ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

কমিটির আগেই ‘অভিভাবক’ চায় ছাত্রদল

খালিদ হোসেন | প্রকাশিত: ০৭:৫৬ পিএম, ৩০ এপ্রিল ২০১৯

বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নতুন আহ্বায়ক কমিটির তোড়জোড় শুরু হয়েছে। কমিটি গঠনের আগে বিএনপির ছাত্রবিষয়ক ও সহ-ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক পদ পূরণের জোর দাবি উঠেছে সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিশ্বস্ত দু’জনকে সুনির্দিষ্টভাবে এ দায়িত্বে চান ছাত্রদল নেতারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা বলেন, কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতা নির্বাচনের লক্ষ্যে আগামী মে মাসের মধ্যেই আহ্বায়ক কমিটি দেয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। কিন্তু এ কমিটি অনেককে হতাশ করবে। কারও কারও জন্য হবে হতাশাজনক। কারণ ৭৩৬ সদস্যের কমিটির সহ-সভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ অনেকেই সদস্য হবেন- এটাই অস্বস্তিদায়ক।

তারা বলছেন, বর্তমান স্বৈরাচার সরকারের সময়ে বহু ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে ছাত্রদল থেকে যদি সম্মানজনক বিদায় না হয় সেটা হবে কষ্টের। হাইকমান্ডের উচিত হবে এক বছরের জন্য নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়া। তাহলে অনেকে সম্মানজনক বিদায় নিতে পারবেন।

তারা দাবি করেন, কমিটি গঠনের আগে বিশ্বস্তদের ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক ও সহ-ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক পদে দায়িত্ব দিতে হবে। কমিটি দেয়ার আগে ছাত্রদলের অভিভাবক নির্বাচিত করে তারপর সার্বিকভাবে সাবেক ছাত্রনেতাদের নিয়ে কমিটি চূড়ান্ত করা হলে সেটা ফলপ্রসূ হবে। অন্যথায় ছাত্রদল নিয়ে ভুল সিদ্ধান্তের ফলে বিএনপিকে দীর্ঘমেয়াদে খেসারত দিতে হবে।

অভিভাবকশূন্য থাকায় ছাত্রদলের বর্তমান কমিটিও নিষ্ক্রিয় রয়েছে। গত ১ জানুয়ারি ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীও পালন করতে পারেনি নেতাকর্মীরা। সংগঠনটিকে আন্দোলনমুখী ও শক্তিশালী করতে হলে এ সংগঠনের ভাগ-বাটোয়ারা বন্ধ করতে হবে। এটা বন্ধ করতে হলে ছাত্রবিষয়ক ও সহ-ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে তারেক রহমানের বিশ্বস্ত দু’জনকে পদে বসাতে হবে; যাদের বর্তমান ছাত্রনেতাদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।

ছাত্রদল নেতাদের প্রশ্ন, কমিটি গঠনের জন্য সার্চ কমিটি করা হয়েছে। কিন্তু এ কমিটি একাধারে ১৫ দিন মিটিং করেও কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না। কারণটা কী?

তারা বলেন, কাউন্সিল সামনে রেখে ছাত্রদল সরগরম থাকলেও শঙ্কাও রয়েছে। কারণ কেন্দ্রীয় কমিটির সবাইকে ভোটার করা হবে। কমিটির মধ্যে অন্তত আড়াইশ’ থেকে ৩০০ জন আছেন যারা একদমই অপরিচিত। আন্দোলন-সংগ্রামে তারা কখনও উপস্থিত ছিলেন না। তারা বিশেষ ভাই মহলের হাত ধরে এ কমিটিতে যুক্ত হয়েছেন। এ আড়াইশ’ থেকে ৩০০ ভোটার নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে পারবে। নতুন কমিটিও ওই তিন ভাইয়ের দ্বারা প্রভাবতি হবে। ফলে ভালো নেতৃত্ব উঠে না-ও আসতে পারে। এ কারণে এক বছর মেয়াদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে পরে কাউন্সিল দিলে তা ফলপ্রসূ হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সংগঠনের নতুন কমিটি গঠনের জন্য ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শামসুজ্জামান দুদুর নেতৃত্বে সাবেক ছাত্রনেতাদের নিয়ে একটি সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে বিএনপির বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি শফিউল বারী বাবু, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম, ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি রাজিব আহসান, সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানসহ সাবেক ছাত্রদল নেতারা রয়েছেন। এ সার্চ কমিটির নেতারা কয়েক দফা তারেক রহমানের সঙ্গে এ বিষয়ে স্কাইপের মাধ্যমে বৈঠক করেছেন। সার্চ কমিটির নেতারা ইতোমধ্যে ছাত্রদলের পদপ্রত্যাশীদের জীবন বৃত্তান্ত তারেক রহমানের কাছে পাঠিয়েছেন।

