ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

জামায়াতকে রাজনৈতিক মাঠ থেকে বিতাড়িত করবই

সায়েম সাবু | প্রকাশিত: ১০:২০ পিএম, ১৪ জানুয়ারি ২০১৯

অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো অংশ নেন। নির্বাচিতও হন। এরপর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পান বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট এ আইনজীবী।

নির্বাচন, মন্ত্রিসভা ও নিজের পরিকল্পনা নিয়ে মুখোমুখি হন জাগো নিউজ’র। দুর্নীতি রোধে সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ উল্লেখ করে রেজাউল করিম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভায় যে চমক দেখিয়েছেন, তার প্রতিফলন দেশবাসী কাজের মাধ্যমে দেখতে পাবেন।’ দীর্ঘ আলোচনায় জামায়াত এবং বিচার ব্যবস্থার প্রসঙ্গও গুরুত্ব পায়। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের শেষটি থাকছে আজ।

আরও পড়ুন >> দুর্নীতিবাজ যেই হোক টুঁটি চেপে ধরবই

জাগো নিউজ : আগের পর্বে দুর্নীতি রোধের কথা বলেছেন। এজন্য জনভিত্তির দরকার হয়। ভোট নিয়ে বিতর্ক আছে। অধিক সংখ্যক মানুষকে অনাস্থায় রেখে দুর্নীতি রোধ করা কি সম্ভব?

রেজাউল করিম : অবশ্যই সরকারের প্রতিটি ক্ষেত্রে জনসমর্থন গুরুত্বপূর্ণ। আওয়ামী লীগ সরকার এবার সেই জনসমর্থন নিয়েই ক্ষমতায় এসেছে। ১৯৭০ সালের মতো এবারের নির্বাচনে মানুষ উপচে পড়েছিল।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট বলেছে, এ নির্বাচনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তারা আদালতে যাবেন। আমরাও আইনের মাধ্যমে তা মোকাবিলা করব।

আমাদের বিশ্বাস, বিএনপি-জামায়াত এবং কিছু বিচ্ছিন্ন ব্যক্তির সমন্বয়ে যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল, তা মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। মানুষ তাদের ওপর আস্থা রাখতে পারেনি। জোটটির প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, তার নিশ্চয়তা ছিল না। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দণ্ডপ্রাপ্ত। ড. কামাল হোসেন নির্বাচন করেননি। যে নৌকার হাল ধরার কেউ নেই, সেই নৌকায় কোনো যাত্রী উঠতে চায় না। আমার ধারণা, মানুষ বিএনপি-জামায়াতের প্রতি ভীতসন্ত্রস্ত।

দ্বিতীয়ত, দেশের অধিকাংশ মানুষ যুদ্ধাপরাধের বিচার চেয়েছে। বিএনপি সুকৌশলে যুদ্ধাপরাধীর সন্তানদের মনোনয়ন দিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ মনে করছে বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের উত্তরাধিকার রক্ষা করতে চায়। মানুষ এ নীতি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।

তৃতীয়ত, ঐক্যফ্রন্ট নেতারা সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের দণ্ড মওকুফ চেয়েছেন। দুর্নীতিবাজদের মুক্তি চাওয়ার বিষয়টি মানুষ ভালোভাবে নেয়নি।

চতুর্থত, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সামাজিক নিরাপত্তা ও উন্নয়নের যে বিপ্লব ঘটেছে তার ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্যই মানুষ আওয়ামী লীগের ওপর আস্থা রেখেছে। মানুষ চায় নিরাপত্তা। আওয়ামী লীগ সরকার সেটি নিশ্চিত করেছে। একদিকে দুর্নীতির দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত নেতৃত্ব অন্যদিকে বিশ্বের সৎ ও পরিশ্রমী নেতৃত্ব। মানুষ শেখ হাসিনার প্রতিই আস্থা রেখেছেন।

জাগো নিউজ : নির্বাচনে জালিয়াতি তো অস্বীকার করা যায় না...

রেজাউল করিম : নির্বাচন নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। নির্বাচনে বিএনপি বাণিজ্য করেছে। আতাউর রহমানের পুত্র জিয়াউর রহমান খানকে মনোনয়ন না দিয়ে একজন অস্তিত্বহীন মানুষকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। ইনাম আহমেদ চৌধুরী বা তৈমুর আলম খন্দকারের মতো নেতাকে মনোনয়ন দেয়া হলো না। কোনো কোনো আসনে পাঁচজনের অধিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেয়া হলো। যে টাকা বেশি দিয়েছে তাকেই চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।

এ অবস্থায় বিএনপির প্রতি মানুষ কোনোভাবেই আস্থা রাখেনি। ফলে নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন আছে, আমি তা মনে করি না। বিএনপির অযোগ্যতায় আমরা ভোট পেয়েছি।

জাগো নিউজ : অভিযোগ উঠেছে রাত থেকেই ব্যালটে সিল মারা হয়েছে। কেন্দ্র দখল, এজেন্টদের বের করে দেয়া, পুলিশের পক্ষ থেকেও সিল মারার অভিযোগ তুলেছে বিরোধীপক্ষ?

