ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষমতা রাখে না এই কমিশন

সায়েম সাবু | প্রকাশিত: ০৬:৪৫ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি। নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটেরও।

বামপন্থী এ রাজনীতিকের জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৬ এপ্রিল ঢাকার অদূরে সাভারে। স্কুলছাত্র থাকাকালীন ১৯৬৬ সালে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে মিছিল করতে গিয়ে কারাবরণ করেন। কলেজে পা দিয়েই সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন বামপন্থী ছাত্র আন্দোলন ও রাজনীতিতে। এ সময় গোপনে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গেও যুক্ত হন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি ছিলেন। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) প্রথম সহ-সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স ও মাস্টার্স করেন সেলিম।

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও রাজনীতি প্রসঙ্গে মুখোমুখি হন জাগো নিউজ’র। নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতমূলক আচরণে নির্বাচনের মাঠ সংঘাতময় হচ্ছে বলে মনে করেন। এবার নির্বাচন ব্যর্থ হলে বিপদ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। দুই জোটের বাইরে মানুষ বিকল্প বামবলয়ে আসতে চাইছে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে প্রথমটি

জাগো নিউজ : পরিবেশ ছিল না বলে ২০১৪ সালে নির্বাচনে অংশ নিলেন না। এবার বাম গণতান্ত্রিক জোট গঠন করে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। নির্বাচনের পরিবেশ কেমন দেখছেন?

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করে ১৯৭১ সালে যে বিজয় আমরা এনেছিলাম, তা মূলত ছিনতাই হয়ে গেছে। লড়াই ছাড়া হারানো বিজয় পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়।

এ লড়াইয়ে প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদ। প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে ধনিক শ্রেণি, সাম্প্রদায়িক শক্তি। যে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি ক্ষমতায় আছে, সেই শক্তিকে পরাজিত করতে পারলেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরে আসবে।

সংগ্রামের মধ্য দিয়েই সমাজ পরিবর্তন হয়। গণতান্ত্রিক সমাজে নির্বাচন এমনই একটি সংগ্রাম। কোনো কোনো সময় নির্বাচনে অংশ নেয়া সংগ্রাম, আবার নির্বাচন বর্জনও সংগ্রাম।

২০১৪ সালে একটি তামাশার নির্বাচন হয়েছিল। ওই নির্বাচন নিয়ে প্রহসনের শেষ ছিল না। ওই নির্বাচনকে নিয়ম রক্ষার নির্বাচন বলে উল্লেখ করেছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রীও। সুতরাং আওয়ামী লীগের নিয়ম রক্ষার নির্বাচনে তো আমরা অংশ নিতে পারি না।

তবে এখন আমরা মনে করেছি, সংগ্রামের কৌশল হিসেবে বর্জনের চেয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়াই উপযুক্ত হবে। বলতে পারেন, কৌশলী অবস্থানে আমরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছি।

জাগো নিউজ : এবার কী এমন কৌশল পেলেন যে নির্বাচনে অংশ নেয়াই উপযুক্ত?

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : বিশেষ একটি উপাদানকে সামনে এনে এর ব্যাখ্যা দেয়া ঠিক হবে না। আন্দোলনের গতি বাড়াতেই নির্বাচনে অংশ নেয়া। ভারসাম্যের দিক বিবেচনা করেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মূলত, মূল আন্দোলন এগিয়ে নেয়ার স্বার্থেই আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি।

জাগো নিউজ : এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জন-আস্থা মিলবে?

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : আমরা আন্দোলনের মধ্যেই আছি। সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলন, প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার আন্দোলন, যৌন নির্যাতনবিরোধী আন্দোলন, হাওরের মানুষের জন্য আন্দোলন, গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সম্প্রতি আমরা জনসংযোগ বাড়িয়েছি। নির্বাচনে অংশ নিয়ে এই জন-আস্থা আরও বাড়াতে চাই।

জাগো নিউজ : বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, এমন পরিস্থিতে নির্বাচনে গিয়ে বামপন্থীরা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে…

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : আমি এ ব্যাখ্যার সঙ্গে একমত পোষণ করছি না। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হচ্ছে বটে, তবে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হচ্ছে না। এ কমিশন (নির্বাচন কমিশন) কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষমতা রাখে না। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আর নিরপেক্ষ নির্বাচন এক বিষয় নয়। তাই বলে যতদিন পর্যন্ত নিরপেক্ষ নির্বাচন না হবে ততদিন আমাদের নির্বাচন বর্জন করে যেতে হবে-এটা বিশ্বাস করি না। বিভিন্ন দেশের বিপ্লবের অভিজ্ঞতা এবং মার্কসবাদী যুক্তি এটা মনে করে না।

লুটেরা ও ধনিক গোষ্ঠীর উচ্ছেদ ছাড়া আপনি আমাদের সমাজে অবাধ নির্বাচন প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন না। প্রশ্ন হচ্ছে, শুধু বর্জন করেই কী লুটেরাদের উচ্ছেদ করা সম্ভব? আমরা তা মনে করি না। প্রয়োজনে নির্বাচনে অংশ নিতে হয়, আবার প্রয়োজনেই বর্জন করতে হয়। দুটি কৌশল অবলম্বন করেই মানুষের কাছে যাওয়া সম্ভব বলে মনে করি।

জাগো নিউজ : সরকার একতরফা নির্বাচনের আয়োজন করছে বলে অভিযোগ করছেন। এমন অভিযোগ ২০১৪ সালেও করেছিলেন। তাহলে এমন নির্বাচনে গিয়ে পরাজয় শোচনীয় করে লাভ কী?

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : এ ধরনের চিন্তার সঙ্গে আমি একমত নই। আমরা লড়াই করে অধিকার ফিরে পেতে চাই। কিন্তু লড়াইটা ছোট বলে করব না, তা মনে করার কোনো কারণ নেই। সূর্যসেন জীবন দিয়ে স্বাধীনতা দেখে যেতে পারেননি। তাই বলে তাকে ব্যর্থ বলা যাবে না। কার্ল মার্কস কোথাও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। তাই বলে তাকে ব্যর্থ বলা যায় না! আন্দোলন হচ্ছে চলমান প্রক্রিয়া।

জাগো নিউজ : কিন্তু ভোটের হারে সেই আন্দোলন ম্লান হতে পারে কিনা? অতীতের ভোটের অভিজ্ঞতা তাই প্রমাণ করে কিনা?

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : ম্লান হবে কেন? আমরা মানুষের কাছেই তো যাচ্ছি। মানুষ সাড়া দিচ্ছে। আমাদের ওপর মানুষ আস্থা রাখছে। এখন সরকার যদি সে আস্থায় বাধা দেয়, তা দেখার জন্যও তো নির্বাচনে অংশ নেয়া জরুরি।

জাগো নিউজ : কিন্তু ভোটের ফলাফলে...

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : গণতান্ত্রিক মাঠে ভোটের ফলাফল অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এটিই একমাত্র অবলম্বন নয়। এটি বুর্জোয়ারা মনে করতে পারেন। তাহলে আমরা মাফিয়াদেরই মনোনয়ন দিতাম। আমরা সব প্রতীককে অগ্রসর করেই সংগ্রামের সফলতা আনতে চাই।

এএসএস/এনডিএস/এমএস

আরও পড়ুন