ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

ছাত্রলীগে পদ আছে দায়িত্ব নেই, পূরণ হচ্ছে না শূন্যপদও

আল সাদী ভূঁইয়া | প্রকাশিত: ০২:৪৭ পিএম, ১০ মার্চ ২০২০

পদ দেয়া হয়েছে ১০ মাস আগে। কিন্তু এখনো বুঝিয়ে দেয়া হয়নি দায়িত্ব। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পাওয়া এমন নেতারা তাই ক্ষুব্ধ শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর। অন্যদিকে বিভিন্ন সমালোচনার মুখে বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে যেসব পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে, সেসব পদে দীর্ঘদিনেও কোনো পদায়ন না হওয়ায় ক্রুদ্ধ বঞ্চিতরা। পদপ্রাপ্ত এবং পদবঞ্চিতদের এমনই ক্ষোভের মুখে আছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক। তাদের আরও বিপাকে পড়তে হচ্ছে কমিটি বিলুপ্ত ও নতুন করে ঘোষণা নিয়েও।

ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনটির কয়েকজন পদপ্রাপ্ত ও পদবঞ্চিত নেতার সঙ্গে কথা বলে এমনটি জানা গেছে।

দুর্নীতি ও নৈতিক স্খলনের দায়ে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় যথাক্রমে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে। পরে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব দেয়া হয় যথাক্রমে সহ-সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে। দায়িত্ব পাওয়ার পর কয়েকদিন সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রমে বেশ সক্রিয় হন দুই নেতা। কিন্তু ক’দিন পরেই তারা পদপ্রাপ্ত ও পদবঞ্চিতদের নানা সমালোচনায় বেকায়দায় পড়েন।

জয় ও লেখক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আসীন হলে সারাদেশে ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়। শোভন-রাব্বানীর সময়ে কমিটি গঠনের জের ধরে সৃষ্ট এসব বিতর্কের একটিরও ইতি টানতে পারেননি জয়-লেখক। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিতর্ক যেন আরও উসকে উঠেছে।

পদপ্রাপ্ত কয়েকজন নেতা জানান, গত বছরের ১৩ মে (শোভন-রাব্বানীর সমেয়) ঘোষিত ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে যারা পদ পেয়েছেন, তাদের কাউকেই সংগঠনের পক্ষ থেকে কোনো চিঠি দেয়া হয়নি। যার ফলে পদপ্রাপ্ত কোনো নেতা ছাত্রলীগের দায়িত্ব বুঝে পাননি। মাঝেমধ্যে মধুর ক্যান্টিনে আসা এবং কতিপয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ ছাড়া অন্য কিছু করার সুযোগ পাচ্ছে না তারা। সাধারণত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিভিন্ন অঞ্চল ঠিক করে দেয়া হলে তারা সেসব অঞ্চল পর্যবেক্ষণ করে কেন্দ্রের সাথে সমন্বয় করে কাজ করে থাকেন। কিন্তু কোনো দায়িত্ব বুঝে না পাওয়ায় তারা পদসর্বস্ব হয়েই থাকছেন। বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছাত্রলীগের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে’ পূর্ণাঙ্গ কমিটির নেতাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার কথা বললেও তা পারেননি।

এসব বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান আল ইমরান জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের দায়িত্ব পাওয়ার প্রায় এক বছর হয়ে গেছে। কিন্তু দায়িত্ব দেবে দেবে করে এখনো দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়নি। আমরা আশা করব ১৭ মার্চের আগেই আমাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেবে। দায়িত্ব দিলে সারাদেশে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক যে অচলাবস্থা তার সমাধান করতে পারব। বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে গড়া ছাত্রলীগের সোনালী ইতিহাস আমরা মুজিববর্ষের মধ্যেই ফিরিয়ে আনতে পারব।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য জাগো নিউজকে বলেন, দায়িত্ব বণ্টন নিয়ে আমরা মিটিং করেছি। সবকিছু গুছিয়ে ফেলা হয়েছে। আগামী দুয়েকদিনের মধ্যেই কমিটির সবাই দায়িত্ব বুঝে পাবেন।

এদিকে গত ১৩ মে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষিত হওয়ার পর শতাধিক পদে বিতর্কিতদের রাখা হয়েছে বলে এর প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করেন বঞ্চিতরা। শোভন-রাব্বানী অব্যাহতি পেলেও আন্দোলন চলতে থাকলে নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৩২ জনকে 'বিতর্কিত' চিহ্নিত করে গত ডিসেম্বরে তাদের অব্যাহতি দেন। কিন্তু তাদের বাদ দেয়া নিয়েও সৃষ্টি হয় বিতর্ক। কয়েকজন নেতাকে কোনো ধরনের কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ ছাড়াই অব্যাহতি দেয়া হয় বলে অভিযোগও ওঠে।

যদিও সেই পদগুলো শূন্য হওয়ার তিন মাস পেরোলেও এখনো কাউকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ পদবঞ্চিতরা। তাদের দাবি, দ্রুতই এসব পদে যোগ্য এবং সক্রিয়দের মধ্য থেকে পদায়ন করা হোক।

জানা গেছে, ছাত্রলীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ আর সাড়ে চার মাস রয়েছে। এসময়ের মধ্যে কখন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে শূন্য পদ পূরণ করা হবে সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।

পদপ্রাপ্ত এবং পদবঞ্চিতদের এসব অভিযোগের পাশাপাশি জয়-লেখককে কথা শুনতে হচ্ছে তাদের কার্যক্রম নিয়েও। বিশেষ করে কমিটি বিলুপ্ত বা নতুন করে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে তারা ‘প্রভাব’র উর্ধ্বে উঠতে পারছেন না বলেও অভিযোগ শোনা যাচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের একাধিক নেতা বলেন, প্রথম দিকে খানিকটা সক্রিয় থাকার চেষ্টা করলেও বর্তমানে জয় ও লেখক হাঁটছেন শোভন-রাব্বানীর পথেই। অপসারিত দুই নেতার মতো তারাও ছাত্রলীগের কমিটি দেয়ার ক্ষেত্রে মন্ত্রী-এমপিদের নির্দেশনার বাইরে যেতে পারছেন না। এমনকি বর্তমান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিদ্যমান সংকটও কাটিয়ে উঠতে পারছেন না তারা।

কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন নেতা জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক তাদের ইচ্ছামত ছাত্রলীগ চালাচ্ছেন। গঠনতন্ত্রে বিভিন্ন বিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা থাকলেও তারা দুজনেই নিচ্ছেন সব সিদ্ধান্ত। কয়েকটি জেলা কমিটি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ঘোষণা করেছেন। বিজ্ঞপ্তিতে ‘কেন্দ্রীয় কমিটির জরুরি মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক’ বলা হলেও কেন্দ্রীয় কোনো নেতার সাথে কোনো মিটিং তারা করেননি। এমনকি সংশ্লিষ্ট জেলার কেন্দ্রীয় কোনো নেতাকেও বিষয়টি জানানো হয়নি।

এসব বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য জাগো নিউজকে বলেন, আমরা এখন কেন্দ্রীয় কমিটি নিয়ে একটু কাজ করছি। এটা করার পরই আমরা শূন্য পদে পদায়ন করব। মার্চ মাস শেষে শূন্য হওয়া বাকি ৩২ পদ পূর্ণ করা হবে।
পড়ুন: বাংলাদেশ ছাত্রলীগের আরো খবর। 

এইচএ/এমএস