ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

ঝলমলে এলইডি বিলবোর্ডে নান্দনিক রূপে ঢাকা

আবু সালেহ সায়াদাত | প্রকাশিত: ০৮:১৬ পিএম, ২৪ মার্চ ২০২০

নাগরিক সেবা ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধার দিক দিয়ে রাজধানীকে আধুনিক নগরী রূপে গড়ে তোলার কাজ করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এরই অংশ হিসেবে নগরীর সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য সময়োপযোগী পরিকল্পনা থেকে এলইডি বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে ডিএসসিসি এলাকায়।

এ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে মোহাম্মদ সাঈদ খোকন নির্বাচিত হওয়ার পর নগরীর সড়কে লোহা ও স্টিলের কাঠামোতে তৈরি করা ঝুঁকিপূর্ণ বিলবোর্ড অপসারণ করে ডিজিটাল এলইডি বিলবোর্ড স্থাপনের ঘোষণা দেন। তার ঘোষণা অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণে বিভিন্ন আকারের ৭৩০টি এলইডি বিলবোর্ড ইতোমধ্যে স্থাপন করা হয়েছে।

এসব ঝলমলে এলইডি বিলবোর্ড স্থাপনের ফলে বিশ্বের উন্নত শহরের মতো নান্দনিক রূপ পেয়েছে নগরী। সেই সঙ্গে এলইডি বিলবোর্ডে বিজ্ঞাপনের ফলে বেড়েছে করপোরেশনের রাজস্বও।

ডিএসসিসির রাজস্ব বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ডিএসসিসিতে এমন ৭৩০টি এলইডি বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। নগরীর গ্রিন রোডে ২৮টি, বাংলামটোর-কাকরাইল সড়কে ৩০টি, কাকরাইল-শান্তিনগর সড়কে ৩০টি, মালিবাগ রেলগেট থেকে খিলগাঁও সড়কে ৩০টি, বিজয়নগর-পল্টন সড়কে ২৮টি, খিলগাঁও তালতলা-খিলগাঁও রেলগেট সড়কে ২৮টি, সিটি আই হসপিটাল সড়কে ৪৪টি, পান্থপথ-ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে ২৪টি। এছাড়া শাহবাগ-মৎস্য ভবন সড়কে রয়েছে ৮টি বিলবোর্ড।

jagonews24

পাশাপাশি এগুলোর চেয়ে বড় আয়তনের ৪৫০টি বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটিভুক্ত অপর সড়কগুলোতে। এগুলোর মধ্যে মৎস্য ভবন থেকে কদম ফোয়ারা পর্যন্ত সড়কে ১৮টি, কাকরাইল থেকে ফকিরাপুল সার্কেলে ১৫টি, ফকিরাপুল সার্কেল থেকে দৈনিক বাংলা মোড় হয়ে দিলকুশা সড়কে ৩১টি, জিপিও থেকে বঙ্গভবন সড়কে ৪৫টি, শাপলা চত্বর থেকে হাটখোলা সড়কে ১৭টি, সুরিটোলা থেকে তাঁতিবাজার সড়কে ১৮টি, শেরাটন হোটেল থেকে মিন্টো রোডে ৩৭টি, বেইলি রোডে ১১টি, সিটি কলেজ থেকে বিজিবি গেট হয়ে সাত মসজিদ রোডে ৪৫টি, সিটি কলেজ থেকে মিরপুর রোডের রাপা প্লাজা পর্যন্ত সড়কে ৫০টি, ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে ৯টি, শাহবাগ থেকে সায়েন্সল্যাব সড়কে ৪৫টি, শেরাটন থেকে শাহবাগ হয়ে মৎস্য ভবন দিয়ে কাকরাইল সড়কে ২৮টি, পান্থকুঞ্জ থেকে বাংলামোটর সড়কে ২২টি, শিক্ষা ভবন থেকে জিরো পয়েন্ট সড়কে ২২টি, দৈনিক বাংলা মোড় থেকে শাপলা চত্বর সড়কে ২২টি এবং জিরো পয়েন্ট দিয়ে গোলাপ শাহ মাজার সড়কে ১৫টি এলইডি বিলবোর্ড রয়েছে।

