ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

সরকারি চাকরি আইন হলেও বাস্তবায়ন কত দূর?

মাসুদ রানা | প্রকাশিত: ০১:৩৪ পিএম, ০৯ জুলাই ২০১৯

বহু বাধা পেরিয়ে ‘সরকারি চাকরি আইন- ২০১৮’ প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু আট মাস পার হলেও আইনটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার।

২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর সরকারি চাকরি আইনের গেজেট জারি হয়। সংবিধানে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের জন্য আইন প্রণয়নে বাধ্যবাধকতা থাকলেও ইতোপূর্বে কোনো সরকারই এ আইন প্রণয়ন করেনি। সরকারগুলো বিধি, নীতিমালা ও প্রয়োজন মতো নির্দেশনাপত্র জারি করে সরকারি কর্মচারীদের পরিচালনা করছে।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন গত দুটি সরকারের সময় আইনটি করার জন্য কয়েক দফা খসড়া প্রণয়ন হয়। কিন্তু বিভিন্ন বিধান নিয়ে বিতর্ক ওঠায় সেসব উদ্যোগ ভেস্তে যায়।

প্রশাসন সংশ্লিষ্টরা জানান, দলীয়করণ, দুর্নীতি, আন্তঃক্যাডার বৈষম্যসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত জনপ্রশাসন। সরকারি চাকুরেদের বিষয়ে সার্বিক একটি আইন থাকলে প্রশাসন এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সেটা খুবই সহায়ক হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সরকারি কর্মচারী আইন বাস্তবায়ন হলে ১৯৭৪ সালের অবসর আইন, ১৯৭৫ সালের চাকরি (পুনর্গঠন ও শর্তাবলী) আইন, ১৯৮৯ সালের সরকারি কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ, সরকারি কর্মচারী, ১৯৮২ সালের গণকর্মচারী শৃঙ্খলা (নিয়মিত উপস্থিতি) অধ্যাদেশ, ১৯৮৫ সালের গণকর্মচারী (চাকরিচ্যুতি) অধ্যাদেশ এবং ২০১৬ সালের উদ্বৃত্ত সরকারি কর্মচারী আত্তীকরণ আইন বাতিল হয়ে যাবে।

সরকারি চাকরি আইনে শিক্ষানবিসকাল ও চাকরি স্থায়ীকরণ বিধি, প্রেষণ ও লিয়েন বিধি, বৈদেশিক বা বেসরকারি চাকরি গ্রহণ বিধি, উদ্বৃত্ত সরকারি কর্মচারী আত্তীকরণ বিধি, প্রশিক্ষণ নীতিমালা, উপস্থিতি বিধি, কর্মচারীর আচরণ ও শৃঙ্খলা বিধি করার কথা বলা হয়েছে।

আইনগুলো বাতিল হলে এবং বিধিগুলো না করে নতুন আইন বাস্তবায়নে গেলে প্রশাসনে জটিলতা সৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহম্মদ এ প্রসঙ্গে জাগো নিউজকে বলেন, ‘সরকারি চাকরি আইনটি কার্যকরের জন্য বিধি তৈরি হচ্ছে। বিধিগুলো তৈরি ছাড়া আইন বাস্তবায়নে জটিলতা সৃষ্টি হবে। কারণ নতুন সরকারি চাকরি আইন বাস্তবায়নে গেলে আগের কতগুলো আইন বাতিল হয়ে যাবে, সেগুলো না থাকলে আমরা সমস্যায় পড়ে যাব।’

সচিব বলেন, ‘বিধিগুলো দ্রুতই হয়ে যাবে, কারণ বিধিমালা তৈরির কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। এছাড়া ক্যারিয়ার প্ল্যানিং নীতিমালাও হচ্ছে। স্বল্প সময়, আশা করছি এ বছর শেষ হওয়ার আগেই সরকারি চাকরি বিধি বাস্তবায়নের ঘোষণা দেব।’

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (বিধি) আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘সরকারি কর্মচারী আইনের অধীন বিভিন্ন বিধিমালা প্রণয়ন কার্যক্রম বর্তমানে চলমান। ইতোমধ্যে উদ্বৃত্ত সরকারি কর্মচারী আত্মীকরণ বিধিমালা ও সরকারি কর্মচারী (নিয়মিত উপস্থিতি) বিধিমালা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। গত প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় বিধিমালা দুটো অনুমোদন পেয়েছে।’

এছাড়া সরকারি চাকরি আইনে কয়েকটি ধারা নিয়ে বিভিন্ন মহলের আপত্তি রয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, কিছু না কিছু আপত্তি সব সময়ই থাকবে। আইনটি বাস্তবায়নে গেলে তখন এর সুবিধা-অসুবিধাগুলো বিবেচনা করে পরবর্তী সময়ে সরকার এটি সংশোধন-পরিমার্জন করতে পারবে।

সরকারি চাকরি আইনে ৬২টি ধারা সংবলিত ১৩টি অধ্যায় আছে। এ আইনে সরকারি কর্মচারীদের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে। আইনে সরাসরি জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা ও উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার বিধান রাখা হয়েছে। মেধা, দক্ষতা, জ্যেষ্ঠতা, প্রশিক্ষণ ও সন্তোষজনক চাকরি বিবেচনাক্রমে পদোন্নতি প্রদানের বিধানও রাখা হয়েছে।

কোনো সরকারি কর্মচারীকে ফৌজদারি মামলায় গ্রেফতারে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণের বিধান উল্লেখ রয়েছে সরকারি চাকরি আইনে। আদালতে দণ্ডিত ও চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়া কোনো ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি অব্যাহতি দিতে পারবেন এবং অনুরূপ আদেশের ফলে ওই কর্মচারী চাকরিতে পুনর্বহাল হতে পারবেন বলে আইনে উল্লেখ রয়েছে।

গত ২৩ জুন ‘জনপ্রশাসনে শুদ্ধাচার : নীতি ও চর্চা’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ (টিআইবি)। গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের সংবাদ সম্মেলনে সরকারি কর্মচারী আইনের কতিপয় মৌলিক ধারার সমালোচনা করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, সরকারি চাকরি আইন নামটিই সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আইনটির নাম হওয়ার কথা ছিল জনপ্রশাসন আইন। তাই আমরা আইনটির নাম সংশোধনের দাবি জানাই।

প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ফৌজদারি অপরাধে গ্রেফতারের জন্য সরকারের পূর্বানুমতি গ্রহণের বিধিও সম্পূর্ণরূপে সংবিধান পরিপন্থী ও বৈষম্যমূলক। ওই বিধিও বাতিল করতে হবে। এছাড়া এ আইনের ৬.১ ধারায় প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমস্ত কর্তৃত্ব সরকারের কাছেই রাখা হয়েছে, যা ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী’ এ সাংবিধানিক অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’

তাই ‘সরকারি চাকরি আইন- ২০১৮’ এ ‘সরকারি’ শব্দটির পরিবর্তে ‘প্রজাতন্ত্র’ শব্দটি ব্যবহার করে সংশোধনের সুপারিশ করে টিআইবি।

আরএমএম/এমএআর/পিআর

আরও পড়ুন