ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

পরামর্শকদের ‘অনীহায়’ কয়লা খনি প্রকল্পে ধীরগতি

প্রদীপ দাস | প্রকাশিত: ০৭:২৪ পিএম, ২৫ জুন ২০১৯

দেশের একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার একটি এবং জার্মানির দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএমসিএল)।

তবে বিদেশি ওই তিন প্রতিষ্ঠান পরামর্শকদের নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে কাজে অনীহা দেখাচ্ছে। এছাড়া পাঁচ কারণে প্রকল্পটি যথা সময়ে বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। প্রকল্প বাস্তবায়ন দেরি হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ কর্পোরেশনের (পেট্রোবাংলা) প্রতিষ্ঠান বিসিএমসিএলের ওই প্রকল্পের নাম ‘ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি ফর ডেভেলপমেন্ট অব দিঘীপাড়া কোল ফিল্ড অ্যাট দিঘীপাড়া, দিনাজপুর, বাংলাদেশ’। এটি বাস্তবায়নে খরচ হচ্ছে ১৭৯ কোটি ৮৮ লাখ ২০ হাজার টাকা।

চুক্তিবদ্ধ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান তিনটি হলো- জার্মানির এমআইবিআরএজি কনসালটিং ইন্টারন্যাশনাল জিএমবিএইচ, জার্মানির এফইউজিআরও কনসালটিং জিএমবিএইচ এবং অস্ট্রেলিয়ার রেঞ্জ পিনকক মিনারকো লিমিটেড।

barapukuria-02

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পটি ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ৩০ জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা। ৩০ মাসের মধ্যে বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়ে ইতোমধ্যে সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বিসিএমসিএল। ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়ানোর এ আবেদন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিদেশি পরামর্শক নিয়োগে পাঁচ মাস সময় ব্যয় হওয়া, নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ দেখিয়ে ইউরোপীয় ও অস্ট্রেলিয়ান পরামর্শকদের প্রকল্প এলাকায় অবস্থানে অনীহা প্রকাশ, ড্রিলিং রিগসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ভারত থেকে বাংলাদেশে মবিলাইজেশনে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হওয়া এবং কারিগরি জটিলতার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হয়েছে।

কারিগরি জটিলতাটি হলো- বোরহোল ড্রিলিং করে ভূ-গর্ভে অস্বাভাবিক ভূতাত্ত্বিক জটিলতার সম্মুখীন হওয়া। এ প্রকল্পের মূল কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ৬০টি বোরহোল ড্রিলিং, যার মধ্যে ১০টি হাইড্রো জিওলজিক্যাল বোরহোল।

আইএমইডির ওই প্রতিবেদনে এটি ভালো অগ্রগতিসম্পন্ন নয় বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

barapukuria-03

এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো, দিনাজপুরের দিঘীপাড়ার ২৪ বর্গকিলোমিটার এলাকার ওপর বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স) পরিচালিত ২-ডি সার্ভের মাধ্যমে নির্ণীত ৮৬৫ মিলিয়ন টন কয়লার মজুদ নিশ্চিত করা। আর কয়লা মজুদ এলাকার সেন্ট্রাল পার্টের ছয় বর্গকিলোমিটার এলাকার ওপর বার্ষিক ৩ দশমিক ০৮৬৫ মিলিয়ন টন কয়লার উত্তোলন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি খনি নির্মাণের সম্ভাব্যতা জরিপ পরিচালনা করা।

এছাড়া প্রস্তাবিত মাইনিং এলাকার প্রকৃত রিজার্ভ, মাইনিং পদ্ধতি, বাৎসরিক উৎপাদন ইত্যাদি নির্ধারণ করা। অর্থনৈতিকভাবে প্রকল্পটি লাভজনক কি না- তা নির্ধারণ করা। খনি নির্মাণের লক্ষ্যে ঠিকাদার নিয়োগের জন্য একটি দরপত্র দলিল প্রস্তুতসহ বেশকিছু কাজ সম্পন্ন করা।

জাগো নিউজের পক্ষ থেকে প্রকল্পের অগ্রগতি ভালো না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় বিসিএমসিএল উপ-মহাব্যবস্থাপক ও প্রকল্প পরিচালক খান মো. জাফর সাদিকের কাছে। তিনি বলেন, ‘এটা উনারা (আইএমইডি) ভুল করে করেছেন। প্রোপারলি (যথাযথভাবে) তথ্যগুলো উনারা ওখানে (প্রতিবেদনে) তুলতে পারেননি। উনাদের কাছে আপডেট ইনফরমেশনটা (হালনাগাদ তথ্য) ছিল না। এটা ধীরগতি সম্পন্ন প্রকল্প নয়। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়ে গেছে।’

তবে আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্প শুরু থেকে গত মার্চ পর্যন্ত এর আর্থিক অগ্রগতি ৪৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। ‘আইএমইডি ভুল করেছে’ প্রকল্প পরিচালক জাফর সাদিকের এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে খোঁজ নেয়া হয় আইএমইডিতে। সেখানকার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, প্রকল্প পরিচালকের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

barapukuria-04

গত ২৪ এপ্রিল আইএমইডির এক প্রতিনিধি দল প্রকল্পটি পরিদর্শন করেছে বলেও জানা যায়।

জাফর সাদিক আরও বলেন, ‘ওই পাঁচটা কারণ ছিল শুরুর দিকে। প্রকল্পটা ২০১৭ সালে যখন শুরু হয়, তখন প্রথম দিকে তাদের (বিদেশি পরামর্শক) ধারণা ছিল না যে, কতটা নিরাপদ, কতটা অনিরাপদ। এটা তারা বুঝে উঠতে পারেননি। এ কারণ দেখিয়ে তারা প্রথমে গড়িমসি করেছিল। পরবর্তীতে তারা এখনও রয়েছেন এবং কাজও করছেন। কাজ না করলে তো ৭০ ভাগ অর্জন সম্ভব হতো না। সুতরাং এখানে আর ওই ধরনের সমস্যা নাই।’

আইএমইডির দায়িত্বশীল ওই কর্মকর্তা জানান, ২০১৬ সালের জুলাইয়ে হলি আর্টিসানে জঙ্গি হামলার পর বাংলাদেশে অবস্থান করতে বিদেশিদের অনীহা তৈরি হয়। সেটার প্রভাবই পড়েছে এ প্রকল্পে।

পিডি/এনডিএস/এমএআর/পিআর

আরও পড়ুন