রেজাউল করিম : রাতে ভোটগ্রহণ হয়েছে, এমন দৃশ্য কোনো মিডিয়া দেখাতে পারেনি। মোবাইলেও কোনো ধারণ করা চিত্র কেউ দেখাতে পারেনি। বিদেশি পর্যবেক্ষকরাও অনিয়মের কথা বলতে পারেননি।

এ কারণে আমি মনে করি, বিএনপির অভিযোগ হচ্ছে গতানুগতিক। রাজনৈতিক স্ট্যান্ডবাজি ছাড়া এ অভিযোগের কোনো গুরুত্ব নেই।

আরও পড়ুন >> আইন মন্ত্রণালয় এখন ঠুঁটো জগন্নাথ

জাগো নিউজ : উন্নয়নের আড়ালে গণতন্ত্র চাপা পড়ছে, এমন অভিযোগ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদেরও। এ প্রসঙ্গে আপনার বক্তব্য কী?

রেজাউল করিম : উন্নয়নের আড়ালে গণতন্ত্র চাপা পড়ছে না। গণতন্ত্র তার নিজের মতো করে এগিয়ে যাচ্ছে। এ উপমহাদেশে কোনো সরকারপ্রধান বিরোধীপক্ষের সঙ্গে দিনের পর দিন সংলাপে বসেছেন, এমন নজির আছে বলে আমার জানা নেই। শেখ হাসিনা সে নজির স্থাপন করেছেন। এমনকি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গেও একাধিকবার বসলেন।

শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রেখেই সবাই নির্বাচনে অংশ নিলেন। নির্বাচনের দিন দুপুরেও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বললেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে। নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর অবস্থান পাল্টালে তার দায় সরকারের নয়।

এবারের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। এবারের নির্বাচনে গণতন্ত্র আরও বিকশিত হয়েছে।

জাগো নিউজ : গণতন্ত্র বিকশিত করতে শক্তিশালী বিরোধী দল দরকার। সংসদ সত্যিকার বিরোধী দলহারা। এ প্রশ্নে কী বলবেন?

রেজাউল করিম : হ্যাঁ, সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় শক্তিশালী বিরোধী দল থাকা জরুরি বলে মনে করি। কিন্তু বিরোধী দলের অর্থ এই নয় যে, সরকারকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করতে হবে। অথবা বয়কটের মধ্য দিয়েই নিজের অবস্থান জানান দিতে হবে।

সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে যারা সংসদে কার্যকর ভূমিকা রাখেননি, তারা গণতন্ত্র বিকাশেও ভূমিকা রাখতে পারেন না। বরং গত সরকারে জাতীয় পার্টি শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছে। সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করেছে।

তবে আমরা চাই, বিরোধী দল আরও কার্যকর ভূমিকা রাখুক। এবার জাতীয় পার্টি সরকারের অংশীদারিত্বে নেই। তারা ভালো ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি।

বিরোধী দল তার ভূমিকা রাখতে না পারলে তারাও হারিয়ে যাবে। এক সময়ের শক্তিশালী বিরোধী দল এখন বাটি চালান দিয়েও খুঁজে পাওয়া যায় না। শক্তিশালী দল জাসদ ভেঙে এখন টুকরো টুকরো। ন্যাপের খবর কেউ জানে না। এরা আদর্শভিত্তিক দল ছিল। তাই এমন করুণ অবস্থা। আর বিএনপি তো আদর্শহীন দলছুট মানুষের দল। তাদের নিজস্ব কোনো আদর্শ নেই।

ক্ষমতার ভাগাভাগির জন্যই বিএনপির সৃষ্টি। আর আওয়ামী লীগ আজ থেকে ৭০ বছর আগে রাজপথে সৃষ্টি হয়েছিল। বিএনপি তার অবস্থান পরিবর্তন না করলে আর কখনোই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। সৃজনশীল রাজনীতি না করলে মুসলিম লীগের মতো অবস্থা হবে বিএনপির।

জাগো নিউজ : ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিতদের ব্যাপারে কী বলবেন?

