ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

অপহরণ-মানবপাচার না-কি অন্যকিছু?

আদনান রহমান | প্রকাশিত: ০৭:৪৬ পিএম, ১১ জুলাই ২০১৯

‘ওরা আমাকে মেরে ফেলবে, আমাকে বাঁচান’ বলে অচেতন হয়ে পড়ে মেয়েটি। এ সময় সে ঠিকমতো কথাও বলতে পারছিল না।

রাজধানীর মুগদার আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্রী ফারাবি হুসাইন। গত ২৯ জুন কদমতলী বাবুবাজার ব্রিজের প্রান্ত থেকে মেয়েটি দৌড়ে এসে একটি ফলের দোকানের সামনে পড়ে যায়। সেখানে ফারাবি জানায়, সেসহ আরও দুটি মেয়েকে অপহরণ করা হয়েছে। যে গাড়িতে তাকে অপহরণ করা হয়েছিল কৌশলে সেটির দরজা খুলে লাফিয়ে পালিয়ে আসে সে।

কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে। কখনও দুর্বৃত্ত, কখনও অপহরণকারী আবার কখনও পাচারকারীরা তাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল বলে দাবি করে। পরবর্তীতে আশ্রয় নেয়া ওই ফলের দোকান থেকে পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন।

দিনদুপুরে রাজধানীর মতো নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টিত একটি স্থান থেকে স্কুলছাত্রী ফারাবি হুসাইনকে অপহরণের (!) মতো ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচিত হয়। তদন্ত শুরু করে থানা পুলিশ। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশও।

মানবপাচারের আশংকায় তদন্তে নামে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি। তবে এখন পর্যন্ত তদন্তের কোনো কূল-কিনারা করতে পারেনি কোনো সংস্থা। কারণ ফারাবি, তার মা, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশের বর্ণনার সঙ্গে কোনো মিল পাওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি তাদের দেয়া তথ্যের সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া তথ্য কিংবা আলামতেরও কোনো মিল পাওয়া যায়নি।

ওই ঘটনায় ফারাবির পরিবারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত মামলা করা হয়নি। এমনকি থানা পুলিশের সঙ্গেও তারা যোগাযোগ করেনি। যে স্থান থেকে ফারাবিকে তুলে নেয়া হয়েছিল বলে দাবি করা হচ্ছে, সেই এলাকাটি সবুজবাগ থানার অভ্যন্তরে। সবুজবাগ থানা পুলিশের সঙ্গেও ফারাবিকে কথা বলতে দেয়নি তার পরিবার।

এদিকে ফারাবির মা জান্নাতুল রায়ানের সঙ্গে যোগাযোগ করে পাওয়া যায় নতুন তথ্য। তিনি জাগো নিউজক বলেন, “আমার মেয়েকে একটি গাড়িতে তুলে নেয় ‘ওরা’। ভেতরে আরও দুটি মেয়ে ছিল। তাদের একজন স্কুলের ইউনিফর্ম পরা, অপরজন ইউনিফর্ম ছাড়া। একজন বয়স্ক মহিলাও ছিল। আমার মেয়েকে গাড়িতে তোলার পর ওই মহিলা তার ওড়না দিয়ে ফারাবির মুখ ঢেকে দেয়। গাড়িতে ওরা পাচার অথবা বিক্রির কথা বলেছিল। এরপর অজ্ঞাত একটি বাড়িতে নিয়ে যায়।”

তিনি আরও বলেন, ওখানে যাওয়ার পর বাকি দুই মেয়ে আমার মেয়েকে ঘরটির পেছন থেকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে। এরপর ফারাবি কেরানীগঞ্জ মডেল টাউনে নিজেকে আবিষ্কার করে। সে একজন ফল ব্যবসায়ীর কাছে সাহায্য চাইলে ওই ব্যবসায়ী তার মোবাইল দিয়ে আমাকে ফোন দেয়। পরে আমরা তাকে নিয়ে আসি।

