ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

ভারতে নতুন রাজনৈতিক দলের ক্ষুধা তৈরি হয়েছে

সায়েম সাবু | প্রকাশিত: ১০:০৪ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯

আলতাফ পারভেজ। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাসের গবেষক। বিশ্লেষণ করছেন, লিখছেন আন্তর্জাতিক নানা প্রসঙ্গ নিয়ে। ভারতের নাগরিকপঞ্জি আইন এবং এ আইন ঘিরে ঘটনাপ্রবাহের খবর রাখছেন, বিশ্লেষণ করছেন নিয়মিত।

ভারত প্রসঙ্গ নিয়ে সম্প্রতি মুখোমুখি হন জাগো নিউজ-এর। দীর্ঘ আলোচনায় ভারতের রাজনীতি এবং বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বিষয়েও আলোকপাত করেন। তিন পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে প্রথমটি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু

জাগো নিউজ : নাগরিকপঞ্জির নতুন আইনে উত্তাল ভারত। এমন আন্দোলন স্বাধীনতার পর ভারতে আর হয়নি বলে মনে করা হচ্ছে। এনআরসি ও সিএবি ঘিরে এ আন্দোলন কীভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন?

আলতাফ পারভেজ : আসামে এনআরসি প্রায় চূড়ান্ত। যারা বাদ পড়েছেন, তারা আবেদন করার সুযোগ পাবেন এখন। আসাম হাইকোর্ট থেকে হয়তো আরও উচ্চ আদালতে যেতে হবে।

যারা নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ পড়েছেন, তারা তো আসলে খুবই দরিদ্র মানুষ। তাদের মধ্যে অনেকেই বিধবা ও বয়স্ক নারী। আবার অনেকেই চরের মানুষ। তার মানে দরিদ্র, বিধবা নারী ও চরের মানুষদের আইনি লড়াই করতে হচ্ছে। আমাদের দেশে মামলার যে খরচ, আসামেও একই খরচ। আসাম থেকে নয়াদিল্লি আরও বহু দূর। ফলে যারা বাদ পড়েছেন, তারা বাদ-ই থাকবেন, আমার মতে।

কারণ, তারা প্রমাণ করতে পারবেন না যে, ভারতের নাগরিক তারা। আসামের মানুষের জন্য ক্যাম্প তৈরি হয়ে গেছে। কারাগারের মতো বিশাল ক্যাম্প। একটি অংশ হয়তো ক্যাম্পে থাকবে। আরেকটি অংশ অন্য জায়গায় যাবে। হয়তো অনেকে পালিয়ে থাকবেন। এর মধ্যে যে ক্ষতিটা হলো তা হচ্ছে, এসব মানুষ চরম অপমানিত হলো। অনেকেই আত্মহত্যা করছেন। কেউ সন্তানের কাছে অপমানিত, কেউ আবার বাবা-মার কাছে অপমানিত। সমাজজুড়ে চরম দুঃখ-কষ্টের ব্যাপার দাঁড়িয়েছে। এই হলো আসামের পরিস্থিতি

জাগো নিউজ : গোটা ভারতেই তো এনআরসির ঘোষণা দিয়েছে বিজেপি সরকার?

আলতাফ পারভেজ : এনআরসি আসলে বিজেপি সরকারের একটি রাজনৈতিক প্রকল্প। আসামে এনআরসি গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল প্রচুর মুসলমান অবৈধভাবে আছে বলে। সেটি আসলে প্রমাণ করা যায়নি। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে সেখানকার মুসলমানদের মানসিকভাবে চাপে রাখা সম্ভব হয়েছে। যদিও হিন্দুরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বিশেষ করে নিম্নবর্ণের হিন্দুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে

altab-parvej-04.jpg

জাগো নিউজ : বিজেপির এমন রাজনৈতিক প্রকল্প আগে থেকেই বাস্তবায়ন হয়ে আসছিল। কিন্তু এবার নির্বাচনের পর পরিবর্তনটা খুব দ্রুত ঘটল কি-না?

আলতাফ পারভেজ : বিজেপি উগ্র হিন্দুত্ববাদী আরএসএস- এর রাজনৈতিক অঙ্গসংগঠন। আরএসএস মূলত কট্টরপন্থী মতবাদ লালন করে। হিন্দু ধর্মের সঙ্গে হিন্দুত্ববাদের আসলে প্রবল কোনো সম্পর্ক নেই। হিন্দুত্ববাদ হচ্ছে জাতিবিদ্বেষী চিন্তার প্রকাশ। মুসলিম বিদ্বেষ, খ্রিস্টান বিদ্বেষ এবং বাম বিদ্বেষ লালন করলেও মুসলমানদেরই এখন প্রধান শত্রু মনে করছে আরএসএস-বিজেপি

জাগো নিউজ : প্রধান শত্রু মনে করার কী কারণ থাকতে পারে?

