ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

মুসোলিনিকেও হার মানাবেন অমিত শাহ

সায়েম সাবু | প্রকাশিত: ০৮:১১ পিএম, ২১ আগস্ট ২০১৯

অধ্যাপক এম শাহিদুজ্জামান। কূটনৈতিক বিশ্লেষক। অধ্যাপনা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে। কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে মুখোমুখি হন জাগো নিউজ-এর। ভারতের সংবিধান থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ তুলে দেয়া ‘অবৈধ’ বলে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ‘কাশ্মীরে ভারত যা করছে, তাতে এ অঞ্চলে অশান্তির পথ প্রশস্ত হবে। বিপদ বাড়তে পারে ভারতের জন্যও। দখল আর দমন নীতির মধ্য দিয়ে ভারতের নতুন এক পরিচয় ঘটতে যাচ্ছে বিশ্বে।’ দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের প্রথমটি তিনি উল্লেখ করেন, কাশ্মীরে মোদি সরকার বড় ধরনের ভুল করছে। সেখানে বলপ্রয়োগ ভারতের উত্তর-পূর্বেও সংকট বাড়াবে। আজ থাকছে এর শেষ পর্ব

জাগো নিউজ : আগের পর্বে বলেছিলেন, কাশ্মীরে একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে মোদি সরকার ভুল করেছে। বিষয়টি এমন হতে পারে কি-না, বিজেপি সরকারের এ নীতি কাশ্মীরের স্বাধীনতার পথকে প্রশস্ত করবে?

শাহিদুজ্জামান : স্বাধীনতার পথ প্রশস্ত করা কাশ্মীরিদের জন্য খুবই কঠিন। ভারতের বিশাল একটি সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে কাশ্মীরিরা লড়ছে। আমরা নাগাল্যান্ড, মণিপুরে দেখছি, সেনাবাহিনী চাইলে যেকোনো সময়ে যেকোনো ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে যেতে পারছে। গুম করে দিচ্ছে। কাশ্মীরেও হয়তো তা-ই ঘটবে।

কিন্তু আমার এখানে অন্য বিশ্লেষণও আছে। তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। গত তিন বছরে রেকর্ড সংখ্যক কাশ্মীরি তরুণকে হত্যা করা হয়েছে। এখনও গুম, হত্যা চলছে। তাদের কাছে আর কোনো উপায় থাকছে না। এ অবস্থায় তারা অত্যাধুনিক অস্ত্রও হাতে তুলে নিতে পারে।

অপরাধ বা সমাজ বিশ্লেষকরা মনে করেন, মানুষের যখন হারানোর আর কিছু থাকে না, তখন সে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে থাকে। সন্ত্রাসবাদে আমরা রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করতে দেখেছি আগেও। কাশ্মীরের উগ্রবাদীদের কাছে এমন অস্ত্রও গুরুত্ব পাবে এখন, যা দিয়ে লাখো মানুষের প্রাণহরণ করা যেতে পারে! অত্যন্ত নীরবে কাশ্মীরের তরুণরা জীবাণু অস্ত্রের ব্যবহার করে বড় ধরনের সন্ত্রাসবাদের জন্ম দিতে পারে। এটিই এখন আমার কাছে ভয়!

একটি জাতিকে চরম অপমান করার পরিণতি কখনই ভালো হয় না। এর ফলাফল সুদূরপ্রসারী হয়।

জাগো নিউজ : ভারত তো সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় সফলও বটে...

