ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

স্টল বরাদ্দে রাজনৈতিক চাপ নিচ্ছি না

সায়েম সাবু | প্রকাশিত: ০৫:৫৯ পিএম, ১৮ জানুয়ারি ২০১৯

হাবীবুল্লাহ সিরাজী। কবি ও লেখক। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন। সম্প্রতি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে নিযুক্ত হয়েছেন।

আসন্ন একুশে বইমেলা প্রসঙ্গে মুখোমুখি হন জাগো নিউজ’র। এবারের মেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশের পূর্ব দিকে গেট থাকবে উল্লেখ করে বলেন, এ গেট মেলাকে আরও প্রাণবন্ত করবে। মেলার অবকাঠামোয় বিশেষ পরিবর্তন আসবে বলেও জানান। বাংলা একাডেমির উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়েও মতামত ব্যক্ত করেন তিনি। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে প্রথমটি

জাগো নিউজ : নতুন দায়িত্ব পেলেন। জানতে চাইব আসন্ন বইমেলার আয়োজন নিয়ে…

হাবীবুল্লাহ সিরাজী : দায়িত্ব নতুন নিয়েছি বটে। তবে বই ও কবিতার মানুষ হওয়ায় মেলার সঙ্গে সম্পর্ক বেশ পুরনো।

বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ বইমেলাকে এখন নিজের মনে করে। বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনা সমিতি এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশনা সমিতি এ মেলার সঙ্গে জড়িত। এর চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, নাগরিকরা এ মেলা নিয়ে বিশেষভাবে আগ্রহী। বিশেষ করে রাজধানীবাসী এ মেলা নিয়ে উচ্ছ্বসিত কয়েক দশক ধরেই। ছোট-বড় সবাই বইমেলায় অংশ নিতে বছর ধরে অপেক্ষায় থাকেন। এ কারণে যারাই বাংলা একাডেমির দায়িত্বে আসেন, তারা বইমেলা সফল করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করেন।

নতুন দায়িত্ব নিয়েছি বলে কিছু বিষয়ে সমস্যা সামনে আসছে। এ সমস্যাগুলো আমাকে মানিয়ে নিয়েই মেলার আয়োজন করতে হচ্ছে। মেলার সঙ্গে যারা জড়িত, যারা অভিজ্ঞ, তাদের সবাইকে নিয়েই আমরা কাজ করছি।

জাগো নিউজ : মেলা উদ্বোধনের পরও স্টল সাজানোর কাজ হয়, যা শুরুর দিকে মেলার সৌন্দর্য নষ্ট করে এবং প্রতি বছর তাগিদ থাকার পরও এ উদাসীনতা থেকে যায়। এ নিয়ে কী ভাবছেন?

হাবীবুল্লাহ সিরাজী : আমরা স্টল বরাদ্দের কাজ শেষ করেছি। অবকাঠামোর কাজও শেষ পর্যায়ে। আশা করছি, ৩০ জানুয়ারির মধ্যে প্রকাশনী সংস্থাগুলো স্টল ও প্যাভিলিয়নের কাজ সম্পন্ন করতে পারবে। ৩০ তারিখ পর্যন্ত আমরা তাদের মাঠে কাজ করতে দেব। ৩১ তারিখ (৩১ জানুয়ারি) মেলার পূর্ণাঙ্গ রূপ দাঁড়িয়ে যাবে এবং ১ তারিখে (১ ফেব্রুয়ারি) যথারীতি মেলার উদ্বোধন হবে। উদ্বোধনের পর মেলায় একটি হাতুড়ির শব্দও আমি শুনতে চাইব না।

জাগো নিউজ : এবার মেলার আয়োজনে ভিন্ন কিছু মিলবে কিনা?

হাবীবুল্লাহ সিরাজী : হ্যাঁ। একটি স্বতন্ত্র বিষয় দিয়ে মেলার বিষয়বস্তু নির্ধারণ হয়েছে। এবার বিষয় হচ্ছে বিজয় ’৫২ থেকে ’৭১, নবপর্যায়ে।

প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সংযুক্তি রেখে মেলার নকশার দায়িত্বে থাকবেন প্রখ্যাত স্থপতি এনামুল কবির নির্ঝর ও তার দল। এর বাইরেও মেলার অবকাঠামো তৈরির দায়িত্বে যারা রয়েছেন তারাও অভিজ্ঞ। আমরা তাদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছি এবং নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করেছি। আমরা মেলার মাঠ এমনভাবে সাজাতে চাই, যাতে অন্যবারের মতো তিক্ত অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

মানুষ যেন স্বাচ্ছন্দ্যে মেলায় প্রবেশ করতে পারেন। স্বাধীনতা স্তম্ভ এবার মূল মেলার অংশ হিসেবে থাকবে। পথগুলো প্রশস্ত হবে। পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যবস্থা থাকবে। খাবারের দোকান ও কফি শপের বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে; যা বিগত বছর থেকে আলাদা হবে। এবারের মেলা নিয়ে এটিই আমার পরিকল্পনা।

জাগো নিউজ : বাংলা একাডেমির সামনের সড়কে মেট্রোরেলের কাজ চলছে। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি মেলায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে কিনা?

