ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

পেশায় সৈনিক, ছড়াচ্ছেন শিক্ষার আলো

সায়েম সাবু | প্রকাশিত: ০৯:৩২ পিএম, ১২ এপ্রিল ২০১৯

স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। দারিদ্র্যের কষাঘাতে সে স্বপ্ন ফিকে হয়ে আসে তারুণ্যেই। সবে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। তখনই বাবার ধান-চালের ব্যবসায় ভাটা পড়ে প্রায় নিঃস্ব হওয়ার অবস্থা। বাড়ির বড় ছেলে বলে সংসারের দারিদ্র্য উপলব্ধি করেন বাস্তবতার নিরিখে। অভাবের সংসারে ছোট হয়ে আসে স্বপ্নীল পরিসর। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর মতো পাঠ চুকিয়ে যোগ দেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে।

স্বপ্নের সিঁড়িতে ভর করে যার পথচলা, সে তো ‘হার না মানা গল্প’ দিয়েই জীবনঘর আলোকিত করেন। সৈনিক শাহীন মিয়া তেমনই এক আলোকিত মানুষ। কলেজ আঙিনা ছেড়ে দেয়ায় যে জীবনে আঁধার নেমেছিল, সেই জীবনঘরে আজ হাজারও আলোকচ্ছটা। শিক্ষাকে ব্রত জেনে শিক্ষার ফেরিওয়ালা হয়েছেন এ সেনাসদস্য। যেখানেই দরিদ্রতা, সেখানেই শাহীন মিয়া। যেখানেই মেধাবী শিক্ষার্থীর ঝরে পড়া, সেখানেই শাহীন মিয়া। দরিদ্র-মেধাবীদের কাছে অতি আপনজন তিনি। যেন ঝরা ফুলের মালা গেঁথে সুবাস ছড়ানো এক শিক্ষানুরাগীর নিরন্তর পাগলামি।

শুরুর গল্প

১৯৯৯ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে কলেজে ভর্তি হন শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার ঘোড়জান গ্রামের শাহীন মিয়া। অভাবের কারণে শিক্ষা অর্জনের পথ আর দীর্ঘায়িত হয়নি। ২০০১ সালের ২৯ জুন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। সেনাবাহিনীর নিয়ম-শৃঙ্খলা তাকে নতুনভাবে পথ দেখায়। এ সময় সেনাবাহিনীর আদর্শ আর নিষ্ঠা তার মনের ওপর প্রভাব ফেলতে থাকে।

সামাজিক দায় আর চেতনতাবোধের প্রশ্নে নিজেকে তৈরি করতে থাকেন ঠিক অন্যভাবে। ছুটির সময় গ্রামে ফিরে মানুষের সঙ্গ নিতে থাকেন খুব কাছ থেকে। এ সময় সমাজের অসঙ্গতিগুলোও তাকে দারুণভাবে নাড়া দিতে থাকে।

dops-02

বিশেষ করে মানুষের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, যুব সমাজের মাদকে আসক্তি ও বাল্যবিবাহসহ নৈতিকতার অবক্ষয় নিয়ে ভাবতে থাকেন। এসবের কারণ হিসেবে দেখতে পান এলাকায় শিক্ষার অনগ্রসরতা। নিজের ধারণা আর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে জানতে পারেন, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সন্তানরা শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ছে মূলত অভাবের কারণে। গ্রামের অধিকাংশ অভিভাবক অসচেতন, নিরক্ষর ও নিম্নবিত্তের হওয়ায় স্কুল-কলেজে পাঠানোর পরিবর্তে কোমলমতি সন্তানদের সংসারের হাল ধরাতে বাধ্য করছেন। অনেকে আবার অল্প বয়সেই কঠিন পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন। এতে একজন শিক্ষার্থী তার ভবিষ্যৎ জীবন যেমন অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিচ্ছেন, তেমনি পরিবারের বেহাল দশাও বহাল থাকছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে সামাজিকভাবে আলোচনা শুরু করেন শাহীন মিয়া।

চাকরিতে যোগদানের কয়েক বছর পর নিজ পরিবারেও সচ্ছলতা ফিরতে থাকে। পরিবারের দায় মেটানোর পাশাপাশি গরিব-মেধাবীদের জন্য হাত বাড়াতে থাকেন এ সেনাসদস্য। নিজের ছোট ভাই আর এক চাচাতো ভাইকে শিক্ষামূলক পরামর্শ আর শিক্ষা উপকরণ দেয়ার মধ্য দিয়ে সেই যে যাত্রা শুরু, সময়ের ব্যবধানে বাড়তে থাকে এর কার্যপরিধি।