গাড়ির দরজা খুলে পালিয়ে আসার বিষয়টি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ওটা ঠিক নয়। আশপাশের লোকজন না জেনে, না বুঝে কথাগুলো বলছে।’

এ বিষয়ে সবুজবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘একজন নারী পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে আমি মেয়েটির বাড়ি যাই। কিন্তু তারা আমাদের সঙ্গে কথা বলেনি, এমনকি মেয়েটির সঙ্গেও আমাদের কথা বলতে দেয়া হয়নি।’

‘ওই ঘটনায় তারা কোনো মামলা বা জিডি করেনি। তবে অভিযোগ গুরুতর হওয়ায় আমরা তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি’- বলেন সোহরাব হোসেন।

এদিকে ফারাবিকে গাড়িতে তুলে নেয়ার স্থলের সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেখানে তাকে একটি ছেলের সঙ্গে দেখা গেছে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, যে ছেলেটি ফারাবির সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিল তার নাম সাইফুল। তারা দুজনই স্বাভাবিকভাবে একসঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল। কিছুক্ষণ একসঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিল। এরপর একটি প্রাইভেট কার আসে (সম্ভবত উবারের)। দুজন স্বাভাবিকভাবেই গাড়িতে উঠে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

এ বিষয়ে ওসি সোহরাব হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের ধারণা, তাদের দুজনের (ফারাবি-সাইফুল) আগে থেকেই পরিচয় ছিল। তারা একসঙ্গে গাড়িতে উঠেছে। হয়তো বনিবনা না হওয়ায় কেরানীগঞ্জে গাড়ি থেকে তাকে ফেলে দেয়া হতে পারে। আমরা ফারাবির পরিবারের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না বলে তদন্ত এগোতে পারছি না।’

এদিকে কেরানীগঞ্জে মেয়েটিকে প্রথম দেখা প্রত্যক্ষদর্শী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের মেয়েটি যা বলেছে আমরা সবাইকে তা-ই বলেছি। ও (ফারাবি) বলেছে, গাড়ি থেকে লাফ দিয়েছে। আমরা তা দেখিনি, তার ওপর বিশ্বাস করেই সবাইকে বলেছি। পুলিশের কাছেও আমি তাকে নিয়ে যাই। সেখানে সে একই কথা বলে।’

এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাকের মোহাম্মদ যোবায়ের জাগো নিউজকে বলেন, ‘সে আমাদের যা বলেছে, এতে আমাদের মনে হয়েছে সে সম্ভবত পাচারকারীদের হাতে পড়েছিল।’

এ বিষয়ে প্রথম দিকে মানবপাচারের তথ্য পেয়ে তদন্ত শুরু করে সিআইডি। তবে সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সমমর্যাদার এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, মানবপাচারের কোনো তথ্য বা প্রমাণ না পাওয়ায় আপাতত তারা তদন্ত করছেন না।

এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপির) ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আপাতত তদন্তে জানা গেছে, তার বন্ধু অথবা পূর্বপরিচিত সাইফুলের সঙ্গে সে বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে গিয়েছিল। তবে সেখানে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির শিকার হওয়ায় সে ফিরে আসে। ফারাবির মা দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। সে তার মায়ের প্রথম স্বামীর ঘরের সন্তান। হয়তো সত্য ঘটনাটি তার মা জানেন, কিন্তু বাবা জানেন না। তাই তারা দুজনই একেক সময় একেক রকম তথ্য দিচ্ছেন।’

মতিঝিল থানার উপ-কমিশনার (ডিসি) আনোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। সত্য উদঘাটনের চেষ্টা করছি। কোনো গ্রুপ বা চক্র যদি এর সঙ্গে জড়িত থাকে তাদের শনাক্ত করে আমরা আইনের আওতায় আনব-ই।’

এআর/এমএআর/এমকেএইচ

আরও পড়ুন