ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

ঊর্ধ্বমুখী ফলে আছে উদ্বেগও

মুরাদ হুসাইন | প্রকাশিত: ০৯:২৮ পিএম, ১৭ জুলাই ২০১৯

>> অভিন্ন সিলেবাসে হঠাৎ ফল পরিবর্তনই উদ্বেগের কারণ
>> ‘পাসের হার নয়, মান কতখানি বৃদ্ধি পেয়েছে সেটা দেখার বিষয়’
>> প্রশ্নফাঁসের সম্ভাবনা না থাকায় পড়াশোনায় ঝুঁকেছে শিক্ষার্থীরা
>> যারা ভালো প্রস্তুতি নিয়েছে তারাই ভালো করেছে- শিক্ষামন্ত্রী

উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় এ বছর পাসের হার গত বছরের তুলনায় ৭ শতাংশ বেশি। বোর্ডওয়ারি পাসের হার, জিপিএ-৫ এর সংখ্যা, শতভাগ পাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা, বিদেশি কেন্দ্রে পাসের হারসহ সব সূচকে গত বছরের তুলনায় ফল ঊর্ধ্বমুখী। যদিও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি দাবি করেছেন, শিক্ষার্থীদের ভালো প্রস্তুতি ছিল বলেই পাসের হার ও জিপিএ-৫ বেড়েছে। তবে শিক্ষাবিদরা বলছেন, বড় কোনো পরিবর্তন ছাড়া পাসের হার হঠাৎ বেড়ে যাওয়া, উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।

এবার এইচএসসির ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পাসের হার ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। গতবার পাসের হার ছিল ৬৬.৬৪ শতাংশ। ফলে গতবারের চেয়ে পাসের হার বেড়েছে ৭ শতাংশের বেশি। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪৭ হাজার ২৮৬ জন, যা মোট পাসের হারের ৩.৫৪ শতাংশ। গতবার এ হার ছিল ২.২৭ শতাংশ। এবার শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও বেড়েছে। ৯০৯ প্রতিষ্ঠানে শতভাগ পাস করেছে। অন্যদিকে শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কমেছে। মাত্র ৪১ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কেউ পাস করেনি। অথচ গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৫৫টি।

অন্যদিকে আটটি সাধারণ বোর্ডে বিজ্ঞান ও গার্হস্থ্য বিষয়ে ৮৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ; মানবিক, ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা এবং সংগীতে পাস করেছে ৬৫ দশমিক ০৯ শতাংশ এবং ব্যবসায় শিক্ষায় পাস করেছে ৭৩ দশমিক ৫১ শতাংশ শিক্ষার্থী।

দেশের সবগুলো বোর্ডে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা শতকরা হারে এগিয়ে রয়েছেন। মেয়েদের পাসের হার ৭৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং ছেলেদের পাসের হার ৭১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। গত বছর মেয়েদের পাসের হার ছিল ৬৯ দশমিক ৭২ শতাংশ এবং ছেলেদের পাসের হার ছিল ৬৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এ বছর মেয়ে ও ছেলে উভয়েরই জিপিএ-৫ এর হার বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছর মেয়েদের জিপিএ-৫ এর হার ৩.৫৮ শতাংশ এবং ছেলেরা পেয়েছে ৩.৫০ শতাংশ।

সাধারণ আট বোর্ডের মধ্যে এগিয়ে রয়েছে কুমিল্লা বোর্ড। এ বোর্ডে পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ। তবে সবচেয়ে খারাপ করেছে চট্টগ্রাম বোর্ড। চট্টগ্রাম বোর্ডে পাসের হার মাত্র ৬২ দশমিক ১৯ শতাংশ। অন্যদিকে, বিদেশি কেন্দ্রের পাসের হার ৯৪ দশমিক ০৭ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় বেড়েছে।

ফলাফল বিশ্লেষণে কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ছেলে-মেয়েরা বুঝতে পেরেছে কীভাবে পাস করতে হবে। কোচিং বাণিজ্য সম্প্রসারিত হয়েছে। যারা একসময় কোচিং করত না তারাও এখন কোচিং করছে। কলেজগুলোও যেহেতু ব্র্যান্ডি ও ইমেজের প্রতিযোগিতায় নেমেছে, ফলে পাসের হার বৃদ্ধির জন্য তারাও উঠেপড়ে লেগেছে। সবাই তো শতাংশ পাস করলেই খুশি হয়ে যায়। কিন্তু মান কতখানি বৃদ্ধি পেয়েছে সেটাই দেখার বিষয়।’

এ বিষয়ে কথা হয় জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য শিক্ষাবিদ ড. একরামুল কবিরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অভিন্ন সিলেবাস ও অভিন্ন পড়ালেখা হলেও এক বছর ব্যবধানে কী কারণে পরীক্ষার ফল বেড়ে গেল? এটা সকলের কাছে উদ্বেগজনক। এতে নতুন প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে। হঠাৎ করে ফল ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা যেতে পারে।’

তবে তিনি মনে করেন, এবার এইচএসসি পরীক্ষার আগে প্রশ্নফাঁসের গুজব কম ছড়িয়েছে। যেটি ফল ভালো হওয়ার জন্য একটি ইতিবাচক কারণ হতে পারে।

তিনি বলেন, এ বছর গুজব কম ছড়ানোর ফলে পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র পাওয়ার দিকে শিক্ষার্থীরা না ঝুঁকে পড়ালেখার প্রতি মনোযোগ দিয়েছে। অনুকূল পরিবেশে তারা পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পেয়েছে। তবে ধারাবাহিকভাবে প্রতি বছর যদি পাবলিক পরীক্ষার ফলে পাসের হার ও জিপিএ-৫ বাড়তে থাকে, তাহলে সাধারণের মনে একটু হলেও প্রশ্ন জাগতেই পারে!

তবে ঊর্ধ্বমুখী ফলের পেছনের কারণ হিসেবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শিক্ষার্থীদের ভালো প্রস্তুতিকেই দাঁড় করিয়েছেন। বুধবার ফল ঘোষণা উপলক্ষে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘প্রশ্নপত্র সহজ বা কঠিন করায় পাসের হারে প্রভাব পড়েনি। যারা ভালো প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছে তারা ভালো করেছে। যাদের প্রস্তুতি দুর্বল ছিল তারা ভালো ফল পায়নি। সার্বিক দিক থেকে পাসের হার ও জিপিএ-৫ বেড়েছে। যারা খারাপ পরীক্ষা দিয়েছে, তারা দুটিতেই পিছিয়ে পড়েছে।’

এবার সম্পূর্ণ নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। প্রশ্নপত্র ফাঁসেরও কোনো অভিযোগ ছিল না বলে জানান মন্ত্রী।

এমএইচএম/এসআর/এমএআর/এমএস

আরও পড়ুন