ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

সরকার নয়, ভারতের জনগণের ওপরই বাংলাদেশের ভরসা

সায়েম সাবু | প্রকাশিত: ১০:১২ পিএম, ১৪ জানুয়ারি ২০২০

ড. ইমতিয়াজ আহমেদ। পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কানাডার কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয়, অটোয়া ও অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। জাপানের ইয়োকোহামা সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কাজ করেছেন। অধ্যাপনা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে। ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং টেররিজম ইন সাউথ এশিয়া : বিয়ন্ড স্টাটিস্ট ডিসকোর্সেস’ নামক গ্রন্থের রচয়িতা তিনি।

ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলেইমানির হত্যাকাণ্ড নিয়ে মুখোমুখি হন জাগো নিউজ’র। বলেন, কাসেম সোলেইমানির হত্যা ইরানকে লাভবান করেছে। ইরান বহু সোলেইমানি তৈরি করে ফেলেছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র-ইরানের মধ্যকার উত্তেজনা, ফলাফল এবং বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেন তিনি।

ইরানের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে সামরিক শক্তির নিবিড় সম্পর্ক আছে বলেও মত দেন। বলেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্রের কথা প্রকাশ করলে অবাক হব না। আপাতত মধ্যপ্রাচ্যে অশান্তির আগুন-ই দেখতে পাচ্ছেন এ বিশ্লেষক। ভারতের নতুন নাগরিকত্ব আইন নিয়েও কথা বলেন তিনি। তিন পর্বের সাক্ষাৎকারে আজ থাকছে শেষটি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু

জাগো নিউজ : নাগরিকত্ব নতুন আইন করে বিজেপি সরকার মুসলিমবিরোধী অবস্থান নিচ্ছে বলে অভিযোগ। প্রশ্ন তুলেছে জাতিসংঘও। এ আইনের রোধ চেয়ে বিক্ষোভ হচ্ছে গোটা ভারতে। আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

ইমতিয়াজ আহমেদ : এ অবস্থান ভারতের অভ্যন্তরীণ ও রাজনৈতিক। ভারতের জনগণই এ আইনের বাতিল চেয়ে আন্দোলন করছে এবং এটিই হচ্ছে আশার কথা। আমি মনে করি, ভারতের মানুষই প্রতিরোধ গড়ে তুলে এর সমাধান দেবে।

জাগো নিউজ : মানুষ প্রতিবাদ করছে। কিন্তু এরপরও কাশ্মীর, বাবরি মসজিদ, এনআরসি’র মতো ঘটনা দেখতে হচ্ছে। এ প্রতিবাদের মূল্য কী?

ইমতিয়াজ আহমেদ : এসব ঘটনা গোটা ভারতের মানুষ দেখতে অভ্যস্ত নয় বলে বিশ্বাস। এটি বিজেপির হিন্দু মৌলবাদের প্রকাশ

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি অনুসরণ করে বিজেপি এসব ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। মোদির দল মনে করছে, সবার ভোট দরকার নেই। ৩৬ ভাগ ভোট পেয়েও ক্ষমতায় থাকা যায়। আর এই ভোট রক্ষার্থেই বিজেপি রক্ষণশীল হয়ে উঠছে।

imtiaz-02.jpg

নির্বাচন-কেন্দ্রিক রাজনীতি গুরুত্ব দিয়েই বিজেপি সরকার এ আইন করছে। বিজেপির সঙ্গে যারা আছেন, তারা সংখ্যায় কম হলেও আদর্শে উগ্র।

জাগো নিউজ : উগ্রবাদের এ রাজনীতি ভারতকে কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে?

ইমতিয়াজ আহমেদ : ভারতের সভ্যতা আজকের নয়। আগেও এমন বিভাজনের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু হয়নি। এবারও পারবে, তা মনে করি না। ভারতের জনগণের ওপর ভরসা রেখেই এমন আশাবাদ ব্যক্ত করছি। জনগণই সমাধান দেবে। কারণ হিন্দুত্ববাদের এই প্রকাশ ঘটতে থাকলে কেউ রক্ষা পাবে না। এক সময় সবাই বলবে, যথেষ্ট হয়েছে আর না। রাষ্ট্রীয়ভাবে যা হচ্ছে, তা ভারতের মানুষের পক্ষে হচ্ছে না। শুধুই নির্বাচনে জেতার জন্য এসব করছে বিজেপি।

জাগো নিউজ : বিজেপি আগেও ক্ষমতায় এসেছে। এ রূপ কিন্তু দেখা যায়নি…

ইমতিয়াজ আহমেদ : আজকের পরিস্থিতির দায় শুধু বিজেপির নয়। কংগ্রেসেরও দায় আছে। দুর্নীতি আর পরিবারতন্ত্র থেকে না বেরোনোর কারণেই কংগ্রেস জন-আস্থা হারিয়ে ফেলছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য কংগ্রেসের দিকেও তাকাতে হবে। দলটি আসলে কীভাবে সংগঠিত হয়, তার ওপর বিপেজির নীতি নির্ভর করছে।