শাহিদুজ্জামান : ইসরায়েলের সঙ্গে ভারত সামরিক প্রযুক্তির উন্নয়নে সফল। স্যাটেলাইট প্রযুক্তিতেও এগিয়ে গেছে। পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদকেও মোকাবিলা করছে ভারত। তার মানে এই নয় যে, সবকিছুই ভারতের নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। কী ঘটবে সামনে, ভারত হয়তো কল্পনাও করতে পারছে না! ভারতের সেনাবাহিনীর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেই কিন্তু কাশ্মীরি তরুণরা টিকে আছে।

Amit-Shah

অমিত শাহ

আমি মনে করি, নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ জঘন্য নীতি অবলম্বন করে চলছেন। চরম সাম্প্রদায়িক ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন অমিত শাহ। গণহত্যার প্রতীক তিনি। মুসোলিনিকেও হার মানাবেন অমিত শাহ। এমন ব্যক্তির হাতে কাশ্মীরের মতো বিষয় গ্রহণযোগ্যতা পেতে পারে, আমি অন্তত তা বিশ্বাস করি না।

জাগো নিউজ : এ অবিশ্বাস থেকেই কী মুসলমানদের ওপর নির্যাতন...

শাহিদুজ্জামান : বিজেপি দুবার ক্ষমতায় এসে ভারতের রাজনৈতিক চেতনায় সাম্প্রদায়িকতাকে ভয়ঙ্করভাবে গেঁথে দিয়েছে। কিন্তু তা-ই বলে আমি ভারতের মধ্যকার মুসলমান নির্যাতন এবং কাশ্মীরের সংকটকে এক করে ফেলব না। দুটি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। ভারতের মুসলমানরা ভারতকে প্রচণ্ডভাবে ভালোবাসে। এমনকি মুসলমানদেরও অনেকে চাইছেন কাশ্মীর ভারতের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাক। অন্তত মুসলমানের সংখ্যা বাড়ানোর প্রশ্নে এমনটি অনেকেই মনে করছেন।

কিন্তু কাশ্মীরের মুসলমান আর ভারতের মুসলমান আলাদা। মধ্য এশিয়ার মুসলমানদের সঙ্গে কাশ্মীরের মুসলমানদের অনেকটাই মিল। ভাষা, খাদ্য, সংস্কৃতি, ধর্মীয় আচার এমনকি তাদের চেহারা- কোনোটাই ভারতীয় মুসলমানদের সঙ্গে মেলে না। এসব কারণে ভারত কাশ্মীরিদের ঠিক এক করে ফেলতে পারেনি। এখন অন্য কায়দায় যাচ্ছে। ব্যবসার পত্তন গড়বে। ভারতীয়দের চাকরির ব্যবস্থা করবে সেখানে। একসময় কাশ্মীরিদের সংখ্যালঘু করে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে সেখানে যাওয়া হচ্ছে।

জাগো নিউজ : এমন চেতনার মধ্য দিয়ে ভারত আসলে কোথায় যেতে চাইছে?

শাহিদুজ্জামান : ভারতে হিন্দুত্ববাদের বিকাশকে প্রসারিত করতে চাইছে বিজেপি সরকার। এমনকি বিশ্বেও ভারত হিন্দুত্ববাদের শক্তি দিয়ে নিজেদের পরিচিতি চাইছে। অথচ এ শক্তির বিকাশের মধ্য দিয়ে ভারতের ইমেজ সংকটে পড়ছে। ভারত যে দখলদার, সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে কাশ্মীর ইস্যুতে তা একেবারেই পরিষ্কার হচ্ছে। ভারত যদি এ পন্থায় না যেত, তাহলে বিশ্ব মেনে নিত যে, কাশ্মীর ভারতেরই অংশ। তখন ভিন্ন কৌশলে কাশ্মীরে ভারতের সহাবস্থান পোক্ত করতে পারত।

৩৭০ অনুচ্ছেদ বহাল থাকলে কাশ্মীরিরাও ভারতের প্রতি সমর্থন রাখত।

কিন্তু এখন ভারতের সেনাবাহিনী সেখানে শক্তি প্রয়োগ করছে। সেখানকার নারীদের নির্যাতনের ভয় রয়েছে। কাশ্মীরি তরুণদের হত্যা করা হচ্ছে। এসবের মধ্য দিয়ে কাশ্মীরের স্বতন্ত্র কাঠামো ভেঙে দেয়া হবে। কিন্তু কাশ্মীরিরা নির্দ্বিধায় সব মেনে নেবে, তা মনে করার কোনো কারণ নেই। কাশ্মীর দিয়েই ভারতের নতুন চেহারার উন্মোচন হবে বিশ্বের কাছে।

জাগো নিউজ : কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তান আসলে কী ভূমিকা রাখতে পারে?