ডিএসসিসিতে সবচেয়ে বড় এলইডি বিলবোর্ডটি স্থাপিত হয়েছে শাহবাগ মোড়ে। এছাড়া ফকিরাপুল, পুরানা পল্টন মোড়, বাটা সিগন্যাল, কমলাপুর, সদরঘাট ও শান্তিনগর মোড়ে শাহবাগের বিলবোর্ডের চেয়ে কিছুটা ছোট ৬টি এলইডি বিলবোর্ড রয়েছে। এছাড়া কদম ফোয়ারা, শেরাটন, কাকরাইল, মৎস্য ভবন, শিক্ষা ভবন, বঙ্গবাজার, জিরো পয়েন্ট, মিন্টো রোড, দৈনিক বাংলা, নিউমার্কেট, গোলাপ শাহ মাজার, ল্যাবএইড ও বাটা সিগন্যালে আরও ১৩টি বিলবোর্ড রয়েছে। পান্থকুঞ্জে লাগানো হয়েছে ৪৫০ বর্গফুটের এলইডি বিলবোর্ড।

সন্ধ্যার পর মৎস্য ভবন থেকে পায়ে হেঁটে শাহবাগ যাচ্ছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী সাইদুর রহমান। আলাপকালে তিনি বলেন, এসব ডিজিটাল বিলবোর্ডের কারণে নান্দনিক রূপ পেয়েছে শহরটা। যা দেখতে উন্নত বিশ্বের শহরের মত লাগে। এলইডি বাতির পাশাপাশি এলইডি বিলবোর্ডের কারণে আলোকিত হয়েছে শহর। ফলে আগে যেমন ঘুটঘুটে অন্ধকার থাকতো এখন সেটি পরিবর্তন হয়ে নতুন রূপ পেয়েছে। পাশাপাশি ছিনতাই, মাদকাসক্তদের আনাগোনা কমে গেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকাজুড়েই এমন এলইডি বিলবোর্ড স্থাপন হয়েছে, ফলে দক্ষিণ সিটি এলাকার সৌন্দর্য অনেক বেড়েছে।

jagonews24

জানা গেছে, ২০১৫ সালে ডিএসসিসি মেয়র হিসেবে সাঈদ খোকন নির্বাচিত হওয়ার পর দুই সিটির মেয়র (ডিএনসিসির তৎকালীন মেয়র ছিলেন প্রয়াত আনিসুল হক) মিলে ঢাকাকে অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ বিলবোর্ডমুক্ত করার ঘোষণা দেন। এরপর সেগুলো অপসারণের করে নতুন ডিজাইনে নগরীর ফুটপাত ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, মোড় এবং স্থানগুলোতে ডিজিটাল এলইডি বিলবোর্ড লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনভুক্ত এলাকায় ৭৩০টি এলইডি বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে।

ডিএসসিসি র রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, আগে লোহা বা স্টিলের কাঠামোতে বানানো প্রথাগত বিলবোর্ডে একটিমাত্র পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচারিত হতো। তবে ডিজিটাল সুবিধা সম্বলিত এলইডি বিলবোর্ডে সারাক্ষণই বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করা যায়। ফলে শহরের সৌন্দর্য যেমন বেড়েছে সেই সঙ্গে রাজস্বও বেড়েছে। এছাড়া আগের প্রথাগত বিলবোর্ড নাগরিক নিরাপত্তার জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। বিভিন্ন সময়ে ঝড় বা বিভিন্ন কারণে আগের বিলবোর্ডগুলো ভেঙে পড়ে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।

তারা আরও বলেন, ডিজিটাল এসব বিলবোর্ডে বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ, সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন, বিভিন্ন সেবা সংস্থার গণপ্রচারণামূলক বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়। এর মধ্যে বিভিন্ন কোম্পানির পণ্যের বিজ্ঞাপন থেকে রাজস্ব পায় ডিএসসিসি। রাতের শহরকে আলোকিত করতেও সহায়তা করছে বিলবোর্ডগুলো।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন জাগো নিউজকে বলেন, যখন মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলাম তখন এই শহরে ঝুঁকিপূর্ণ বিলবোর্ড, ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুনে ভরে ছিল। শহরের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছিল। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ বিলবোর্ডের কারণে পথচারীদের হতাহতের আশঙ্কাও থাকতো। তাই দায়িত্ব নেয়ার পর প্রায় দুই হাজারের বেশি বিলবোর্ড, ৩০ হাজার ব্যানার ও ফেস্টুন অপসারণ করেছি।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশকে ডিজিটাল করার ঘোষণা দিয়েছেন। সেই ঘোষণা অনুযায়ী আমরাও ঝুঁকিপূর্ণ বিলবোর্ডগুলো অপসারণ করে, ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন করেছি বিলবোর্ডগুলো। আর এসব বিলবোর্ডে সবসময় জনসচেতনতামূলক বার্তা প্রচারের পাশাপাশি বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনও প্রচারিত হচ্ছে। যে কারণে নগরীর সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি করপোরেশনের রাজস্বও বাড়ছে।

এএস/এইচএ/এমএস