হাবীবুল্লাহ সিরাজী : মেট্রোরেলের কাজ মেলায় কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না। কারণ আগামী ২১ তারিখের পর দেখবেন রাস্তা পরিষ্কার হয়ে গেছে। মেট্রোরেলের প্রথম পর্বের কাজ শেষ করে তারা আমাদের এ সড়ক ছেড়ে দেবে। এ কারণে আমি মনে করছি, সড়কে স্বাভাবিক অবস্থাই বিরাজ করবে।

habibulla-shiraj-2

জাগো নিউজ : বইমেলার আরেকটি অংশ আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন। এবার সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। কারণ কী?

হাবীবুল্লাহ সিরাজী : মেলা, মেলার উদ্বোধন ও আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন একসঙ্গে হওয়ায় বড় চাপ সৃষ্টি হয়। এতে মেলার স্বাভাবিক সৌন্দর্য বিঘ্ন হয়। আবার আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনও পুরোপুরি আন্তর্জাতিক মানের হয় না।

জাগো নিউজ : তাহলে কী সাহিত্য সম্মেলন হচ্ছে না?

হাবীবুল্লাহ সিরাজী : আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, অন্য সময়ে আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন হবে; একেবারেই আলাদা করে। সাহিত্য সম্মেলনের নিজস্ব একটি ঢং আছে। আমরা সেই রূপ দেয়ার চেষ্টা করব।

আমরা সরকার ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রকে অনুরোধ করেছি একটি আন্তর্জাতিক বইমেলার আয়োজনের। সম্মতি মিলেছে। এ মেলায় বিদেশি সংস্থাগুলো যোগ দেবে এবং মেলাতেই সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

জাগো নিউজ : অভিযোগ রয়েছে, বাংলা একাডেমি অনুবাদের বাইরে আর বই প্রকাশ করে না। এ ব্যাপারে আপনার কোনো উদ্যোগ রয়েছে কিনা?

হাবীবুল্লাহ সিরাজী : বাংলা একাডেমির নানামুখী কাজ রয়েছে। সংরক্ষণ, গবেষণা, প্রকাশনা; এর বাইরেও সৃজনশীল লেখকদের বই প্রকাশের উদ্যোগও আমরা নেই। বাংলা ভাষায় স্বনামধন্য লেখকদের বই প্রকাশের বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছি। এখন ভালো লেখকদের বইও প্রকাশ করবে বাংলা একাডেমি।

জাগো নিউজ : দায়িত্ব নেয়ার পর কোনো সমস্যায় পড়েছেন কিনা?

হাবীবুল্লাহ সিরাজী : না। এখনও তেমন কোনো সমস্যার মুখে পড়তে হয়নি। ছোটখাটো সমস্যা থাকবেই এবং সেটা মূলত মেলা ঘিরেই। তবে এসব সমস্যা মোকাবিলা করেই এগিয়ে যেতে চাই।

এখানে আসার আগে আরও একটি জায়গায় দায়িত্ব পালন করেছি। সুতরাং চ্যালেঞ্জ নিতে পারব বলে আমার বিশ্বাস।

জাগো নিউজ : রাজনৈতিক চাপেও স্টল বরাদ্দ দিতে হয় এবং এটি প্রমাণিত অভিযোগ। এবার এ চাপ কীভাবে মোকাবিলা করছেন?

হাবীবুল্লাহ সিরাজী : মেলায় দুভাবে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক ধরনের স্টল বরাদ্দ এবং বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আরেক ধরনের স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়। মূলত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিক থেকেই চাপটা আসে।

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শিশুদের বই, লিটল ম্যাগ এবং সরকারি সংস্থাগুলোর স্টল বরাদ্দ পেয়ে থাকে। এখানে রাজনৈতিক সংগঠনের স্টলও বরাদ্দ পায়। গত বছর যারা স্টল বরাদ্দ পেয়েছেন এবারও তারা পাবেন। আর নতুন যারা পাচ্ছেন, তাদের বই দেখে স্টল বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। স্টল বরাদ্দে রাজনৈতিক চাপ নিচ্ছি না।

জাগো নিউজ : দুটি প্রকাশনী সংস্থাকে স্টল বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে না। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ কী?

হাবীবুল্লাহ সিরাজী : আদর্শ ও ইউনিভার্সাল নামের দুটি প্রকাশনী সংস্থার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। কমিটির সর্বসম্মতিক্রমে তাদের স্টল বরাদ্দ না দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এএসএস/এনডিএন/এমএআর/পিআর

আরও পড়ুন