শাহিদুজ্জামান : কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে পাকিস্তান জোরালো ভূমিকা রাখতে পারবে বলে মনে করি না। কারণ, পাকিস্তান নিজেরাই রাজনৈতিকভাবে শক্তিহীন। তারা এমন একটি বিষয়ে ঐক্য আনতে পারবে বলে বিশ্বাস করি না। তারা নিজেদের মধ্যকার ষড়যন্ত্র, দ্বন্দ্ব নিয়েই বেশি ব্যস্ত। পার্লামেন্টে শ্রদ্ধা রেখে কেউ কথা বলছে না। কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানে ইমরানবিরোধী রাজনীতিই এখন চাঙ্গা হবে।

Amit-Shah

কাশ্মীরে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হচ্ছেন নারীরা

তবে আন্তর্জাতিকভাবে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকে আলাদা আলাদাভাবে বোঝাতে চেষ্টা করবে পাকিস্তান। কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে জাতিসংঘে নালিশ করার ক্ষেত্রও তৈরি করতে পারে দেশটি।

জাগো নিউজ : কাশ্মীর ইস্যু চীন কীভাবে দেখছে?

শাহিদুজ্জামান : চীন বেশিকিছু করবে, তা আমি মনে করি না। কারণ চীন এখন অধিক ব্যস্ত তাদের বাণিজ্যিক আগ্রাসন নিয়ে। নিছক মুসলমান ইস্যুতে চীন ভারতের বিরোধিতা করবে না। কারণ নিজের দেশেই উইঘুর সম্প্রদায়ের মুসলমানদের নির্যাতন করছে চীন। এমন নির্যাতনের চিত্র সামনে রেখে অন্য দেশের নির্যাতন নিয়ে কথা বলার অধিকার রাখে না কেউ। তবে চীন শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের পাশেই থাকবে এবং কাশ্মীরিদের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে তুলতে পাকিস্তানকে সহায়তা করবে।

জাগো নিউজ : তাহলে এখানে আন্তর্জাতিক কোন শক্তিকে গুরুত্ব দেবেন?

শাহিদুজ্জামান : আমি কাশ্মীর ইস্যুতে পশ্চিমা বিশ্বকেই গুরুত্ব দিচ্ছি। আর মুসলিম বিশ্ব একধরনের চাপ তৈরি করতে পারে।

তবে কাশ্মীরিদের নিজেদের মোকাবিলার শক্তির ওপরেই সবকিছু নির্ভর করছে। এজন্য হয়তো আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে।

জাগো নিউজ : কাশ্মীর নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের ভাবনা...

শাহিদুজ্জামান : বাংলাদেশে ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। সঙ্গত কারণে কাশ্মীরে ভারতের আগ্রাসন নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। অন্তত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চোখ রাখলে সহজেই তা অনুমান করা যায়।

আমি মনে করি, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারও কাশ্মীর নিয়ে বিব্রত। শুক্রবার জুমার নামাজের খুতবায় ফিলিস্তিনের পক্ষে যেমন জোর দিয়ে বলা হয়, এখন কাশ্মীরিদের পক্ষেও তা-ই বলা হবে। এ বাস্তবতা তো সরকার অস্বীকার করতে পারবে না। কাশ্মীর নিয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দূরত্ব বাড়াও স্বাভাবিক হতে পারে, যা পরবর্তী ঘটনার ওপর নির্ভর করবে। সরকারও সচেতন দূরত্বে থাকবে বাংলাদেশের মানুষের সমর্থনের কথা বিবেচনায় রেখে।

এএসএস/এমএআর/এমএস

আরও পড়ুন