বিরোধীদের ‘ফাঁদে’ আওয়ামী লীগ!
চলমান উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিরোধী দলগুলো অংশ না নেয়ায় অনেক জায়গায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বর্তমান সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দেয় বিরোধী দলগুলো। তাতেই দেখা দিয়েছে বিপত্তি। প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন এ নির্বাচনে বিরোধীদের এমন রাজনৈতিক ‘ফাঁদে’ পড়েছে ক্ষমতাসীনরা!
দুই ধাপে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল থেকে জানা যায়, প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান পদে ১৬ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ছয় এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাতজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং দ্বিতীয় ধাপে ২৩ জন চেয়ারম্যান, ১৩ ভাইস চেয়ারম্যান ও ১২ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, তৃতীয় ধাপে চেয়ারম্যান পদে নয়জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে চার এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। চতুর্থ ধাপে ২১ জন চেয়ারম্যান, ১১ জন ভাইস চেয়ারম্যান ও ১৬ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একটি সূত্রের দাবি, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফাঁদ তৈরি করতেই বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যাতে তারা দেশে-বিদেশে সরকার ও নির্বাচন নিয়ে নেতিবাচক বার্তা দিতে পারে। তবে নির্বাচন কারও জন্য বসে থাকে না।
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার জন্য উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে কোনো প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার দায় বিএনপির ঘাড়ে চাপাচ্ছেন ক্ষমতাসীনরা। তাদের ভাষ্য, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আমরা চেয়েছি। আমরা চেয়েছি নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হোক। তারপরও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলে কীভাবে ঠেকাব?
আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের কেউ কেউ বিরোধী দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সুযোগ নিচ্ছে বলেও মনে করেন তারা। তাদের ভাষ্য, বিএনপি দেশে গণতন্ত্র চায় না বলেই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ব্যাপারে একটা সঙ্কট রয়েছে বলে জানান নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর অন্তত তিন সদস্য। তারা বলেন, আমরা সব সময় চেয়েছি নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হোক। আমরা বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমরা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হোক সেটাই চেয়েছি। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হোক- এটাও চেয়েছি। তারপরও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলে আমরা ঠেকাব কী করে?’
বিএনপি বা বিরোধী কোনো দলের নাম না নিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা তারাই বলতে পারবে যারা নির্বাচনে অংশ নেয়নি।’
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন সিরাজ জাগো নিউজকে বলেন, ‘নির্বাচন তো হবেই, নির্বাচন তো কারও জন্য আটকে থাকবে না। নির্বাচন তো অংশগ্রহণমূলকভাবেই হচ্ছে। বিভিন্ন উপজেলায় বিরোধী দলের অনেকেই তো আসছে। একদম মাইনর উপজেলায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। আমাদের তো নির্বাচনী ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে। বিরোধী দল দেশে গণতন্ত্র চায় না, গণতন্ত্র দেশে প্রতিষ্ঠা হোক, সেটাও চায় না। তারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে চায়।’
এইউএ/এনডিএস/এমএআর/জেআইএম