রেজাউল করিম : আমরা চাই যে কয়টি আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন, তারা সংসদে আসুক। সবাই সংসদে এসে সোচ্চার ভূমিকা রাখুক। সরকারের ভুল জোরালোভাবে ধরিয়ে দিক।

আরও পড়ুন >> দেশে এখনও পরিপূর্ণ আইনের শাসন বাস্তবায়ন হয়নি

শেখ হাসিনা বারবার বলেন, জনগণ রায় দিলে আছি, না দিলে নেই। তিনি বলেন, রাজনীতি মানুষের কল্যাণের জন্য। এ কারণেই শেখ হাসিনার সন্তানরা দুর্নীতিমুক্ত। শেখ হাসিনা বিশ্বের সৎ প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রিসভায় শেখ হাসিনা তার কোনো স্বজনকে রাখেননি। তার এ অবিরাম প্রচেষ্টা কোনোভাবেই আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না। এ প্রচেষ্টায় বিরোধীরাও শরিক হোক, এমনটি প্রত্যাশা করি।

জাগো নিউজ : এবার মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের শরিক দলের নেতারাও বাদ পড়েছেন। এটি কীভাবে দেখছেন?

রেজাউল করিম : মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়লেও তারা আমাদের সঙ্গেই আছেন। তারা সবাই সংসদে আসবেন। সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় সবাই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবেন।

পদ হারিয়ে কোনো মন্ত্রী এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার ক্ষোভ প্রকাশ করেননি। এর মধ্য দিয়েই আনুগত্য প্রকাশ পায়। আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিমের মতো নেতারা মন্ত্রিসভায় নেই। সুতরাং রাশেদ খান মেনন বা হাসানুল হক ইনু সাহেবরা মন্ত্রিসভার রদবদলকে স্বাভাবিকভাবেই দেখবেন বলে বিশ্বাস করি। আমরা একটি জোটে থেকে গণমানুষের জন্য, দেশের জন্য কাজ করে যেতে চাই।

জাগো নিউজ : জামায়াতকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধ করার আলোচনা হচ্ছে ফের। এ নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?

রেজাউল করিম : জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে আইনমন্ত্রী ইতোমধ্যে বক্তব্য রেখেছেন। আইনিভাবেই জামায়াতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা জামায়াতের ব্যাপারে সব সময় সোচ্চার।

আমরা জামায়াতকে কোনো জায়গা দিতে চাই না। কিন্তু ড. কামাল হোসেনরা কৌশলে জামায়াতের পক্ষ নিলেন। তারা হচ্ছেন বর্ণচোরা। তারা মুখে এক, বাইরে আরেক। আওয়ামী লীগ তার রাজনৈতিক কৌশল দিয়েই জামায়াত বা উগ্রবাদী শক্তিকে বিতাড়িত করবে।

জাগো নিউজ : জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে কোনো আইনি জটিলতা আছে কিনা?

রেজাউল করিম : বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয় বলতে পারবে। আমার বিশ্বাস জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে যা করার তাই করা হবে। জামায়াতকে রাজনৈতিক মাঠ থেকে বিতাড়িত করবই।

জাগো নিউজ : বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করা হলেও বিচার বিভাগ মূলত আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনেই রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

রেজাউল করিম : এ অভিযোগ তথ্যগতভাবে সত্য নয়। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য যে আইন হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে- বিচারক নিয়োগ, তাদের বদলি এবং পদোন্নতির মতো বিষয়গুলো জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। যার প্রধান হচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি। সেখানে সরকারের কেউ নেই। কারও বদলি করার ক্ষমতা নেই আইন মন্ত্রণালয়ের।

জাগো নিউজ : রাজনৈতিক মামলায় হাজার হাজার আসামি। হয়রানির অভিযোগ বাড়ছেই…

রেজাউল করিম : রাজনৈতিক মামলায় হয়রানি হচ্ছে না, এ কথা বলা যাবে না। পুলিশ অনেক সময় রাজনৈতিক ব্যানার ব্যবহার করে মামলা দিচ্ছে, হয়রানি করছে। এ অভিযোগ আমাদের কাছে আসছে। আমরা অবশ্যই তা খতিয়ে দেখব।

আরও পড়ুন >> দেশ মানুষ ও বিচার বিভাগের কল্যাণেই আইন প্রণয়ন

তবে মানুষের বিচার পাওয়ার পথ যে রুদ্ধ হয়েছিল, তা এই শেখ হাসিনার সরকার খুলে দিয়েছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার হবে তা কেউ কল্পনা করেননি। এ দুঃসাহস শেখ হাসিনা দেখিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার হয়েছে। ২১ আগস্টের হামলার বিচার হয়েছে। জেলহত্যা মামলার বিচার করা হয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিশ্বজিৎ রায়কে হত্যার বিচার করে ছাত্রলীগের কর্মীদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় মন্ত্রীর জামাইও রক্ষা পাননি। খুনিদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচারও করা হলো। খালেদা জিয়া, তারেক রহমানও অপরাধ করে পার পাননি। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নন, এটি শেখ হাসিনা প্রতিষ্ঠা করেছেন।

এ কারণেই মানুষ এখন মনে করে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে সরকার বিচারের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করেছে। মানুষ সরকারের এ দৃঢ়তাকে স্বাগত জানিয়েছে।

এএসএস/এনডিএস/এমএআর/আরআইপি

আরও পড়ুন