ছাত্রদলের নতুন কমিটির শীর্ষপদে আকরামুল হাসান মিন্টু, এজমল হোসেন পাইলট, নাজমুল হাসান, আলমগীর হাসান সোহান, আব্দুল ওহাব, আবু আতিক আল হাসান মিন্টু, ইখতিয়ার কবির, মামুন বিল্লাহ, জহিরুল ইসলাম বিপ্লব, আসাদুজ্জামান আসাদ, করিম সরকার, মিয়া মো. রাসেল, মেহবুব মাসুম শান্ত, মফিজুর রহমান আশিক, নূরুল হুদা বাবু, বায়েজীদ আরেফিন, নাহিদুল ইসলাম, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, কাজী মোক্তার হোসেন, মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়া, আবুল বাশার, আরজ আলী শান্ত প্রমুখ আলোচনায় রয়েছেন।

ছাত্রদলের শীর্ষ পদগুলোতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে একজন নারী নেতৃত্ব রাখার দাবি জানিয়ে সংগঠনটির সহ-সাধারণ সম্পাদক আরিফা সুলতানা রুমা জাগো নিউজকে বলেন, ‘নির্দিষ্ট সময়সীমার পর যদি কমিটি হতো তবে আজ বয়স ও নেতৃত্বের যে সমস্যা দেখা দিয়েছে সেটা হতো না। আমার মতে, এক বছর মেয়াদের পূর্ণাঙ্গ নতুন কমিটি গঠন করা হলে সংগঠনের মধ্যে বয়স নিয়ে কোনো সমস্যা থাকবে না। তা না হলে সুদীর্ঘ ১৩ বছর ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বিরোধী দলে থেকে যে কাজ করে যাচ্ছেন, তারা তো একপ্রকার জিরো হয়ে যাবে।’

ছাত্রদলের নতুন কমিটি প্রসঙ্গে সহ-সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট বলেন, ‘কমিটি নিয়ে আলোচনা চলছে। সুন্দর, ভালো, সময়োপযোগী নেতৃত্ব আসুক- এটাই আমার প্রত্যাশা।’

অপর সহ-সভাপতি নাজমুল হাসান বলেন, ‘দ্রুত কমিটি হওয়া প্রয়োজন। কাউন্সিল হোক আর সিলেকশন হোক, তারেক রহমান যে কমিটি দেবেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি সেই কমিটির ওপর আস্থাশীল।’

ছাত্রদলের কমিটি গঠন প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সার্চ কমিটির প্রধান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘দীর্ঘদিন ছাত্রদলের সম্মেলন না হওয়ায় একটা জট লেগেছে। সেটা কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যায় এবং রেগুলার ছাত্রদের দিয়ে কীভাবে ছাত্রদলের কমিটি গঠন করা যায়- সেটা নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

শিগগিরই নতুন কমিটি ঘোষণা হচ্ছে কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। যাতে মে মাসের মধ্যেই একটা কিছু করা যায়।’

ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক ও সহ-ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শূন্য থাকায় কোনো সঙ্কটে পড়তে হবে কিনা-জানতে চাইলে দুদু বলেন, ‘না, এখানে সাবেক ছাত্রনেতারা রয়েছেন, পার্টির দায়িত্বশীল নেতৃত্বও রয়েছেন। সে রকম সমস্যা হবে বলে মনে হয় না। ’

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর রাজিব আহসানকে সভাপতি, মামুন-অর রশিদ মামুনকে সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের ১৫৩ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ৭৩৬ সদস্যের ‘ঢাউস’ কমিটি গঠন করা হয়।

কেএইচ/এনডিএস/এমএআর/এমএস

আরও পড়ুন