ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

করোনা আমাদের অর্থনীতির জন্য হতাশার ইঙ্গিত

সায়েম সাবু | প্রকাশিত: ১০:০৩ পিএম, ১৮ মার্চ ২০২০

ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা। অধ্যাপনা করছেন বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে। করোনাভাইরাসের অর্থনৈতিক প্রভাব এবং বাংলাদেশ প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেন জাগো নিউজ-এর সঙ্গে। করোনার কারণে অর্থনীতির ওপর ধাক্কা লাগতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন। বিশেষ করে রেমিট্যান্স ও রফতানি ক্ষেত্রে প্রভাব পড়তে পারে বলে মত দেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু

জাগো নিউজ : করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত বিশ্ব। ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোও প্রায় বিচ্ছিন্ন। আক্রান্ত বাংলাদেশও। এ পরিস্থিতি অর্থনীতির ওপর কী প্রভাব ফেলছে?

মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম : আসলে এমন একটি পরিস্থিতি কোনো সূচক বা পরিসংখ্যানগত দিক দিয়ে বিশ্লেষণ করার উপায় নেই। সুনির্দিষ্ট কোনো মাপকাঠি দিয়েও বিশেষ এ পরিস্থিতির প্রভাব নিরূপণ করার সুযোগ নেই। ঘটনা কোন দিকে যাচ্ছে, কত সময় নিচ্ছে এবং ভয়াবহতা কী, তা কেউই বলতে পারবে না। এ কারণে অনুমানের ওপর ভিত্তি করে এমন পরিস্থিতিতে কথা বলতে হয়। ঠিক অর্থনীতির প্রভাব নিয়েও এভাবেই বিশ্লেষণ করতে হয়।

করোনাভাইরাস বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর ইতোমধ্যে প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির অন্যান্য সূচক এমনিতেই নিম্নমুখি। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ছাড়া অন্যান্য সূচক তেমন উজ্জ্বল ছিল না। রেমিট্যান্সটাই ভালো অবস্থানে ছিল।

কিন্তু করোনাভাইরাস রেমিট্যান্সের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে। মধ্য প্রাচ্যের অনেক দেশ করোনায় আক্রান্ত। আমাদের প্রবাসী শ্রমিকরা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেই বেশি শ্রম দিয়ে আসছে। এসব দেশে নতুন করে শ্রমিক পাঠানো আপাতত সম্ভব হবে না। প্রবাসী শ্রমিকরাও ভালো থাকার কথা নেই এমন পরিস্থিতিতে। এ কারণেই করোনা আমাদের অর্থনীতির জন্য হতাশার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

জাগো নিউজ : এরপর কোন বিষয়ে প্রভাব পড়বে?

মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম : করোনাভাইরাসে বৈদেশিক বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক বিষয়টি তো ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হলো এ সময়ে। আমাদের সামগ্রিক আমদানির প্রায় ২৬ ভাগ আসে চীন থেকে। আবার আমাদের রফতানি আয়ের অন্যতম উৎস তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য কাপড়, সুতা তথা কাঁচামালের শতকরা ৬৬ ভাগ আসে চীন থেকে। তার মানে, এখানেও আমদানি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পোশাক শিল্পের ওপর প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলবে।

jagonews24

আবার যেসব দেশে আমরা তৈরি পোশাক রফতানি করি সেসব দেশও করোনায় আক্রান্ত। ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি, ইংল্যান্ড ও ইউরোপের উল্লেখযোগ্য দেশ যেখানে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের বড় বাজার রয়েছে। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রও। এ পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই রফতানির হার স্বাভাবিক থাকবে না।

জাগো নিউজ : রেমিট্যান্স ও রফতানি প্রবৃদ্ধির ওপরও সরাসরি প্রভাব ফেলবে?

মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম : এবার প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। কিন্তু করোনা প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা আটকে দেবে। অন্তত যে প্রবৃদ্ধি আশা করা হয়েছে, তা পূরণ সম্ভব হবে না।

জাগো নিউজ : বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে চীন, জাপানের মতো দেশগুলো সম্পৃক্ত। প্রায় প্রতিটি বড় প্রকল্পে বিদেশি কোম্পানি কাজ করছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে কী চ্যালেঞ্জে পড়তে হচ্ছে?

মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম : চীন বাংলাদেশের অবকাঠামো নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। বাংলাদেশে চলমান বড় প্রকল্পের প্রায় প্রতিটিতে চীনের জনবল রয়েছে।

চীনের জনবল বাংলাদেশে আসতে পারছে না করোনাভাইরাসের প্রভাবে। আবার অনেকে যেতেও পারছে না। সঙ্গত কারণে বড় প্রকল্পগুলোয় এক ধরনের প্রভাব পড়বেই।

jagonews24

বাংলাদেশে কোনো প্রকল্পই নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন হয় না। সব প্রকল্পই বর্ধিত সময়ের কারণে ব্যয় বেড়ে যায়। করোনাভাইরাসের প্রভাব যদি দীর্ঘমেয়াদি হয়, তাহলে অবশ্যই প্রকল্পগুলোর সময় ও ব্যয় বেড়ে যাবে। আর যদি দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিশ্বে এক ধরনের স্থিতিশীলতা আসে, তাহলে খুব বড় ধরনের প্রভাব পড়বে না।

জাগো নিউজ : আপনি রেমিট্যান্সের কথা বলছিলেন। রেমিট্যান্স কমলে সাধারণ মানুষের ওপর কোন ধরনের প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করেন?

মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম : আপনাকে দেখতে হবে রেমিট্যান্স-যোদ্ধা আসলে কারা। গ্রামের বা শহরের প্রভাবশালীরা দেশের বাইরে গিয়ে শ্রম দিয়ে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন না। উচ্চশিক্ষিত বা ধনী পরিবারের যারা বাইরে আছেন, তারা দেশে খুব বেশি রেমিট্যান্স পাঠায় না। কারণ দেশে তাদের পাঠানো টাকার খুব দরকার হয় না।

টাকা পাঠায় একেবারে গরিব, সাধারণ ও নিম্ন আয়ের মানুষ, যারা দেশের বাইরে গিয়ে শ্রম দিচ্ছেন। তাদের কারণেই রেমিট্যান্স বাড়ছে। আর বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে এ রেমিট্যান্সই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। করোনার কারণে রেমিট্যান্স কমে গেলে দেশের সার্বিক অর্থনীতির ওপর যেমন প্রভাব পড়বে, তেমনি গ্রামের সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বেশি। কারণ যারা দেশের বাইরে গিয়ে টাকা পাঠাচ্ছেন, তারা একজন হয়ত একটি পরিবারের অবলম্বন। আবার অনেকে ঋণ করে দেশের বাইরে গেছেন। তারা শ্রম দিতে না পারলে গোটা পরিবারকে বিপদে পড়তে হবে।

জাগো নিউজ : মূল্যস্ফীতি?

মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম : বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় এমনিতেই বেশি। মূল্যস্ফীতি বাড়া ও কমা নির্ভর করে সাধারণত খাদ্যদ্রব্যের মূল্যের ওপর। আমাদের খাদ্যদ্রব্যের আমদানির হার কম। সুতরাং করোনার কারণে মূল্যস্ফীতি রাতারাতি পরিবর্তন হবে, তা মনে করছি না।

তবে বিশ্ববাজারে চালের দাম বাড়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামে রফতানি কমছে। খাদ্যদ্রব্যে বিশ্ববাজার অস্থির হলে অন্যান্য বিষয়েও এর প্রভাব পড়বে।

জাগো নিউজ : পাশের দেশ ভারতের বর্ডার (সীমান্ত) বন্ধ। তাদের সঙ্গে বাণিজ্য সবচেয়ে বেশি। চীনের মতো পরিস্থিতি যদি ভারতে হয় তাহলে বাংলাদেশে কী ঘটবে?

মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম : ইতোমধ্যে নানা প্রভাব তো পড়ছে। মানুষ যেতে পারছে না। আসতে পারছে না। আমদানি-রফতানি বন্ধ হয়নি কিন্তু পরিস্থিতি তো স্বাভাবিক নয়।

jagonews24

ভারতে আমাদের রফতানি কম। কিন্তু প্রচুর আমদানি করতে হয়। খাদ্যদ্রব্যও আমদানি করতে হয়। আমরা পেঁয়াজের বাজার তো দেখলাম। সুতরাং পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হলে আমাদের অর্থনীতিও স্বাভাবিক থাকবে না।

জাগো নিউজ : সম্ভাব্য অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে আপনার আগাম কোনো পরামর্শ…

মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম : মহামারি বা দুর্যোগ পরিস্থিতি নিয়ে আগাম কোনো মন্তব্য করার উপায় থাকে না। কারণ ক্ষতি বা প্রভাবটা আসলে কী তার ওপরই আলোচনা করতে হয়। জরুরি অবস্থায় জরুরি সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কিন্তু আমরা তো স্বাভাবিক অবস্থাতেই উন্নয়ন, অর্থনীতি নিয়ে নানা অসঙ্গতি রেখে সিদ্ধান্ত নেই। সুতরাং বাংলাদেশ সরকার কীভাবে নিচ্ছে এবং মোকাবিলা করার সক্ষমতার ওপরই অর্থনীতির ধাক্কা সামলোর বিষয়টি নির্ভর করছে।

এএসএস/এমএআর/এমএস