ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

মধ্যম সারির রাজাকারের বিচার চলছে ট্রাইব্যুনালে

প্রকাশিত: ১০:৫৪ এএম, ০৯ অক্টোবর ২০১৫

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালীন সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। একীভূত ট্রাইব্যুনালে প্রতিদিন নতুন নতুন অভিযোগ এবং মামলা অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। ট্রাইব্যুনালের এই পর্যায়ে মধ্যম সারির রাজাকার ও জেলা-উপজেলায় বিভিন্ন অপরাধের নেতৃত্বদানকারী রাজাকারদের বিচার কাজ শুরু হয়েছে।
 
এরই অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে সরকার এবং বিরোধী দলে থাকা জাতীয় পার্টির এক সংসদ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
 
রাজাকার ও শান্তি কমিটির কেন্দ্রীয় নেতাদের বিচারের পর এবার জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের রাজাকারদের বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের তদন্ত শেষে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন এবং অভিযোগ প্রস্তুত করে (ফরমাল চার্জ) আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল চলছে। আবার কারো বিরুদ্ধে চলছে অভিযোগ গঠন। এছাড়া কিছু মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। কোনো কোনো মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ পর্যায়ে আর্গুমেন্ট করার পর্যায়ে রয়েছে।
 
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন সূত্রে জানা যায়, অপরাধের ভিত্তিতে যারা একাত্তরে বিভিন্ন সময় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ বড় ধরনের অপরাধ করেছেন এবং তারা কোনো না কোনো রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় দীর্ঘদিন ধরে দাপটের সঙ্গে বিচরণ করে যাচ্ছেন, এবার তাদের উদ্দেশ্য করে মামলার তদন্ত কাজ এগিয়ে চলছে। এরই মধ্যে ময়মনসিংহ (৭-আসন) ত্রিশালের এমপি এমএ হান্নান ও তার ছেলে সাজ্জাদসহ ৫ জন গ্রেফতার হয়েছে।

গ্রেফতারদের মধ্যে রয়েছেন- নেত্রকোনার খলিলুর রহমান, শরীয়তপুরের সোলেয়মান মোল্লা, ময়মনসিংহের রেজাউল কবির ওরফে আক্কাস মৌলভী, নেত্রকোনার হেদায়েত উল্লা ওরফে আনজু, বাগেরহাটের আকরাম খাঁ, যশোরের এএসএম আমিন উদ্দিন, সাতক্ষীরার জামায়াত নেতা ও সাবেক এমপি মো. আ. খালেক মণ্ডল।

অন্যদিকে, নোয়াখালীর ৫ রাজাকারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর তিনজন গ্রেফতার হয়েছে।
 
তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সানাউল হক জাগো নিউজকে বলেন, আমরা ধারাবাহিকভাবে প্রথমে সেন্ট্রাল নেতাদের বিচারের মুখোমুখি করেছি। এখন অপরাধের ভিত্তিতে জেলা পর্যায়ের বা মধ্যম সারির রাজাকার নেতাদের বিরুদ্ধে তদন্ত কাজ শুরু করছি। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারের আবেদন করছি এবং ইতোমধ্যে গ্রেফতার হওয়া শুরু হয়েছে।
 
তিনি বলেন, এসব রাজাকারদের গ্রেফতারে বা তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থা যৌথভাবে তদন্ত কাজ করছে। তবে কাজ করা সবচেয়ে সহজ হচ্ছে একটি কারণে। তা হচ্ছে-বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ভিকটিম নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে মামলা করছেন। তদন্ত কাজে সহায়তা করছেন। এটি একটি পজিটিভ দিক।
 
প্রসিকিউশনের অন্যতম সদস্য অ্যাডভোকেট সৈয়দ হায়দার আলী জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে ট্রাইব্যুনালের ১৫টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি মামলার বিভিন্নভাবে শুনানি চলছে। এসব মামলার কোনোটির (চার্জফেম) অভিযোগ জমা দেয়া, (ফরমাল চার্জ) অভিযোগ গঠন এবং সাক্ষী গ্রহণও চলছে।
 
এর মধ্যে ২০১৪ সাল থেকে এই সময়ের মধ্যে যেসব মামলা চলছে তাদের মধ্যে রয়েছেন, মৌলভীবাজারের আলাউদ্দিন চৌধুরী, মাওলানা আকমল আলী, মো. মতিন মিয়া। কক্সবাজারের মহসীন হায়দার চৌধুরী, সালামত উল্লা খান। নেত্রকোনার আবদুল খালেক তালুকদার, আলবদর কমান্ডার শামসুল হক, রাজাকার কমান্ডার নেছার আলী, রাজাকার কমান্ডার ইউনুস মৌলভী, রাজাকার আবদুল মতিন, রাজাকার আজিজ (হাবলু), মো. রিয়াজ উদ্দিন ফকির, আবু ছালেহ মো. আজিজ মিয়া ওরফে ঘোড়া মারা আজিজ। হবিগঞ্জের মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া, ময়মনসিংহের আবুল ফালাহ মুহাম্মদ ফাইজ্জুল্লাহ।
 
দ্বিতীয় ধাপে চলতি বছরের ৩১ মার্চ আরো ৭টি মামলা ট্রাইব্যুনালে দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে হবিগঞ্জের লিয়াকত আলী, ব্রাক্ষণবাড়িয়ার সৈয়দ মোহাম্মদ হোসাইন ওরফে হোসেন, গোপালগঞ্জের এনায়েত মোল্লা, পটুয়াখালীর আয়নাল খাঁ ও মো. আশ্রাব আলী এবং ব্রাক্ষণবাড়িয়ার এমদাদুল হক ওরফে টাক্কাবালী।   
 
অপরদিকে আরো বেশ কিছু মামলার সাক্ষীগ্রহণ চলছে। এর মধ্যে নেত্রকোনার দুই রাজাকার মো. ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। জামালপুরের ৮ রাজাকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের  জন্য ২৬ অক্টোবর দিন ধার্য আছে। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার রিয়াজ ফকির ও পলাতক ওয়াজউদ্দিনের বিরুদ্ধে (ফরমাল চার্জ) আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের কথা রয়েছে।
 
একইভাবে শরীয়তপুরের সোলায়মান মোল্লা ওরফে সলেমান মৌলভী ও পলাতক ইদ্রিস আলীর (ফরমাল চার্জ) আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের কথা এবং নেত্রকোনার ৭ রাজাকারের বিরুদ্ধে ১৫ নভেম্বর অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা।

অন্যদিকে যশোরের ৬ রাজাকারকে আত্মসমর্পণ করতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
 
এফএইচ/একে/এমএস