ইচ্ছা হলে দেয় উড়াল!
কখনও পৌনে দুই ঘণ্টা, কখনও আড়াই ঘণ্টা আবার কখনও ১২ ঘণ্টা দেরিতে উড়াল দিচ্ছে এক একটি ফ্লাইট। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এভাবে ইচ্ছামতো উড়াল দিচ্ছে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ। যেন দেখার কেউ নেই। ভুক্তভোগীদের বক্তব্য, এয়ারলাইন্সগুলো তাদের ইচ্ছামতো ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কোনো লক্ষ্যণই যেন নেই।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সক্রিয় বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন্সের তথ্য-উপাত্ত ঘেটে দেখা যায়, ঢাকা থেকে আবুধাবিগামী বিজি-২৭ ফ্লাইটটি গত দুই মাসে একদিনও সময়মতো ছাড়েনি। গড়ে ফ্লাইটটি প্রতিদিন ১০৬ মিনিট বা পৌনে দুই ঘণ্টা বিলম্বে ছাড়ে। এছাড়া চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের ১২ তারিখ ফ্লাইটটি প্রায় ১২ ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ে।
সিডিউলের এমন বিপর্যয়ে যাত্রীরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। কবে নাগাদ এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে তা বলতে পারছে না সংশ্লিষ্টরা।
বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট পরিচালনার তথ্য-উপাত্ত ঘেটে আরও দেখা যায়, ঢাকা থেকে রিয়াদগামী বিজি-৩৯ ফ্লাইটটি গত এক মাসে সময়মতো ছেড়েছে। ঢাকা থেকে কাতারের দোহাগামী বিজি-২৫ ফ্লাইটটি গত দুই মাসে একদিনও সময়মতো ছাড়েনি। গড়ে ফ্লাইটটি প্রতিদিন আড়াই ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ে। এছাড়া চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের ৬ তারিখ ফ্লাইটটি প্রায় ১৬ ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ে।
ঢাকা থেকে ব্যাংককগামী বেসরকারি এয়ারলাইন্স ইউএস-বাংলার বিএস-২১৩ ফ্লাইটটিও দেরিতে ছাড়ছে। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ১২টি ফ্লাইটের একটিও সময়মতো ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়নি। এ রুটটি আড়াই ঘণ্টার। অথচ প্রতিদিন গড়ে ৬৭ মিনিট বিলম্বে ছাড়ছে।
ইউএস-বাংলার কুয়ালালামপুরগামী ফ্লাইটটিও গড়ে ৩৯ মিনিট দেরিতে ছাড়ে। এ বিষয়ে এয়ারলাইন্সটির গ্রাহক সেবা বিভাগের পরিচালক জুনায়েদ আহমেদ বলেন, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের জন্য বিলম্বটা খুব কমই হয়েছে। দু-চারদিন বিলম্ব হলেও সেটি এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষের কারণে হয়েছে। অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের ডিপারচার ব্যাগেজ বেল্ট থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক টার্মিনালের বোর্ডিং ব্রিজ পর্যন্ত নানা সমস্যায় জর্জরিত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
তিনি বলেন, জনস্বার্থে বিভিন্ন ধরনের সংস্কারের দাবি করা হলেও এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ তা কানে নেন না। ফলে সমস্যাগুলোর সমাধান সহজে হয় না, যাত্রীসেবাও নিশ্চিত করা যায় না। স্বল্প সুবিধার বিমানবন্দরে বেশিসংখ্যক যাত্রীর কারণে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। এসব কারণে কখনও কখনও ফ্লাইট শিডিউলে পরিবর্তন আনা হয়। এজন্য তো ওই এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ দায়ী হতে পারে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর তুলনায় দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলোতে সিডিউল বিপর্যয় বেশি হচ্ছে। গত এক মাসের ফ্লাইট শিডিউলের বিবরণ থেকে জানা যায়, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স, মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স, এয়ারওয়েজ ও এমিরেটস এয়ারলাইন্সের বিচ্ছিন্নভাবে দু-চারটি ফ্লাইট বিলম্বে এসেছে বা ছেড়েছে।
এ বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিমানে অনেক কারণে ফ্লাইট বিলম্বিত হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষের নানা সীমাবদ্ধতা থাকে। আবার কিছু ক্ষেত্রে পাইলটরা দেরি করে আসেন। এ কারণে ফ্লাইট দেরিতে ছাড়তে হয়। আবার টেকনিক্যাল কারণেও মাঝেমধ্যে ফ্লাইট ছাড়তে বিলম্বিত হয়।’
বিমানবন্দরের বিভিন্ন সমস্যা এবং এর সমাধানের বিষয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক উইং কমান্ডার তৌহিদ-উল আহসান বলেন, ‘যাত্রীদের সুবিধার্থে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ সোচ্চার। যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদানে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে এবং সেগুলো বাস্তবায়নও হচ্ছে।’
‘যাত্রীদের সব ধরনের সহযোগিতা ও সুবিধা প্রদানের জন্য নিয়মিত গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। গত সোমবারও বিমানবন্দরের ভেতরে এ ধরনের একটি গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিমানবন্দর ব্যবহারকারী অনেক যাত্রীও উপস্থিত ছিলেন। তারা তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা বেবিচক ও বিমানবন্দরে দায়িত্বরত বিভিন্ন এয়ারলাইন্স সংস্থার প্রতিনিধিদের সামনে তুলে ধরেন। তাৎক্ষণিক ইতিবাচক অনেক সিদ্ধান্ত হয়। অভিযোগের সঙ্গে সঙ্গে অনেক সমস্যার সমাধানও হয়। এছাড়া গণশুনানির পরপর বেবিচক বেশ কয়েক ধরনের সমন্বয় সভা করে থাকে।’
‘নিয়মিত এসব প্রক্রিয়া চালু থাকায় বিমানবন্দরে যাত্রীদের ভোগান্তি অনেকাংশে কমেছে’ বলেও দাবি করেন তৌহিদ-উল আহসান।
আরএম/এমএআর/জেআইএম