ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

’২০-এ দিশা পাবে দক্ষিণ এশিয়া?

সায়েম সাবু | প্রকাশিত: ১২:০৫ এএম, ০১ জানুয়ারি ২০২০

ধর্মের হিংসায় পুড়ছে ভারত। এ হিংসার পারদ ছড়িয়ে পড়ছে দক্ষিণ এশিয়ায়। বহুজাতিক রাষ্ট্র ভারতের সৌন্দর্য গণতন্ত্র আর ধর্মীয় সম্প্রীতির মধ্য দিয়েই হাজার বছর ধরে প্রকাশ হয়ে আসছে। কিন্তু ধর্মীয় উগ্রবাদের বিস্তারে সেই সৌন্দর্যের অনেকটাই ম্লান আজ।

হিন্দুত্ববাদী কট্টরপন্থী সংগঠন আরএসএস-এর রাজনৈতিক শাখা বিজেপি পরপর দু’বার ক্ষমতায় এসে ধর্মকেই ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। ‘গরু’ বড় না-কি ‘মানুষ’ বড়- এ বিতর্কে বিশ্ব অবাক হয়েছে বর্তমান বিজেপি সরকারের আমলেই। গরুর মাংস খাওয়ার অপরাধে মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা হলেও এমন বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড বন্ধে বিজেপি সরকারের নির্লিপ্ততা অন্দরেই সমালোচিত হয়েছে।

কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল থেকে অযোধ্যার বাবরি মসজিদের জায়গায় রামমন্দির নির্মাণের রায়। সেই মন্দির নির্মাণের রায় থেকে কথিত অনুপ্রবেশকারী শনাক্ত করতে এনআরসি প্রকাশ এবং সবশেষ সম্প্রদায়গত পরিচয় বিবেচনায় নাগরিকত্ব দেয়ার জন্য সিএএ পাস- যেন এক ‘নয়া ভারত’কে পরিচয় করাচ্ছে বিশ্বপরিসরে। যেখানে মানুষের মূল্য ক্রমশই কমছে বলে ভাষ্য অরুন্ধতী রায়ের মতো মানবাধিকারকর্মীদের।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ-কে তো ‘মুসলিমবিরোধী আইন’ই বলেছে জাতিসংঘ। এ আইনের প্রতিবাদে রাস্তায় নামা জনতাকে দমনে যে দাঙ্গা পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে, তাতে রক্তাক্ত গোটা ভারত। দেশটির বর্তমান এ পরিস্থিতি-ই এখন আন্তর্জাতিক ইস্যু। বিশ্লেষকদের শঙ্কা, গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় ধর্মীয় উগ্রবাদের বিস্তার ঘটাতে পারে ভারতের চলমান এ নীতি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এবং রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘গত বছর বেশকিছু ঘটনা দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের মনে দাগ কেটে গেছে। শ্রীলঙ্কার উপাসনালয়ে হামলা, ভারত পরিস্থিতি, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে রোহিঙ্গা নিধনের দায়ে মিয়ানমারের বিচারের মতো ঘটনা অবশ্যই মনে রাখার মতো।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য ঘটনা চাপা পড়ে গেলেও ভারত পরিস্থিতি আপাতত বিশ্লেষণ করা মুশকিল বলেই মনে করি। রাজনৈতিক কারণে বিজেপি নানা সিদ্ধান্ত নিলেও শেষপর্যন্ত পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, সেটা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে। তবে এতটুকু বলা যেতেই পারে, আসছে বছর শুভ সংবাদের ঘাটতি হবে হয়তো।’

আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন মনে করেন, ‘ভারতের এ পরিস্থিতি গোটা দক্ষিণ এশিয়ার উগ্র-দক্ষিণপন্থীদের সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।’

এ বিশ্লেষক বলেন, ‘গেল বছর আমাদের জন্য কোনো সুখের খবর ছিল না। বিশেষ করে শ্রীলঙ্কার হামলায় কেঁপে উঠেছিল পুরো দক্ষিণ এশিয়া। এরপর ভারত। ভারতে একের পর এক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। এগিয়ে যাওয়া পৃথিবীতে ভারত একেবারেই পিছিয়ে পড়া নীতিতে জোর দিচ্ছে। এটি-ই আগামী দিনের জন্য অশুভ সংবাদ বলে মনে করি।’

এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এমনিতেই এ অঞ্চলে পলিটিক্যাল স্পেস সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। আইএস-এর হুমকি আছেই। ভারতে মুসলমান নির্যাতন চলতে থাকলে অন্য দেশের উগ্রবাদীরা বসে থাকবে- এটি মনে করার কোনো কারণ নেই।’

একই শঙ্কা প্রকাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালেয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. শাহিদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘ভারত এখন একটি অভিশপ্ত রাষ্ট্রের নাম। হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশটিতে মুসলমানরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নির্যাতন হচ্ছেন দলিতরাও।’

এ বিশ্লেষক বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় এমন নিরাপত্তার ঝুঁকি বাড়িয়েছে ভারত এবং সেটা পরিকল্পিত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে। এ কারণেই দক্ষিণ এশিয়া অশান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।’

এএসএস/এইচএ/এমএআর/এমআরএম