ভোটের মাধ্যমে ‘পুনর্গঠন’ চায় তৃণমূল বিএনপি
গণতান্ত্রিক উপায়ে ভোটের মাধ্যমে দলের সর্বস্তরে পুনর্গঠন হবে- এমনটা প্রত্যাশা করছেন বিএনপির তৃণমূল নেতারা। তাদের দাবি, চাপিয়ে দেয়া পুনর্গঠন হলে তা দিয়ে কাঙ্ক্ষিত অর্জন সম্ভব হবে না। তবে দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, সবার মতামতের ভিত্তিতে দল পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত হচ্ছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের পর বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র নেতারা দল পুনর্গঠনের তাগিদ অনুভব করেন। সে লক্ষ্যে লন্ডনে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে স্কাইপের মাধ্যমে সংলাপ করছেন। ইতোমধ্যে বিএনপির কয়েকটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন পুনর্গঠন হয়েছে। মূল দলের বেশ কয়েকটি ইউনিটও এ প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
আরও পড়ুন > ঈদের পর সরকারকে ১০ নম্বর হুঁশিয়ারি!
দলের এ পুনর্গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে শঙ্কা ও সম্ভাবনা- দুটোই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির এক নেতা জাগো নিউজকে বলেন, পুনর্গঠন প্রক্রিয়া দলে শুরু হয়েছে, উদ্যোগটা ভালো। তবে, যে প্রক্রিয়ায় শুরু হয়েছে সেটা সন্তোষজনক নয়। এটা নিয়ে সবার মধ্যে শঙ্কা রয়েছে।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে নয়াপল্টনে ঢাকা জেলা বিএনপির নতুন কমিটির পরিচিতি সভায় মারামারির ঘটনা ঘটে। ঢাকা জেলা বিএনপির কমিটি স্থানীয় নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে হয়নি বলে ওই পরিস্থিতি তৈরি হয়। মতামতের ভিত্তিতে হলে কমিটি অনেক শক্তিশালী হতো।
অভিযোগ উঠেছে, ঢাকা জেলা কমিটিতে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের এক নেতা এবং উপদেষ্টা পরিষদের এক নেতার ভাগাভাগির মাধ্যমে গঠিত হয়। ফলে কমিটি শক্তিশালী হয়নি। আবার পাবনা জেলা বিএনপির কমিটিও বিএনপির এক শীর্ষনেতার নামে ঠিকাদারি দেয়া হয়েছে। বঞ্চিতরাও তাদের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট। ওই কমিটি নিয়েও সম্প্রতি নয়াপল্টনে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। স্থানীয় নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে যদি কমিটি গঠন না হয় তাহলে সারাদেশেই ঢাকা ও পাবনা জেলা কমিটির মতো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে- যোগ করেন তিনি।
ঢাকা মহানগর বিএনপির এক নেতা বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের পর থেকে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটির আকার অনেক বড় হয়েছে। কিন্তু রাস্তায় নামার জন্য নেতা খুঁজে পাওয়া যায় না। ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল বা বিএনপি, যে সংগঠনের কথা বলা হোক না কেন আকার বেড়েছে সঠিক কিন্তু নেতাদের মূল্যায়ন হয়নি। দলের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতার নেতৃত্বে একটা সিন্ডিকেট ‘ভাইয়া কমিটি’ প্রবর্তন হয়েছে। এখনও সেই পরিস্থিতি চলছে।
আরও পড়ুন > খালেদা জিয়ার মুক্তি কি প্যারোলেই?
অনেক নেতাকর্মী তিন বেলা খেতে পারেন না, মামলা-হামলায় জর্জরিত। আর সেই সিন্ডিকেটের নেতারা তারকা হোটেলের খাবার আর বিদেশ থেকে মিনারেল ওয়াটার এনে মুখ ধোয়ার কাজে ব্যবহার করছেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে, প্যারোল নিয়ে নানা কূটচাল চলছে। এ নিয়ে দলের সিনিয়র বা ইউনিট বা অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বশীল অনেক নেতাই অন্ধকারে। যে কারণে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাহী কমিটির সভা করতে ভয় পাচ্ছেন। কারণ নির্বাহী কমিটির সভায় নানা প্রশ্ন উঠবে যার সদুত্তর ওইসব নেতা দিতে পারবেন না। তাই হাইকমান্ডের উচিত হবে এসব রঙিন পাঞ্জাবিওয়ালা নেতাদের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে দলের সর্বস্তরে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি করা- যোগ করেন তিনি।
দলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে কী ভাবছেন- জানতে চাইলে বিব্রত বোধ করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোদাররেস আলী ইছা। তিনি বলেন, ‘বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। দলের গঠনতন্ত্র রয়েছে। গণতান্ত্রিক উপায়ে গঠনতন্ত্র অনুসারে দল পুনর্গঠন হবে- এটাই স্বাভাবিক। এখানে পুনর্গঠন নিয়ে ভাববার প্রশ্ন আসছে কেন?’
দলের পুনর্গঠন নিয়ে প্রত্যাশার কথা জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির নেতা প্রকৌশলী টি এস আইউব বলেন, ‘গণতান্ত্রিক উপায়ে ভোটের মাধ্যমে দলের সর্বস্তরে পুনর্গঠন হবে, এটাই প্রত্যাশা করি।’
পুনর্গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে তৃণমূল নেতাদের মধ্যে কোনো দ্বিমত আছে কিনা- জানতে চাইলে দলটির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘আমার কাছে তো কেউ এমন এক্সপ্রেশন করে নাই।’
তিনি বলেন, ‘তৃণমূল নেতাদের চাহিদার সঙ্গে আমাদের অ্যাক্টিং চেয়ারম্যানসহ সবাই একমত যে, ওয়ার্ড-ইউনিয়ন-থানা/উপজেলা তারপর জেলা, তারা নিজেরাই তাদের নেতৃত্ব নির্বাচন করবে।’
আরও পড়ুন > নির্বাহী কমিটির সভা নিয়ে চাপে বিএনপি
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন, জেলা এবং আমাদের সঙ্গেও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ বিষয়ে কথা বলছেন এবং সবকিছু আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় কমিটি পুনর্গঠন হচ্ছে। কোনো জায়গায় আহ্বায়ক কমিটি করে দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন অঙ্গদলের আহ্বায়ক কমিটি হচ্ছে। তারা সম্মেলন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করবে।’
এ নিয়ে তৃণমূল নেতাদের কোনো বিরোধিতা রয়েছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনো প্রশ্নই ওঠে না। বরং এ পুনর্গঠন তৃণমূলের দাবি।’
কেএইচ/এমএআর/জেআইএম