ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

চট্টগ্রামে সন্ত্রাসী-জঙ্গিদের হাতে একে-২২ : চিন্তিত পুলিশ

প্রকাশিত: ০৬:৫০ এএম, ১২ অক্টোবর ২০১৫

চট্টগ্রামে সন্ত্রাসী জঙ্গিদের হাতে একে-২২ রাইফেল ভাবিয়ে তুলেছে পুলিশ প্রশাসনকে। চট্টগ্রামের জঙ্গি, সন্ত্রাসী আর ছিনতাইকারীরা এখন সহজভাবে বহনীয় অত্যাধুনিক একে ২২ রাইফেল দিয়েই নানা অঘটন ঘটাচ্ছে। এছাড়া লাইসেন্স বিহীন স্বয়ংক্রিয় নাইন এমএম পিস্তল নিয়ে নতুন করে ভাবছে পুলিশ।

গত ৮ মাসে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে এ ধরনের অন্তত ১৩ টি রাইফেল উদ্ধার করেছে। পুলিশ বলছে, সন্ত্রাসীরা সাধারণত যেসব অস্ত্র ব্যবহার করে থাকে সেগুলোর চেয়ে অনেক বেশি অত্যাধুনিক ও মারণ ক্ষমতা সম্পন্ন অস্ত্র একে-২২ রাইফেল।

এছাড়া রোববার নগরীর হেমসেন লেইনের একটি ফুলের দোকান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে একটি অত্যাধুনিক নাইন এমএম পিস্তল। উদ্ধারকৃত অস্ত্রটি খুবই শক্তিশালী বলে জানান, কোতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ জসিম উদ্দিন। এ ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র সচরাচর আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারাই ব্যবহার করতে পারেন।

সাম্প্রতিক সময়ে সন্ত্রাসীদের এমন অস্ত্র ব্যবহার ভাবিয়ে তুলেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। এ ধরনের অস্ত্র যেন চট্টগ্রামে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সতর্ক রয়েছে পুলিশ প্রশাসন।

আন্ডারওয়ার্ল্ডে বহুল ব্যবহারের কারণে চট্টগ্রামে একসময় আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছিল একে-৪৭ ও এর চায়নিজ সংস্করণ একে-৫৬ রাইফেল, একে-১৬ ও নাইন শুটারগান। গত কয়েক বছরে র্যাবের ষাঁড়াশি অভিযানে সন্ত্রাসীদের হাতে থাকা অধিকাংশ একে-৪৭ রাইফেল উদ্ধার হয়ে গেলে অনেকটাই স্বস্তি ফিরে এসেছিল জনমনে।

কিন্তু বর্তমানে একে-২২ নামক রাইফেলটি একে ৪৭ এর স্থান দখল করে নিয়ে আন্ডারওয়ার্ল্ডে প্রবেশ করায় এ নিয়ে নতুন করে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। আকারে ছোট এ অস্ত্রটি সহজেই বহন করতে পারে বলে এটি বহনের সময় খুব সহজে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দেয়া সম্ভব।

জানা গেছে, একে-৪৭ রাইফেলের পরবর্তী সংস্করণ একে-২২ রাইফেল। দু’টো রাইফেল দেখতে অনেকটা একইরকম হলেও পার্থক্য হল একে-২২ আকারে ছোট। আর এই গুণের কারণেই সন্ত্রাসীদের কাছে কদর বেড়েছে অস্ত্রটির। আকারে ছোট হওয়ায় এটি বহন করা সহজ, ব্যবহারও সুবিধাজনক।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে নির্বিঘ্নে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নেয়া যায় এটি। অস্ত্রটির প্রস্তুতকারক দেশ রুমানিয়া হলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিরাপত্তা বাহিনী এটাকে প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া যুদ্ধ ক্ষেত্রে এর ব্যবহারেরও নজির রয়েছে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন,  ‘একে-২২ এর মতো অত্যাধুনিত অস্ত্র যাতে আর চট্টগ্রামে ঢুকতে না পারে সেজন্য আমরা তৎপর রয়েছি। গোয়েন্দা পুলিশ ও চেকপোস্টে অবস্থানরত পুলিশরা কড়া নজরদারি রেখেছেন। পাশাপাশি যারা এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করছে তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।’

