দলীয় ‘সিন্ডিকেট’ ঘিরে সন্দেহ-অবিশ্বাস!
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের ওপর আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। ফলে সংগঠনটি ঘিরে বিএনপি নেতাদের মধ্যে যে ‘সিন্ডিকেট’ বিরাজমান, তাদের মধ্যে পারস্পরিক সন্দেহ-অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে।
সরকার আদালতের মাধ্যমে ছাত্রদলের কাউন্সিল বন্ধ করে দিয়েছে- প্রকাশ্যে এমন বক্তব্য দিলেও ছাত্রদলের সাবেক সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আমান উল্লাহ, যিনি মামলা করেছেন দলের মধ্যে থেকে তাকে কেউ ইন্ধন জুগিয়েছে কি-না, সে বিষয়টিও সামনে এসেছে। এটি এখন খতিয়ে দেখছে বিএনপি।
দীর্ঘ ২৭ বছর পর কাউন্সিলের মাধ্যমে ছাত্রদলের নেতা নির্বাচনের সব আয়োজন শেষ করলেও শেষ পর্যন্ত আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞায় আটকে যায়। ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিল বাধাগ্রস্ত হতে পারে- এমন আশঙ্কায় আগে থেকেই অনলাইনে বিকল্প প্রস্তুতি গ্রহণ করে বিএনপির হাইকমান্ড। সংগঠনটির অভ্যন্তরীণ কোন্দল বা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে কাউন্সিল সফল করতে বিকল্প এ প্রস্তুতি নেয়া হয়।
ছাত্রদলের সদ্য বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমানের এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চতুর্থ সহকারী জজ নুসরাত জাহান বিথি গত ১২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কাউন্সিলের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। একই সঙ্গে আদালত ছাত্রদলের কাউন্সিলে কেন স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে না তা জানতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১০ নেতাকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেন আদালত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রদলের এক সভাপতিপ্রার্থী জাগো নিউজকে বলেন, ‘ছাত্রদল ঘিরে কয়েকটি সিন্ডিকেট সক্রিয়। সিন্ডিকেটমুক্ত কাউন্সিলের মাধ্যমে প্রকৃত ছাত্রদের নিয়ে নতুন নেতৃত্ব গঠন করে ছাত্রদলকে গতিশীল করতে রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমান যখন উদ্যোগ নিলেন ঠিক তখনই সিন্ডিকেটের একটি টিম কাউন্সিল বাধাগ্রস্ত করতে বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুর, সিনিয়র নেতাদের লাঞ্ছিত করে। এসব করেও তারা যখন সুবিধা করতে পারেনি তখন সিন্ডিকেটের দ্বিতীয় টিমকে নিজেদের প্রার্থী করে তারেক রহমানের প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালায়। একই সঙ্গে তারা ছাত্রদলের কাউন্সিলরদের ওপর চাপ প্রয়োগ, অর্থ বিনিয়োগ- এমন মিথ্যা প্রচারণা চালায়।’
‘পরবর্তীতে যখন তাদের ষড়যন্ত্র সবার কাছে চিহ্নিত হয়, তারেক রহমানের কোনো পছন্দ নেই, এ কারণে কাউন্সিলের আয়োজন করা হচ্ছে মর্মে সবাই যখন জানতে পারেন তখন ওই সিন্ডিকেটের প্রার্থীদের ভরাডুবির আশঙ্কা দেখা দেয়। তারা ছাত্রদলের সাবেক সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আমান উল্লাহকে দিয়ে মামলা করিয়ে কাউন্সিলের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এখন তারা সিলেকশন প্রক্রিয়ায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে’- বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকপ্রার্থী এক নেতা বলেন, ‘ইতোপূর্বে দেখেছি, কমিটি গঠন নিয়ে আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েল, নুরুল ইসলাম নয়ন ও ইখতিয়ার কবীর তাদের অনুসারীদের নিয়ে পৃথকভাবে দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করেন। ছাত্রদলে সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু ও শফিউল বারী বাবুরও শক্তিশালী অনুসারী রয়েছে। সুতরাং সিন্ডিকেটের হোতাদের সুস্পষ্ট নির্দেশনা ছাড়া ছাত্রদলের কোনো নেতাকর্মী কোনো পদক্ষেপ নেবে- সেটা ভাবা ঠিক হবে না।’
ছাত্রদলের সভাপতিপ্রার্থী মো. এরশাদ বলেন, ‘ছাত্রদল ইস্যুতে আদালতে মামলাকারী আমান উল্লাহ আমান কার লোক, সেটা সোশ্যাল মিডিয়া লক্ষ্য করলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। এমনিতে যে কারও সাথেই ছবি থাকতে পারে, কিন্তু তিনি যখন কারও সাথে থেকে মিছিল করেন বা রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচি পালন করেন তখন বিষয়টা পরিষ্কার হয় আসলে তিনি কার অনুসারী, কোন সিন্ডিকেটের অনুসারী?’
‘তারেক রহমানের প্রার্থী হিসেবে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে যখন তারা ধরা খেল, তাদের প্রার্থীদের আর নির্বাচিত করা সম্ভব নয়, ঠিক সেই মুহূর্তে সিন্ডিকেটের হোতারা আমান উল্লাহকে দিয়ে মামলা করায়। ফলে কাউন্সিল নিয়ে আমাদের প্রার্থীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।’
সাধারণ সম্পাদকপ্রার্থী ডালিয়া রহমান বলেন, ‘আমান উল্লাহ যেহেতু ছাত্রদলের পদধারী ছিলেন, তিনি মামলা করে কাউন্সিলের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করিয়েছেন, সেক্ষেত্রে অস্বীকার করার উপায় নেই যে, কাউন্সিল স্থগিতের সঙ্গে আমাদের কেউ জড়িত নয়! একটা চক্র (সিন্ডিকেট) ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এটা করেছে, কারা করেছে এটা প্রমাণ ছাড়া বলতে পারব না। তবে যারা করেছে তারা তাদের পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী করেছে এবং দলের জন্য একটা খারাপ কাজ করেছে, যেটা করা তাদের মোটেও ঠিক হয়নি।’
বিএনপির পদবঞ্চিত এক নেতার দাবি, ‘ছাত্রদলের সাবেক সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আমান উল্লাহ দলের সংস্কারপন্থীদের হাত ধরে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই পায়। অতীতে যারা দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর করেছে, তালা দিয়েছে, আমান উল্লাহ তাদের অনুসারী।’
সূত্র মতে, কাউন্সিলের ওপর আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার পর ছাত্রদল ও বিএনপির নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করে তাদের সার্বিক পর্যালোচনা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে অবহিত করেছেন।
ছাত্রদলের কাউন্সিল পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন জাগো নিউজকে বলেন, ‘সরকারের হস্তক্ষেপে ছাত্রদলের কাউন্সিলে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এখানে আমাদের দলের কেউ জড়িত রয়েছে কি-না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
কেএইচ/এমএআর/এমএস