেশ প্রক্রিয়াধীন। ১০০ কোটি টাকা ভবিষ্যতে ব্যয় করার জন্য ক্রয় পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। ৬ কোটি ১৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে এমএসআর ও পথ্য খাতে দেয়ার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
এভাবে ২২৮ কোটি ৭৩ লাখ ১৩ হাজার ৭০০ টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনার কথা বলা হলেও বাকি ২১ কোটি ২৬ লাখ ৮৬ হাজার ৩০০ টাকা ব্যয় হয়েছে বা আগামীতে ব্যয় হবে, এ ধরনের কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি ওই চিঠিতে।
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে প্রথমে গত ১১ মার্চ ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এরপর ১৯ মার্চ আরও ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।
এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে জরুরি ভিত্তিতে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হলেও স্বাস্থ্য অধিদফতরের ব্যয় কার্যক্রম হতাশাজনক। অধিকাংশ অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রেই বলা হয়েছে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বা ভবিষ্যতে ব্যয় করা হবে। এছাড়া ২১ কোটি ২৬ লাখ ৮৬ হাজার ৩০০ টাকা ব্যয়ের কোনো পরিকল্পনাই করা হয়নি। এটা কীভাবে সম্ভব?
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি।
একই বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, আপনার হিসাব সব ঠিক আছে। এক্ষেত্রে অর্থ ব্যয় বা পরিকল্পনা গ্রহণের বিষয়গুলো দেখভাল করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তারা যে হিসাব পাঠায় আমরা সে হিসাবটাই অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাই। ২১ কোটি ২৬ লাখ ৮৬ হাজার ৩০০ টাকা পরিকল্পনাহীন হয়ে পড়ে থাকার বিষয়টি নিয়ে আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে অর্থ বিভাগের অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা খাত থেকে। অর্থ বিভাগের বরাদ্দপত্রে বলা হয়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য এ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অর্থ বিভাগের অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা খাত থেকে চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অনুকূলে সচিবালয় অংশে সাধারণ থোক বরাদ্দ খাতে মোট ২৫০ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুকূলে এ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়।
বরাদ্দকৃত এ অর্থ ব্যয়ে কিছু শর্তও জুড়ে দেয়া হয়। এগুলো হচ্ছে- অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট-২০০৬ এবং পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস-২০০৮ অনুসরণসহ যাবতীয় সরকারি আর্থিক বিধি-বিধান যথাযথভাবে পালন করতে হবে। এ অর্থ প্রস্তাবিত খাত (করোনাভাইরাস বা ‘কোভিড-১৯’) ছাড়া অন্য কোনো খাতে ব্যয় করা যাবে না।
বরাদ্দকৃত অর্থ চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের সংশ্লিষ্ট খাতে সমন্বয় করতে হবে। এ খাতে অর্থ অন্য খাতে পুনঃউপযোজন বা স্থানান্তর করা যাবে না। অব্যয়িত অর্থ (যদি থাকে) এ বছরের ৩০ জুনের মধ্যে ফেরত দিতে হবে। এছাড়া অর্থ ব্যয়ের ১০ দিনের মধ্যে কোন কোন খাতে কত ব্যয় হয়েছে তার বিস্তারিত অর্থ বিভাগকে জানাতে হবে।
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় অর্থছাড়ের বিষয়ে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘করোনাভাইরাস চিকিৎসা কিংবা নিয়ন্ত্রণে যত টাকা প্রয়োজন হবে তা দিতে প্রস্তুত সরকার। প্রয়োজনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যদি চীনের মতো বিশেষ হাসপাতাল তৈরির উদ্যোগ নেয়, তাতেও অর্থায়ন করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের আর্থিক সক্ষমতা রয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যদি যন্ত্রপাতি বা লজিস্টিক সাপোর্ট দরকার হয়, সেখানে চীন যেভাবে হাসপাতাল করেছে, সে ধরনের কোনো হাসপাতাল (যদি) করতে হয়, কম সময়ের মাঝে, স্পেসিফিক পারপাস (বিশেষ উদ্দেশে) বিল্ড হাসপাতাল, এগুলো করার জন্য প্রধানমন্ত্রী কখনো মানা করবেন না। আমরাও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে সাহায্য করব অর্থায়ন করে, যাতে তাদের কাজগুলো সুন্দরভাবে এবং প্রয়োজনীয়তার তুলনায় কোনোভাবে পিছিয়ে না থেকে কাজগুলো করতে পারে।’
এমইউএইচ/এইচএ/এমকেএইচ