পার্বত্য এলাকায় হচ্ছে আরও ১ হাজার পাড়াকেন্দ্র
>> পার্বত্য তিন জেলায় বর্তমানে পাড়াকেন্দ্রের সংখ্যা চার হাজার
>> ‘টেকসই সামাজিক সেবা’ নিশ্চিত করবে নতুন এ প্রকল্প
>> ৩ বছর মেয়াদের প্রকল্পে ব্যয় হবে ৪২৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা
তিন পার্বত্য জেলার অধিবাসীদের কাছে সামাজিক সেবা সহজলভ্য করতে আরও এক হাজার পাড়াকেন্দ্র করবে সরকার। পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্তমানে চার হাজার পাড়াকেন্দ্র রয়েছে।
‘পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান’ প্রকল্পের আওতায় নতুন পাড়াকেন্দ্রগুলো করা হবে বলে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে।
আরও পড়ুন >> ২১ বছরে কী পেল পাহাড়িরা?
পাড়াকেন্দ্র কমিউনিটির নির্মিত ও পরিচালিত একটি স্থাপনা। এটি বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়।
প্রাক-শিক্ষা ও প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র; গর্ভবতী, প্রসূতি মহিলা, সর্বোচ্চ পাঁচ বছর বয়সী শিশু ও কিশোরদের জন্য স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সেবাদান কেন্দ্র; পরিবার পর্যায়ে বিভিন্ন স্বল্পব্যয়ী ও টেকসই পদ্ধতি প্রদর্শন কেন্দ্র; পাড়ার যাবতীয় মৌলিক তথ্য সংরক্ষণ কেন্দ্র; কিশোর-কিশোরীদের উন্নয়ন কেন্দ্র; কমিউনিটি প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
স্থানীয় একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মহিলাকর্মী পাড়াকেন্দ্র পরিচালনা করেন এবং সাত সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা কমিটি এ কাজে তাকে সহায়তা করে।
নতুন পাড়াকেন্দ্র নির্মাণের বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. মেজবাহুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘পাড়াকেন্দ্র সামাজিক সেবা বিতরণের একটি সফল মডেল। পার্বত্য এলাকায় যেখানে যেখানে প্রয়োজন এমন স্থানে আরও এক হাজার পাড়াকেন্দ্র করা হবে। চলতি বছর এসব পাড়াকেন্দ্র স্থাপনের স্থান নির্ধারণের কাজ সম্পন্ন হবে। একই সঙ্গে আমরা বিদ্যমান পাড়াকেন্দ্রগুলোর উন্নয়ন করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কমিউনিটি কেন্দ্রিক ও কমিউনিটি অংশগ্রহণমূলক সেবা বিতরণ কেন্দ্র হিসেবে পাড়াকেন্দ্র উপযোগী অ্যাপ্রোচ হিসেবে প্রমাণিত ও প্রশংসিত। দুর্গম যোগোযোগ ও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসবাস করা সত্ত্বেও পাড়াকেন্দ্র মানুষের কাছে সেবা সহজলভ্য করেছে।’
আরও পড়ুন >> আজও উঠানেই সীমাবদ্ধ পাহাড়িদের কোমর তাঁত
সামাজিক উন্নয়নে পাড়াকেন্দ্রের প্রভাব তুলে ধরে সচিব বলেন, ‘প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষায় পার্বত্য অঞ্চলে ভর্তির হার জাতীয় হারের চেয়ে ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি (জাতীয় ৪৩ দশমিক ৫০, পার্বত্যাঞ্চলে ৫৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ)। পার্বত্য অঞ্চলে ১৮০টি কমিউনিটি ক্লিনিক এক-তৃতীয়াংশ জনগণকে সেবা দেয়, বাকি তিন-চতুর্থাংশ মানুষ পাড়াকেন্দ্রের মাধ্যমে সেবার অন্তর্ভুক্ত হয়। শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানোর হার ভিত্তিবছর (১৯৯৭) ২২ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ২০১৮ সালে ৭৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।’
সরকার ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তিন বছর মেয়াদের এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১২৩ কোটি টাকা অনুদান হিসেবে দেবে ইউনিসেফ (ইউনাইটেড নেশনস ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেন্স ইমার্জেন্সি ফান্ড)। ২০২১ সালের জুন মাসে এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলার ২৬টি উপজেলার ১২১টি ইউনিয়ন এ প্রকল্পের আওতাভুক্ত। প্রকল্পের মাধ্যমে অন্যান্য কাজের সঙ্গে বিদ্যমান চার হাজার পাড়াকেন্দ্র উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে নতুন এক হাজার পাড়াকেন্দ্র্র নির্মাণ করা হবে। একই সঙ্গে ২৬টি মডেল পাড়াকেন্দ্র গড়ে তোলা হবে বলে মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে।
আরও পড়ুন >> ৩০ বছর পানির সংকট হবে না গ্রামটিতে
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল বাংলাদেশের মোট আয়তনের এক-দশমাংশ এবং এ অঞ্চলের জনসংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় এক শতাংশ। ১১টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাস যা এ অঞ্চলের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক। এখানকার জনগণ মূলত কৃষিজীবী এবং প্রত্যন্ত এলাকায় মৌসুমি খাদ্য ঘাটতির প্রবণতা বিদ্যমান।
যোগাযোগ দুর্গমতার কারণে মৌল সামাজিক সেবার প্রাপ্যতা ও ব্যবহার নিশ্চিত করা দুরূহ। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিভিন্ন প্রথাগত সামাজিক, বিচারিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা বিদ্যমান রয়েছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে জানা গেছে, নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে পার্বত্য এলাকায় শিশু ও তাদের পরিবারের কাছে মৌলিক সামাজিক সেবার প্রাপ্যতা বৃদ্ধি করতে পাঁচ হাজার (নতুন এক হাজারসহ) পাড়াকেন্দ্রের নেটওয়ার্ক তৈরি করা হবে। ২০২১ সালের মধ্যে দুর্গম পার্বত্য এলাকায় সব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে মৌলসেবা প্রবাহের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা হবে।
নতুন প্রকল্পের উদ্দেশ্য তুলে ধরে এক কর্মকর্তা জানান, এক লাখ ২০ হাজার শিশুর প্রাক-শৈশব স্তরের শিক্ষা দেয়ার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য প্রস্তুত করা হবে। দুই লাখ ছয় হাজার পরিবারের শিশু, কিশোরী ও মহিলাদের রক্তস্বল্পতা ও পুষ্টির ঘাটতি জনিত সমস্যা প্রতিরোধ করা হবে। চারটি আবাসিক বিদ্যালয়ের (বৃত্তিমূলক কোর্সসহ) মাধ্যমে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এক হাজার ২০০ শিক্ষার্থীকে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রবাহের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হবে।
আরও পড়ুন >> যেভাবে আসলো পার্বত্য চট্টগ্রামে রাজপ্রথা
পাঁচ হাজার পাড়াকেন্দ্রে বয়স্ক শিক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে পার্বত্যাঞ্চলে নিরক্ষরতার হার কমানো হবে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে সেবা বিতরণকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে কার্যকর সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে সর্বোত্তম ফলাফল অর্জন করাও এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য।’
পার্বত্য এলাকায় পাড়াকেন্দ্রের কারণে মহিলাদের টিটি টিকা গ্রহণের হার ৪৬ শতাংশ, গর্ভবতীদের দুই ডোজ টিটি টিকা গ্রহণের হার ৫২ শতাংশ, শিশুদের টিকা গ্রহণের হার ৬৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে।
আরএমএম/এমএআর/এনএফ/এমকেএইচ