২০০৫ সালে সাভার ক্যান্টনমেন্টে যোগদানের পর ছুটির পুরোটা সময় নিজ এলাকায় কাটাতে শুরু করেন তিনি। উদ্দেশ্য, গ্রামের গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করা। এভাবেই পরিচিতি বাড়তে থাকে, বাড়তে থাকে নিজের দায়বদ্ধতাও। শাহীন মিয়ার এমন শিক্ষামূলক কার্যক্রমের বিষয়টি অবগত হতে থাকেন নিজের কর্মস্থল সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারাও।

সাভারে থাকাকালে কমান্ডিং অফিসার শিক্ষাসেবায় শাহীনের সামাজিক দায়বদ্ধতা দেখে বিশেষ আন্তরিকতা দেখান। পরবর্তীতে মিডিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎকারের জন্য সামরিক গোয়েন্দা অধিদপ্তর থেকে তাকে একটি ছাড়পত্র দেয়া হয়, যাতে ছুটিকালীন শিক্ষাসেবা নিয়ে কাজ করার স্বীকৃতি মেলে।

শাহীনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বহু ঝরে পড়া শিক্ষার্থী পুনরায় শিক্ষাজীবন ফিরে পান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা এখন পড়াশোনা করছেন। নিজ গ্রামে ছোট পরিসরে শুরু করলেও এখন পুরো শেরপুর জেলাজুড়ে তার শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এ কার্যক্রমের সাংগঠনিক মান দিতে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধনও করা হয় ২০১১ সালে।

‘দরিদ্র ও অসহায় শিক্ষার্থী উন্নয়ন সংস্থা (ডপস)’ নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে এখন তার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। যদিও ডপস-এর যাত্রা শুরু ২০০৮ সালে।

dops-03

শিক্ষা ও সমাজ উন্নয়নে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সৈনিক শাহীন মিয়া রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ‘বিশিষ্ট সেবা পদক’-এ ভূষিত হন ২০১৫ সালে। তিনি বর্তমানে ২০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট হতে অস্থায়ী বদলিতে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর- বিএনসিসিতে কর্মরত।

আঁধারে আলোর মিছিল

রাসেল। ভূমিহীন পরিবারের সন্তান। খাস জমিতে কোনোমতে মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল পরিবারের। দিন আনে দিন খায়, কোনোভাবেই রাসেলের পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার উপায় ছিল না। এসএসসি পরীক্ষার আগে একবার গার্মেন্টসে চাকরি নিয়েছিলেন। পরীক্ষার পর ফের ময়মনসিংহের ভালুকায় গার্মেন্টসে চাকরি নেন এ শিক্ষার্থী।

রাসেলের মেধা আর পরিবার সম্পর্কে তারই পরিচিত আব্দুল হাকিমের মাধ্যমে জানতে পারেন শাহীন মিয়া। ছুটে যান রাসেলের পরিবারের কাছে। বাবা-মাকে বোঝাতে চেষ্টা করেন রাসেলের মেধা আর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে। শিক্ষা খরচে সহায়তারও প্রতিশ্রুতি দেন। রাসেলের বাবা-মা রাজি হন।

এ-প্লাস পেয়ে এসএসসি পাস করেন রাসেল। গার্মেন্টস থেকে ফিরে এসে ভর্তি হন কলেজে। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যাপারে দায়িত্ব নেন শাহীন। রাসেল এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়নরত।

রমজান। গরিব বাবা ফুটপাতে কাঁচামাল বিক্রি করেন। মা আর বোন গার্মেন্টসে চাকরি করেন। অভাব, দৈন্য রমজানের শিক্ষাজীবনে যেন আঁধার নামিয়ে দেয়। সব শুনে শাহীন মিয়া রমজানের ফুফুর সঙ্গে পড়ালেখার ব্যাপারে যোগাযোগ করতে থাকেন। কিছুদিন পর রমজানের ফুফুও যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। কারণ, রমজানকে শাহীন নিয়ে যাবে, এই ভেবে।

