ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

বইমেলার পূর্বদিকে একটি গেট করার কথা ভাবছি

সায়েম সাবু | প্রকাশিত: ০৫:১১ পিএম, ১৯ জানুয়ারি ২০১৯

হাবীবুল্লাহ সিরাজী। কবি ও লেখক। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদকে ভূষিত হন। সম্প্রতি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে নিযুক্ত হয়েছেন।

আসন্ন একুশে বইমেলা প্রসঙ্গে মুখোমুখি হন জাগো নিউজ’র। এবারের মেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশের পূর্বদিকে গেট থাকবে উল্লেখ করে বলেন, এ গেট মেলাকে আরও প্রাণবন্ত করবে। মেলার অবকাঠামোয় বিশেষ পরিবর্তন আসবে বলেও জানান। বাংলা একাডেমির উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়েও মতামত ব্যক্ত করেন তিনি। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে শেষটি।

আরও পড়ুন >> স্টল বরাদ্দে রাজনৈতিক চাপ নিচ্ছি না

জাগো নিউজ : সবাইকে সমান সুবিধা দিতেই বাংলা একাডেমি থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলার জায়গা বর্ধিত করা হলো। অভিযোগ রয়েছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূর্বদিকের স্টলগুলো ভুল নকশার কারণে আড়ালে পড়ে যায়। এ নিয়ে কী ভাবছেন এবার?

হাবীবুল্লাহ সিরাজী : বিষয়টি আমরাও অবগত। তবে এবার এই সমস্যা থাকবে না বলে আমরা আশা করছি। এ নিয়ে আমরা গত এক মাস ধরে আলোচনা করছি। বইমেলার পূর্বদিকে একটি গেট করার কথা ভাবছি এবার। এ নিয়ে পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেছি। পুলিশ অনুমতি দিলে আমরা মেলার পূর্বদিকে একটি গেট করে দেব।

পূর্বদিক যদি খুলে দিতে পারি এবং পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করতে পারি তাহলে সামনের দিকের চেয়ে পেছনেই বেশি লোক সমাগম হবে বলে আমি মনে করি।

জাগো নিউজ : সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলার জায়গা বাড়ানো হচ্ছে কিনা?

হাবীবুল্লাহ সিরাজী : না। আপাতত জায়গা বাড়ানোর দরকার আছে বলে মনে করি না। তবে পূর্বদিকে একটি গেট রাখার পরিকল্পনা আছে। যদি পুলিশ অনুমতি দেয়।

গেটটি করার ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি বারবার সামনে আসছে। কারণ পুরো মাঠটি খোলা। স্বাধীনতা স্তম্ভও ওই পাশে। যদি আমরা নিরাপত্তা ঠিক রেখে পূর্বপাশটা খুলে দিতে পারি, তাহলে দেখবেন ওই পাশের মেলাই বেশি জমে উঠবে।

জাগো নিউজ : বইমেলার উদ্দেশ্য ছিল সাহিত্যের মান বাড়ানোর পাশাপাশি পাঠক-লেখক তৈরি করা। সাহিত্যের মান নিয়ে কী বলবেন?

হাবীবুল্লাহ সিরাজী : শিল্প-সাহিত্যের মানের মূল্যায়ন অনেক বড় একটি বিষয়। অল্প সময়ে এই বিশ্লেষণ করা যায় না।

সাহিত্যের মান মূল্যায়ন করা অবশ্যই বাংলা একাডেমির দায়িত্ব বলে আমি মনে করি। কিন্তু একটি প্রতিষ্ঠান কোনোভাবেই সাহিত্যের পরিপূর্ণ মান নির্ণয় করতে পারে না। তবুও বাংলা একাডেমি তার ভূমিকা রাখছে বইমেলা আয়োজনের মধ্য দিয়ে।

তবে সাহিত্যের মান মূল্যায়নে এবার বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ‘লেখক বলবেন’ নামে একটি কর্নার থাকবে। সেই কর্নারে লেখক তার নিজের বই সম্পর্কে দশ মিনিট মূল্যায়ন করবেন। বইগুলো বাংলা একাডেমি বাছাই করে দেবে। আমি মনে করি, এই ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বইয়ের সাহিত্যমান বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে আসা যাবে।

জাগো নিউজ : বাংলা একাডেমি নিয়ে আপনার নিজস্ব কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা?

হাবীবুল্লাহ সিরাজী : প্রতিটা ব্যক্তিরই নিজস্ব পরিকল্পনা থাকে। আমারও অবশ্যই নিজস্ব পরিকল্পনা রয়েছে এবং সেটা দীর্ঘমেয়াদি। সংক্ষিপ্ত আলোচনায় এমন পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তর বলা যায় না।

জাগো নিউজ : বইয়ের মূল্য নিয়ে অভিযোগ আছে। মূল্য নির্ধারণে বাংলা একাডেমি ভূমিকা রাখতে পারে কিনা?

