ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

কাশ্মীরে মোদি সরকার বড় ধরনের ভুল করছে

সায়েম সাবু | প্রকাশিত: ০৯:১০ পিএম, ২০ আগস্ট ২০১৯

অধ্যাপক এম শাহিদুজ্জামান। কূটনৈতিক বিশ্লেষক। অধ্যাপনা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে। কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে মুখোমুখি হন জাগো নিউজ-এর। ভারতের সংবিধান থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ তুলে দেয়া ‘অবৈধ’ বলে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ‘কাশ্মীরে ভারত যা করছে, তাতে এ অঞ্চলে অশান্তির পথ প্রশস্ত হবে। বিপদ বাড়তে পারে ভারতের জন্যও। দখল আর দমন নীতির মধ্য দিয়ে ভারতের নতুন এক পরিচয় ঘটতে যাচ্ছে বিশ্বে।’ দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে প্রথমটি

জাগো নিউজ : ভারতের সংবিধান থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ তুলে দেয়া হলো। অবরুদ্ধ কাশ্মীর! সেখানকার পরিস্থিতি কীভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন?

শাহিদুজ্জামান : আপনি যদি সম্প্রতি ভারতের পার্লামেন্টে কংগ্রেস নেতা শশী থারুর বক্তব্য শোনেন, তাহলে কাশ্মীরের পরিস্থিতি সহজেই উপলব্ধি করতে পারবেন। শিক্ষিত এ মানুষটি কাশ্মীরের সার্বিক বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করেছেন। তার বক্তব্যের কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেনি ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার। এমনকি ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও নীরব ছিলেন সেদিন পার্লামেন্টে।

৩৭০ অনুচ্ছেদ তুলে দেয়া শুধু কাশ্মীরের জনগণের সঙ্গে বেইমানি নয়, খোদ ভারতের সংবিধানের সঙ্গেও বেইমানি বলে আমি মনে করি। শশী থারু ৩৭০ অনুচ্ছেদ তুলে দেয়াকে সংবিধানের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা বলে উল্লেখ করেছেন। তার মতো অন্য শিক্ষিত বুদ্ধিজীবীরাও এটিকে ভারতের জন্য বড় সংকট বলে দাবি করছেন।

জাগো নিউজ : ভারতের সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা হয়েছে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন তুলে নেয়ার বিরুদ্ধে। কী ফল আসতে পারে?

শাহিদুজ্জামান : ভারতের সুপ্রিম কোর্টের ওপর আস্থা রাখা যায়। সংবিধানে একটি বিষয় দীর্ঘদিন বহাল থাকলে তার একটি স্থায়িত্ব থাকে। জনমতের তোয়াক্কা না করে একেবারে দখল পদ্ধতি অনুসরণ করে একটি বিষয়কে বাতিল করে দেয়া সম্পূর্ণ অবৈধ। ভারতের উচ্চ আদালত আগে এমন একটি ইঙ্গিত দিয়েছে। এ কারণেই সুপ্রিম কোর্টের ওপর কিছুটা আস্থা রাখা যায়।

জাগো নিউজ : জনমতের তোয়াক্কা না করে একতরফাভাবে এমন সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে কী আসলে বিজেপি শক্তির প্রকাশ ঘটাল?

শাহিদুজ্জামান : অনেকটা তা-ই। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে যে, এ ধরনের শক্তি কখনই কার্যকর ফল বয়ে আনতে পারে না। অতীতে আমরা তা-ই দেখেছি। কাশ্মীরে বল প্রয়োগ ভারতের উত্তর-পূর্বেও সংকট বাড়াবে। নরেন্দ্র মোদির শক্তি প্রক্রিয়ার নীতি ভয়ঙ্কর কোনো প্রক্রিয়ার উত্থান ঘটতে পারে!

জাগো নিউজ : ভয়ঙ্কর প্রক্রিয়া বলতে কী বোঝাতে চাইছেন?

শাহিদুজ্জামান : প্রথমত, একটি দেশের ইমেজকে গুরুত্ব দিতে হয়। কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের ইমেজ সংকট বাড়বে। এর চেয়ে ভয়ঙ্কর চিত্র আর হতে পারে না। গণতান্ত্রিক একটি দেশে গণতন্ত্রবিরোধী, অত্যাচারী একটি শক্তির প্রকাশ ঘটবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

ভারত যেভাবে বোঝাতে চাইছে, বিশ্ব মিডিয়া কিন্তু ঠিক সেভাবে বুঝতে চাইছে না। নানা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বিবিসির খবরে কাশ্মীর পরিস্থিতির খানিক চিত্র আমরা দেখতে পেয়েছি। একদিকে ভারতীয় সেনাদের নির্মম অবস্থান, অন্যদিকে কাশ্মীরিদের ক্ষোভ, দ্রোহ প্রকাশ পেয়েছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতের জন্য এ চিত্র অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। আমার মনে হয়, কাশ্মীরে মোদি সরকার বড় ধরনের ভুল করছে।

বিজেপি সরকার হয়তো মনে করেছিল, পাশবিক শক্তি প্রয়োগ করে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করবে। কিন্তু এ সময়ে যে এটি সম্ভব নয়, তা হয়ত বুঝতে পারেনি মোদি-অমিত শাহ। কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি বলেছেন, ‘এখন থেকে ভারতের সেনাবাহিনীকে আমরা দখলদার হিসেবেই দেখব।’ মূলত মেহবুবার এ উক্তিই কাশ্মীরের মানুষের মনোভাব। ওমর আব্দুল্লাহও একই মনোভাব পোষণ করছেন। গোলাম নবী আজাদের মতো ব্যক্তিত্বও ভারতের এ একীভূতকরণ মেনে নিচ্ছেন না। অন্তত গত কয়েক দিনে তার কথা থেকে সেটাই প্রকাশ পেয়েছে।

সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত গণভোট বা জনমত ছাড়া বৈধতা পায় না। ভারতের মিত্র দেশগুলোও এ নীতি সমর্থন করছে না। সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ী নিজেও জম্মু-কাশ্মীরসহ এ ধরনের রাজ্যগুলোতে স্বায়ত্তশাসনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। অথচ সেই অবস্থান থেকে সরে এসে বিজেপি জম্মু-কাশ্মীরের মানুষকে চরমভাবে অপমান করল। জম্মু-কাশ্মীর আনুগত্যের রাজ্য কখনই ছিল না। থাকবে, এটি মনে করারও কোনো কারণ নেই।

জাগো নিউজ : ৭০ বছরের অচলাবস্থা কাশ্মীরে। কেন্দ্রের শাসনে শান্তিও তো আসতে পারে…

শাহিদুজ্জামান : আপনি যে শান্তি দিতে চাইছেন, কাশ্মীরের মানুষ সে শান্তি চাইছে কি-না, সেটাই বড় কথা। কাশ্মীরের মানুষের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা করা হলো না। তাদের মতামত নেয়া হলো না। আপনি জোর করে শান্তি চাপিয়ে দিলেন, আর তা মানুষ এমনিতেই মেনে নেবে, তা মনে করলে বোকামি হবে। তাহলে এতদিন অশান্তি থাকত না কাশ্মীরে। অনেক আগেই তারা ভারতের সঙ্গে মিলে যেত।

নরেন্দ্র মোদি সরকার কাশ্মীরের জনগণকে মূলত অপমান করেছেন। অঙ্গরাজ্যের মর্যাদা দিলে তা-ও হতো। একেবারে ইউনিয়ন টেরিটরি করে ফেলা হয়েছে জম্মু-কাশ্মীরকে।

এএসএস/এমএআর/এমএস

আরও পড়ুন