চট্টগ্রামে কয়েকটি একে-২২ রাইফেল র‌্যাব আরো আগে উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও পুলিশ প্রথম এ অস্ত্রের দেখা পায় ২০১৩ সালের ১০ জুলাই শাহ আমানত সেতুর মইজ্জারটেক থেকে একটি পরিত্যক্ত একে-২২ রাইফেল উদ্ধারের মধ্য দিয়ে।
এর পর চট্টগ্রামে আরো কয়েকটি স্থানে এ অস্ত্রটি পাওয়া যায়। জঙ্গি আস্তানায় প্রশিক্ষাণার্থীদের কাছে, সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের গুদামে, কয়েকদিন আগে সদরঘাটে দুই ছিনতাইকারীর কাছ থেকেও উদ্ধার করা হয় দুটি একে-২২।

চলতি বছরে ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গত ৮ মাসে চট্টগ্রাম থেকে মোট ১৩ টি একে-২২ রাইফেল উদ্ধার করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যার মধ্যে র্যাব ৯টি, পুলিশ ৩টি ও সিআইডি ১টি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

র‌্যাব চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক এএসপি শাহেদা সুলতানা জানান, গত ২১ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের বাঁশখালীর লটমনি পাহাড়ে জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রের সাথে ৩ টি একে-২২ রাইফেল, ১৩ এপ্রিল পাঁচলাইশ থানার কসমোপলিটন আবাসিক এলাকার গ্রীন বাংলা জাহানারা এপার্টমেন্টের ৭ তলার একটি ফ্ল্যাটে জঙ্গি আস্তানা থেকে ৫টি একে-২২ রাইফেল এবং গত ২৮ সেপ্টেম্বর সন্দ্বীপের হারামিয়া এলাকার সন্ত্রাসী শাহেদ উল্যাহর কাছ থেকে ১টিসহ মোট ৯টি একে ২২ রাইফেল উদ্ধার করা হয়েছে।

এদিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ গত ১৯ মার্চ চট্টগ্রাম কলেজে অভিযান চালিয়ে স্টাফ কোয়ার্টারের পেছনে একটি গর্ত থেকে একটি একে-২২ রাইফেল উদ্ধার করে। গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে সদরঘাট থানা এলাকায় ছিনতাইয়ের পর ঘটনাস্থল থেকে লুণ্ঠিত টাকার সাথে ২টি একে-২২ রাইফেল উদ্ধার করে পুলিশ।

এছাড়া ১৯ এপ্রিল সাতকানিয়া উপজেলার এওচিয়া এলাকার মাহমুদুল হক মাহফুজ (৪২) এর কাছ থেকে একটি একে-২২ রাইফেল উদ্ধার করে সিআইডি। এসব অস্ত্র উদ্ধারের পর নড়েচড়ে বসেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কিভাবে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের হাতে বিদেশি এই অস্ত্রটি আসছে তা খতিয়ে দেখছেন তারা।

সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। ছিনতাইকারীদের হাতে মারণাস্ত্র একে ২২ পাওয়াটা কিছুটা অস্বাভাবিকই। এর আগে নিকট অতীতে এমনটি দেখা যায় নি।’

তিনি জানান, একে-২২ রাইফেল মূলত একটি সেমি অটোমেটিক রাইফেল। এটি একে-৪৭ এর একটি আধুনিক সংস্করণ। এটি পয়েন্ট ২২ ক্যালিবারের রাইফেল। এটি একটি ভয়ঙ্কর অস্ত্র যা জননিরাপত্তায় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের হাতে যেন এটি আসতে না পারে সেজন্য আমরা তৎপর রয়েছি।

তিনি বলেন, ‘ছিনতাইকারী ও সন্ত্রাসীদের কাছে একে ২২ কোথা থেকে আসলো, তারা নিজেরা জঙ্গিগোষ্ঠীর সাথে জড়িত কিনা বা তারা জঙ্গিদের কাছ থেকে এসব অস্ত্র ভাড়া নিচ্ছে নাকি নিজেরা আমদানি করছে এ বিষয়গুলো আমরা তদন্ত করে দেখবো।’

এসএইচএস/এমএস