জাগো নিউজ : কংগ্রেস সামলে উঠতে না পারলে…

ইমতিয়াজ আহমেদ : পরিস্থিতি হয়তো আরও খারাপের দিকে যাবে। তবে ভারতে নতুন কোনো শক্তি সহসাই মাথাচাড়া দেবে, তাও মনে করি না।

imtiaz-02.jpg

কংগ্রেসের বাইরে এসেও মানুষ সোচ্চার হচ্ছে। ভারতের জনগণ যেভাবে প্রতিবাদ করছে, বিজেপি সরকার খুব সহজে পার পেয়ে যাবে তাও মনে করি না।

জাগো নিউজ : এনআরসি নিয়ে বাংলাদেশ, বাঙালি, বাঙালি মুসলমান প্রসঙ্গ আসছে বারবার। এ নিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে কোনো টানাপড়েন…

ইমতিয়াজ আহমেদ : আমি মনে করি, বাংলাদেশকে আরও স্মার্ট হওয়া দরকার। এমন কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের নেয়া ঠিক হবে না, যাতে বিপদ বাড়ে।

ভারতের এ অবস্থান অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের। সরকার নয়, ভারতের জনগণের ওপরই বাংলাদেশকে ভরসা রাখতে হবে।

জাগো নিউজ : ভারতের প্রতি বাংলাদেশের একপক্ষীয় আনুগত্য বিপদ আনছে কি-না? অর্থাৎ ভারত সরকার যা চাইছে, তা-ই ঘটছে বাংলাদেশের সঙ্গে...

ইমতিয়াজ আহমেদ : আমি ঠিক সেভাবে বলতে চাই না। এনআরসি কেন্দ্র করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সফর বাতিল করেছেন। যৌথ নদী কমিশনের সভা বাতিল হয়েছে। আমি মনে করি, সরকারের আরও বিচক্ষণ হতে হবে। তবে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়াও ঠিক হবে না, যা সম্পর্ক নষ্ট করে।

imtiaz-02.jpg

ডিজিটাল জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। এটিই আমাদের প্রমাণ। জোর করে ভারত পাঠিয়ে দিলেই সে বাংলাদেশের নাগরিক হতে পারবে না। পুশইন, পুশব্যাক নিয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। ভারতের জনগণের প্রতি আস্থা রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। কারণ জনগণই মোদি সরকারের নীতির বিরোধিতা করছেন

এ কারণেই আমি মনে করি, এমন কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করা ঠিক হবে না, যা অন্যরা সুযোগ হিসেবে কাজে লাগায়।

জাগো নিউজ : উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ তো আছে। ১০ লাখ রোহিঙ্গা চোখের সামনে…

ইমতিয়াজ আহমেদ : দুটা এক করে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। রোহিঙ্গারা একপ্রকার রাষ্ট্রহীন ছিল। গণহত্যা হয়েছে। ভারত চাইলেই গণহত্যা চালাতে পারবে না। ভারত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জড়িত, কিন্তু মিয়ানমার নয়। এ কারণে মিয়ানমারের মতো ঘটনা ভারত করতে পারে, তা বিশ্বাস করা মুশকিল।

মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশকে ভারতেরই বেশি দরকার। এ কারণেই মাথা ঠান্ডা রেখে আমাদের সব মোকাবিলা করতে হবে।

imtiaz-02.jpg

জাগো নিউজ : আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গা নিধনের বিচার চলছে। আপনি পর্যবেক্ষণে গিয়েছিলেন। কেমন দেখলেন বিচার কার্যক্রম?

ইমতিয়াজ আহমেদ : মিয়ানমারকে বিচারের মুখোমুখি করেছে গাম্বিয়া। গাম্বিয়ার এ লিগ্যাল টিম শক্তিশালী মনে হয়েছে। তারা মূলত ছয়টি অভিযোগের ভিত্তিতে বিচার চেয়েছে। গণহত্যা নিয়ে তদন্ত-সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে বলেছে।

যদি বিচারে সঠিক রায় না হয়, তাহলে আদালতই প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে। কারণ এতে ফের রক্তপাতের ঘটনা ঘটতে পারে। আমি মনে করি, গাম্বিয়ার পক্ষে রায় আসবে। আমাদের আরও কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে।

imtiaz-02.jpg

জাগো নিউজ : অভিযোগ মিয়ানমারের রাষ্ট্রপ্রধান, শীর্ষ সেনাদের বিপক্ষেও। রায় মিয়ানমারের বিপক্ষে গেলে কী প্রভাব পড়বে?

ইমতিয়াজ আহমেদ : রোহিঙ্গাদের বিজয় হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাদের পরিচয়টা পরিষ্কার হবে। একটি আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গা শব্দটা যতবার উচ্চারিত হয়েছে, সেটাই একটি বড় অর্জন বলে মনে করি। আদালতের রায় পক্ষে গেলে রোহিঙ্গাদের শত বছরের আন্দোলন সার্থক হবে বলে মনে করি।

মিয়ানমার কিন্তু একবারও বলেনি, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি। তারা রোহিঙ্গাদের আরাকান মুসলিম বলে অবহিত করছে। এটি তাদের এক প্রকার স্বীকারোক্তি।

জাগো নিউজ : এ বিচার প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ কী ভূমিকা রাখতে পারে?

ইমতিয়াজ আহমেদ : বাংলাদেশ গাম্বিয়ার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। তথ্য আদান-প্রদান হচ্ছে। আরও সক্রিয় হওয়া দরকার বলে মনে করছি।

এএসএস/এমএআর/এমএস