নাছোড়বান্দা শাহীন শেষপর্যন্ত বোঝাতে সক্ষম হন। এসএসসি পরীক্ষার পর রমজানকে নিয়ে ময়মনসিংহের অ্যাডভান্স রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের প্রিন্সিপালের কাছে যান। সব খুলে বলেন। রমজানকে ফ্রিতে থাকা-খাওয়াসহ পড়ানোর ব্যবস্থা করেন। রমজান এখন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিশারিজে অধ্যয়নরত।

dpos-04

শারমিন। গরিব, ভূমিহীন পরিবারের মেয়ে। পাহাড়ের ঢালে বাড়ি। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবা বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বিয়ের বিষয়ে জানতে পেরে শারমিনের বাড়িতে ছুটে যান শাহীন। বাবাকে বুঝিয়ে শারমিনের বাল্যবিয়ে ঠেকিয়ে পড়ালেখার খরচের দায়িত্ব নেন। অনিশ্চিত যাত্রা থেকে ফিরে এসে ফের শিক্ষাজীবনে পথচলা শুরু শারমিনের। এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেল এ-প্লাস পান। গোল্ডেল এ-প্লাস পান এইচএসসিতেও। এখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগে অধ্যয়নরত।

শারমিনদের মতো শত শত দরিদ্র-মেধাবীদের নিশ্চয়তার পথ দেখাচ্ছেন শাহীন। যেন আঁধার পথে এক আলোর মিছিল। দরিদ্র তবে অপেক্ষাকৃত মেধাবীদের জন্য সাধ্যের মধ্যে সবকিছু দিয়ে শিক্ষার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করছেন এ সেনাসদস্য।

বর্তমানে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ডপস-এর সহায়তা নিয়ে ২৬ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছেন। তাদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন পাঁচজন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন আরও ১৪ শিক্ষার্থী। ডপস-এর সদস্যদের মধ্যে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন ২২ জন এবং এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন ১৮ শিক্ষার্থী। বর্তমানে মোট ৩৫০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ডপস-এর শিক্ষা সহায়তা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

সমগ্র শেরপুর জেলায় দরিদ্র ও মেধাবীদের সহায়তার জন্য ডপস কাজ করে যাচ্ছে। শেরপুর শহরের খরমপুর মোড়ে একটি অফিসও ভাড়া নেয়া হয়েছে সংগঠনের কাজের জন্য।

শাহীন বলেন, আমার জীবনের স্বপ্নগুলো আজ ডানা মেলছে। আমি হয়তো পূর্ণাঙ্গভাবে শিক্ষার্থীদের সহায়তা করতে পারছি না। কিন্তু যতটুকু করতে পারছি, তা ওদের সাহস ও নির্ভরতা দিচ্ছে। বর্তমানে ২৬ শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে, যাদের সবাই ডপস-এর সহায়তা পাওয়া। এটিই আমাকে আনন্দ দেয়। ওরা সবাই আমার আপন, আমিও ওদের আপন। ওদের দুঃখ আমার দুঃখ, ওদের সফলতাই আমার সফলতা। আমরা আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব আর পরিধি বাড়াতে বদ্ধপরিকর থাকব।

dpos-05

বাড়ছে সহযাত্রীও

সামান্য একজন সেনাসদস্যের পক্ষে এমন কার্যক্রম পরিচালনা মোটেও সহজ বিষয় নয়। বিশেষ করে সামাজিক প্রতিবন্ধকতাই থমকে দেয় উদ্যমী সব মানুষকে। শাহীনের বেলাতেও ব্যতিক্রম ছিল না। সমালোচনা ছিল শুরু থেকেই। সমালোচকদের কেউ কেউ বলেছেন, ‘সামনে নির্বাচন করবেন বলে এমন কার্যক্রম চালাচ্ছেন।’ কেউ বলেছেন, ‘শিক্ষা নিয়ে সামনে ব্যবসার ধান্দা আছে, তাই শাহীন ফ্রি সেবা দিচ্ছে।’

সব সমালোচনা পায়ে মাড়িয়ে শাহীন শিক্ষার আলোয় আপন ভুবন তৈরি করেছেন। শাহীনের কার্যক্রম নিয়ে ২০১০ সালে একটি দৈনিকে সংবাদ প্রকাশ হয়। আলোচনার পাশাপাশি সংবাদ পড়ে গ্রামের অনেকে সমালোচনাও করতে থাকেন। সংবাদটি নজরে আসে তৎকালীন শেরপুর জেলা প্রশাসক নাসিরুজ্জামানের (বর্তমান কৃষি সচিব)। তার বাংলোয় শাহীনকে ডেকে নিয়ে উৎসাহ ও সাহস দেন। শাহীনের গায়ে চিমটি কেটে বলেন, এ ব্যথা ক্ষণিকের। ঠিক সমালোচনাও তাই। এগিয়ে যাও। সমালোচকরাই একদিন তোমার কাজের প্রশংসা করবে।

