ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

ক্রসফায়ারের প্রতি সমর্থন অবশ্যই উদ্বেগের

সায়েম সাবু | প্রকাশিত: ১০:২৫ পিএম, ০৩ জুলাই ২০১৯

বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাব্বির হোসেন ওরফে নয়ন বন্ড নিহতের ঘটনায় ফের আলোচনায় ‘ক্রসফায়ার’। এ ঘটনার পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে মতামত প্রকাশ পাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।

ক্রসফায়ার প্রসঙ্গ নিয়ে জাগো নিউজ’র মুখোমুখি হন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ- টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। এ বিশ্লেষকের মতে, ‘বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ড সমাজ, রাষ্ট্রে শান্তি বয়ে আনতে পারে না। বরং ক্রসফায়ারের প্রতি সমর্থন মানে বিচার ব্যবস্থার ওপর মানুষের অনাস্থা প্রকাশ পাওয়া।‘ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।

আরও পড়ুন >> নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত

জাগো নিউজ : ফের ক্রসফায়ার নিয়ে আলোচনা। বরগুনার যুবক রিফাতের খুনি নয়ন বন্ড ক্রসফায়ারে মারা গেলেন। এ নিয়েও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। আপনি কীভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন?

ইফতেখারুজ্জামান : ক্রসফায়ারের সংস্কৃতি আমরা বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সময় তীব্রভাবে লক্ষ্য করলাম। ক্রসফায়ারের নামে বিচারহীনতার সংস্কৃতি রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার প্রয়াস আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি।

এর দুটি নেতিবাচক দিক আছে। প্রথমত, অপরাধী ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হলেন। দ্বিতীয়ত, অপরাধীর সঙ্গে জড়িত বা তার পৃষ্ঠপোষকের বিষয়টি আড়ালে থেকে গেল। অর্থাৎ ক্রসফায়ারের মাধ্যমে পৃষ্ঠপোষকদের রক্ষার প্রবণতা চলছে কি-না, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অপরাধের সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালী মহলকে সুরক্ষা দিতেই ক্রসফায়ারের ঘটনা বলে অনেকে মনে করেন।

জাগো নিউজ : বিচার নিয়ে তো সংশয় থাকেই…

ইফতেখারুজ্জামান : আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দায়িত্বে থাকেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তারা বিচারব্যবস্থা থেকে সরে এসে সোজা পথে হাঁটতে শুরু করেছেন।

ক্রসফায়ার নিয়ে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এটাকে এমনভাবে প্রচার করা হয় যে সাধারণ মানুষ ক্রসফায়ারকে একধরনের বাস্তবতা বলে মেনে নিচ্ছে। এর ভয়াবহতা জেনে বা না জেনেই সমর্থন দিচ্ছেন। ক্রসফায়ারের প্রতি সমর্থন অবশ্যই উদ্বেগের।

জাগো নিউজ : সময়ের বাস্তবতা তো স্বীকার করতেই হয়…

ইফতেখারুজ্জামান : বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার পাওয়ার লক্ষ্যে। অপরাধ করলেও মানুষ যেন বিচার থেকে বঞ্চিত না হয়, স্বাধীনতার মানে এখানেও। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ক্রসফায়ার নয়, বিনা বিচারে হত্যা নয়। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।

আরও পড়ুন >> আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে হত্যা করে না : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

জাগো নিউজ : মানুষ তো সমর্থন দিচ্ছে, ক্রসফায়ারের পক্ষে মত দেয়া মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে…

ইফতেখারুজ্জামান : বাস্তবতার কথা বলে বিনা বিচারে হত্যার সংস্কৃতি গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার জন্য হুমকি। ক্রসফায়ারে নিহতের লাশ দেখার জন্য পুলিশ ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। জনসমর্থন আদায়ের জন্য বিশেষভাবে প্রচার করা হচ্ছে। এতে দুটি ঘটনা ঘটছে। প্রথমত, মানুষ বিচারহীনতাকে মেনে নিচ্ছে। দ্বিতীয়ত, আইনের প্রতি মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলছে। ফলে মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নেবে।

এখানে একটি বিষয় আমি উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি। ক্রসফায়ারের প্রতি মানুষের সমর্থন ভয়ঙ্করভাবে বাড়ছে। প্রশ্ন হচ্ছে এখানেই। এ ‘সমর্থন’ বিশেষ উদ্দেশ্যে বানানো হচ্ছে কি-না? এটা গভীরভাবে ভাবনার বিষয়, বিশেষ কোনো মহল এর পেছনে কাজ করছে কি-না?

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেভাবে ক্রসফায়ারের পক্ষে অভিমত প্রকাশ পাচ্ছে, তা নিয়ে আমি প্রশ্ন না তুলে পারছি না।

জাগো নিউজ : তাহলে এ পরিস্থিতি কোথায় নিয়ে যাচ্ছে সমাজকে?

ইফতেখারুজ্জামান : সমাজ কোথায় যাচ্ছে, তা নৃশংসতা দেখলেই অনুমান করা যায়। ক্রসফায়ারে সমাধান হলে একটি খুন বা ধর্ষণও হতো না। এসবের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের মৌলিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আস্থা কমে যাচ্ছে। এ কারণে নির্বিচারে মানুষ হত্যা মানুষ মেনে নিচ্ছে। এই মেনে নেয়া হচ্ছে একটি ভুল ধারণা থেকে। বিচারের দীর্ঘসূত্রতা থেকে মানুষ ক্রসফায়ারের প্রতি সমর্থন জোগাচ্ছে।

জাগো নিউজ : এ প্রশ্নে তো মানুষ আপাতদৃষ্টিতে স্বস্তি প্রকাশ করতেই পারে?

আরও পড়ুন >> একরামসহ সব হত্যার নির্বাহী তদন্ত হবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

ইফতেখারুজ্জামান : মাথাব্যথা হলে ওষুধ খেতে হয়। মাথা কেটে ফেলা কোনো সমাধান নয়। মানুষ কেন বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারাচ্ছে? কী কী কারণে মানুষ বিচার পাচ্ছে না? বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতা কী? এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিলেই সমাধানের পথ বের হবে। ক্রসফায়ার নিয়ে স্বস্তি প্রকাশ মানে মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলা।

সচেতনতার ঘাটতি থেকেই মানুষ দ্বৈতনীতি অবলম্বন করছে। একদিকে খুনের বিচার চায়, আবার বিনা বিচারে মানুষ হত্যার সমর্থন দেয়। বিচারহীনভাবে মানুষকে হত্যা করা সমাজে কখনই শান্তি আনতে পারে না। এমন পদ্ধতি ব্যবহার করে যারা বিনা বিচারে মানুষ হত্যা করছেন, তাদের জন্যও এটা বুমেরাং হবে একদিন। অতীতে আমরা তা-ই দেখেছি।

এএসএস/এমএআর/বিএ

আরও পড়ুন