হাবীবুল্লাহ সিরাজী : বইয়ের মূল্য নির্ধারণে বাংলা একাডেমির কোনো নির্দেশনা থাকে না। প্রকাশনা সমিতি নিজেরাই বইয়ের মূল্য নির্ধারণ করে। একটি বই নানা আঙ্গিকে বাজারে আসতে পারে। এ কারণেই বইয়ের মূল্য ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।

তবে আমি মনে করি, বইয়ের মূল্য নির্ধারণে একটি নীতিমালা হওয়া জরুরি। এই দায়িত্ব বাংলা একাডেমির নয়। প্রকাশনা সংশ্লিষ্ট অন্য কোনো সংস্থা করতে পারে।

জাগো নিউজ : নিরাপত্তার নামে বই নিষিদ্ধ করা হয়, প্রকাশনীর স্টল বরাদ্দ বাতিল করা হয়। এটি কীভাবে দেখছেন?

হাবীবুল্লাহ সিরাজী : বাংলা একাডেমির নিজস্ব টাস্কফোর্স থাকবে। তারা যদি মনে করেন, বইটি মেলায় বিক্রি বা প্রদর্শন ঠিক নয়, তাহলে তারা মেলা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করবেন। এরপর মেলা কমিটি যদি মনে করে বইটি তাৎক্ষণিকভাবে তুলে দিতে হবে, তাহলে অবশ্যই তা করবে। তবে বিধি মোতাবেকই সব করা হবে।

jagonews

জাগো নিউজ : সাহিত্য তো নিষেধাজ্ঞার আড়ালে চাপা পড়ার বিষয় নয়। এমন নিষেধাজ্ঞা সাহিত্য বিকাশের অন্তরায় কিনা?

হাবীবুল্লাহ সিরাজী : বিধি-নিষেধ সাহিত্য বিকাশের অন্তরায় নয়। মেলাটি সর্বজনীন। এখানে সর্বস্তরের মানুষ আসেন। একটি বিতর্কিত বই দিয়ে মেলার আয়োজনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারেন না। চাইলেই একটি প্রকাশনী সংস্থাকে মেলায় জায়গা দেয়া যায় না। একুশে বইমেলার জন্য নির্দিষ্ট একটি নীতিমালা আছে। যেমন, বিদেশি বই বা লেখকের বই এই মেলায় আসবে না।
একুশের চেতনা এবং মেলা একসঙ্গে মিশে আছে। এই বইমেলা আর দশটি মেলার মতো নয়। কোনো দেশেই এক মাসব্যাপী বইমেলার আয়োজন হয় না। এটিই মেলার স্বতন্ত্র এবং চেতনার প্রকাশ। ভাষার মাধ্যমে আমরা বইকে গ্রহণ করেছি।

জাগো নিউজ : টাস্কফোর্সে প্রশাসনের কেউ থাকবেন কিনা?

হাবীবুল্লাহ সিরাজী : আপাতত বাংলা একাডেমির লোকরাই থাকবেন। তবে কর্তৃপক্ষ যদি মনে করেন প্রশাসনের লোক থাকা দরকার তাহলে তারাও থাকতে পারেন।

জাগো নিউজ : বইমেলার সফলতা নিয়ে কী বলবেন?

হাবীবুল্লাহ সিরাজী : আমি অবশ্যই আশা করছি, এবারের বইমেলা সফল হবে। একুশে বইমেলা সবার। সবার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়েই মেলাটি সার্থক হবে।

দর্শক, পাঠক, লেখক, গণমাধ্যমকর্মীরা বইমেলার প্রাণ। সবাই সহযোগিতা করলে মেলাটি সফল হবে। আমরা চাই, ২০১৯ সালের মেলাটি যেন ২০১৮ সাল থেকে আলাদা ও প্রাণবন্ত হয়। মেলায় আসলে যেন প্রাণ খোলে, সেজন্য সবারই অংশগ্রহণ জরুরি।

জাগো নিউজ : বাংলা একাডেমি নিয়ে আপনার নিজস্ব পরিকল্পনা…

হাবীবুল্লাহ সিরাজী : অবকাঠামো বাড়ানো জরুরি। এটি আমার পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কিছু সমস্যা আছে। সেই সমস্যাগুলো দূর করতে চাই। এগুলো দূর করতে মন্ত্রণালয়েরও দায় আছে।

আমি বলার মধ্যে আটকে থাকতে চাই না। কিছু করে দেখাতে চাই। এ কারণে আরেকটু সময় চাইছি। হয়তো ছয় মাস পর বলতে পারব কী করতে পারলাম, আর কী করতে পারব?

এএসএস/এমএআর/আরআইপি

আরও পড়ুন