শাহীনের প্রশংসা মিলছে এখন চারিদিক থেকে। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা শিক্ষা অফিসার থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসনের সবাই এখন অবগত তার সেবামূলক কার্যক্রমের ব্যাপারে। তার ডাকে সাড়া দেন সবাই। স্থানীয় সাংবাদিকরাও শাহীনের কার্যক্রমের খবর প্রকাশ করছেন বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে।

সহায়তা কার্যক্রমেও অনেকে হাত বাড়াচ্ছেন, তবে তা সংগঠনের সদস্যদের শিক্ষা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানেই ব্যয় হচ্ছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা রয়েছে সর্বক্ষেত্রে। মাঝেমধ্যে কেউ এককালীন, কেউ নিয়মিত সহায়তা করে ডপস-এর সেবাকে সমৃদ্ধ করছেন। প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও অবদান রাখছেন।

dpos-06

আর শিক্ষার্থীদের মাঝে পরামর্শমূলক কাজে সহায়তা করছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়ারাই। ছুটি উপলক্ষে বাড়িতে গিয়ে দরিদ্র এ মেধাবীরাই এখন অপর দরিদ্র মেধাবীদের সহযোগী হয়ে কাজ করছেন। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর জুনিয়রদের টিউশনির ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন সিনিয়ররাই। যেন ‘শাহীন’ নামের একই বৃত্তে শত মেধাবীর ভালোবাসার প্রকাশ।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, এর আগে কোচিংয়ে থাকা-খাওয়ার ব্যয় এবং ভর্তির যাতায়াতের খরচ শতভাগ না হলেও আংশিকভাবে ডপস-এর পক্ষ থেকেই বহন করতে হয়। শাহীন তার বেতনের অধিকাংশ অর্থই খরচ করছেন দরিদ্র এ শিক্ষার্থীদের জন্য। এমনকি শান্তিরক্ষা মিশন শেষে দেশে ফিরে নিজের ভাগ্যোন্নয়নে কিছুই করেননি। রাষ্ট্রীয় পদকের এককালীন অনুদানে পাওয়া এক লাখ ১৫ হাজার টাকার পুরোটাই জেলা প্রশাসকের হাত দিয়ে ডপস-এর তহবিলে জমা দিয়েছেন।

তার এ মহতী কাজে যুক্ত হয়েছেন স্ত্রী রাবেয়া সুলতানাও। রাবেয়া ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজ থেকে রসায়নে মাস্টার্স করেছেন। তিনি ডপস-এর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। ছয় বছরের মেয়ে আর সংসার সামলে শাহীনের মতো তিনিও গরিব ও মেধাবীদের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন।

dpos-07

শাহীন তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, অর্থ আসলে কোনো বিষয় নয়। মানুষের জন্য কিছু করতে পারার ইচ্ছাটাই বড় বিষয়। আমি কীভাবে, কোন কৌশলে মানুষের মননে অবস্থান করব- সেটা নির্ধারণই আসল কথা। সবসময় টাকার দরকার পড়ে না। ভালো একটি পরামর্শ লাখ টাকার কাজে আসে।

তিনি বলেন, ২৯ টাকার খাতা-কলম দিয়ে শুরু করেছিলাম। এখন মাসিক ব্যয় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। আমার নিজের বেতনের একটি বড় অংশ চলে যায় সেখানে। বাকিটা মহৎ ব্যক্তিদের সহায়তায় পাওয়া। আমার ধ্যান-জ্ঞান এখন একটাই, সবসময় যেন গরিব-মেধাবীদের জন্যই কাজ করে যেতে পারি।

স্বপ্ন নিয়ে এ সেনাসদস্য আরও বলেন, নিজে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারিনি। আর হবেও না। কিন্তু গরিব-মেধাবীরা যেন আমার মতো ঝরে না যায়, সেজন্য শিক্ষার উন্নয়নে একটি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখি। স্বপ্ন দেখি একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ারও। সমাজের গুণী, মহৎ ব্যক্তিরা এগিয়ে আসলে আমার সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন সহজ হবে বলে বিশ্বাস করি।

এএসএস/এমএআর/পিআর

আরও পড়ুন