আলতাফ পারভেজ : চাকরি বা প্রশাসনে মুসলমানরা খুব গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে নেই। সংখ্যায় ১৫/১৬ শতাংশ হলেও চাকরিতে পাঁচ ভাগও নাই। এমনকি সেনাবাহিনীতে এক ভাগও নাই।

মুসলমানরা ভারতের জন্য কোনোভাবেই হুমকি নয়। কিন্তু রাজনৈতিকভাবেই তাদের টার্গেট করা হয়েছে। হিন্দুদের ভোট একটি বাক্সে ফেলার জন্য মুসলমান ঘৃণা বা ভীতিকে একটি প্রোডাক্ট বানানো হয়েছে। এনআরসি, ক্যাব আসছে এমন প্রোডাক্ট থেকেই।

অযোধ্যার বাবরি মসজিদ নিয়ে বিজেপি, আরএসএস দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছে। অযোধ্যায় রামমন্দির হচ্ছে। এটি নিয়ে রাজনীতি করার আর সুযোগ নেই। এখন নাগরিকপঞ্জি। প্রথমে এনআরসি আনা হলো। কিন্তু এতে প্রচুর হিন্দুও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। ভীতি তৈরি হলো। ভোটের রাজনীতিতে বিজেপির জন্য নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। আনা হলো সিএবি। এর প্রচারণা এমনভাবে করা হলো যে, হিন্দুদের নাগরিকত্ব দিতেই এ আইন করা হয়েছে।

altab-parvej-04.jpg

মুসলমানদের বাদ দেয়া হচ্ছে, এটি বলার মধ্য দিয়ে বিজেপি গর্ব করছে। কোনো ভয়ও পায় না বিজেপি। তারা হিন্দুদের বলছে, তোমাদের কাগজপত্র না থাকলেও সমস্যা নেই। তোমরা ভারতের নাগরিক হয়ে যাবা।

জাগো নিউজ : মানুষ প্রতিবাদও করছে। এ হিংসার রাজনীতির মধ্য দিয়ে ভারতের আসলে কী রূপ প্রকাশিত হচ্ছে?

আলতাফ পারভেজ : তরুণ বা সচেতন মানুষরা প্রতিবাদ করছে। আন্দোলন করছে। কিন্তু এ আন্দোলন বিজেপির যে উত্থান, তাকে আপাতত ঠেকাতে পারবে না। খুব নির্মোহভাবে বলছি আমি।

জাগো নিউজ : কিন্তু ভারতে ধর্মনিরপেক্ষবাদীরাও তো শক্তিশালী ছিল?

আলতাফ পারভেজ : এটি মনে করা হয়। কিন্তু কংগ্রেস বা পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থীরা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকেও ধর্মনিরপেক্ষতা-কে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারেনি। তারাই ভারতের তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল। দুর্নীতি বা পরিবারতন্ত্র এ রাজনৈতিক দলগুলোকে গ্রাস করেছে।

সুতরাং এরা ডাক দিলেই মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়বে, এটি মনে করার কোনো কারণ নেই। তাদের প্রতি মানুষের আস্থা নেই।

altab-parvej-04.jpg

তরুণ শিক্ষার্থীরা স্ব-উদ্যোগে প্রতিবাদ করছে। তরুণরা দেখছে এনআরসি, ক্যাব হচ্ছে চরম ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক প্রকল্প। কংগ্রেস এখন পর্যন্ত কোনো বার্তা দিতে পারেনি। কংগ্রেস দুর্নীতি ও পরিবারতন্ত্র থেকে বের হতে পারেনি। এ কারণে বিজেপির নীতিবিরোধী যে আন্দোলন হচ্ছে, তাতে বিজেপি দমে যাবে, এমনটি মনে করার কোনো কারণ নেই।

জাগো নিউজ : কিন্তু আন্দোলনে তো বিশেষ গতিও পেল…

আলতাফ পারভেজ : হ্যাঁ। অবাক করার মতো আন্দোলন হচ্ছে। আন্দোলন ক্রমাগতভাবে শক্তিশালীও হবে। এ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ভারতে নতুন রাজনৈতিক দলের ক্ষুধা তৈরি হয়েছে। তরুণদের আন্দোলন অন্তত সেই আবেদনই তৈরি করেছে। এমন নতুন রাজনৈতিক দলের ক্ষুধা হয়তো আমাদের দেশেও আছে।

নতুন রাজনীতি ভিন্ন আলোচনা। কিন্তু গোটা ভারতে এনআরসি বা ক্যাব ঠেকানো যাবে, আমি তা মনে করি না।

এএসএস/এমএআর/এমএস

আরও পড়ুন