ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

ঢাকার মাঠে এগিয়ে নৌকা, পিছিয়ে ধানের শীষ

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৫:৩৫ পিএম, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি মাত্র ১৪ দিন। ভোট চাইতে ইতোমধ্যে ঢাকঢোল পিটিয়ে সড়কে সড়কে ঘুরছেন প্রার্থীরা। সরব প্রার্থীদের অধিকাংশই সরকারি দলের। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এখনও প্রচারণার মাঠ গরম করতে পারেনি।

সরেজমিন রাজধানীর কয়েকটি নির্বাচনী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সর্বত্র নৌকা প্রতীকের পোস্টার। প্রার্থীদের কেউ কেউ বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী ক্যাম্প অফিস বসিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। কেউ কেউ বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইছেন। আবার কেউ অনলাইনে নিজের পেজ খুলে উন্নয়ন কার্যক্রমের চিত্র তুলে ধরে প্রচারণা করছেন। কিন্তু ধানের শীষের কোনো প্রার্থীকে মাঠে নিয়মিত সরব হতে দেখা যায়নি।

গত সাতদিনে ঢাকা–৮ আসনের বিএনপিপ্রার্থী মির্জা আব্বাস, আফরোজা আব্বাস এবং ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করা গণফোরামের মোস্তফা মোহসীন মন্টু ছাড়া কাউকে প্রকাশ্যে এবং হইহুল্লোড় করে প্রচারণায় নামতে দেখা যায়নি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে লিফলেট বিতরণ করলেও নিজ নিজ এলাকার দেয়ালে তাদের কারো পোস্টার চোখে পড়েনি।

সরেজমিন ঢাকা-৬ আসনে (সূত্রাপুর-কোতোয়ালি) গিয়ে দেখা গেছে, মহাজোট সমর্থিত নৌকার মাঝি কাজী ফিরোজ রশিদের পোস্টার। এ আসনে ধানের শীষ প্রতীক পেয়েছেন গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী। গতকাল শুক্রবার বিকেলে ধানের শীষের পক্ষে ধোলাইখালের সাদেক হোসেন খোকা খেলার মাঠে প্রচারণার উদ্বোধনের কথা ছিল ড. কামাল হোসেনের। তবে সেটি শুরু করা যায়নি।

jagonews

এ বিষয়ে সুব্রত চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, মাঠটি আগে থেকেই পুলিশ সদস্যরা ঘিরে রেখেছিল। আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারে সাদা পোশাকেও পুলিশ ছিল। তাই গ্রেফতার এড়াতে প্রচারণা স্থগিত করা হয়।

তবে ফেসবুকে সুব্রত চৌধুরীকে ধানের শীষের পক্ষে এবং আওয়ামী লীগের বিপক্ষে কিছু পোস্ট শেয়ার করতে দেখা গেছে।

ঢাকা-৭ আসনে নৌকার হেভিওয়েট প্রার্থী হাজী সেলিমের ধারেকাছেও নেই গণফোরামের ধানের শীষ প্রতীকের মোস্তফা মোহসীন মন্টু। আওয়ামী লীগের আবুল হাসনাত ও মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনকে পেছনে ফেলে মনোনয়ন পাওয়া হাজী সেলিম ইতোমধ্যে পুরো এলাকা ঘুরে ফেলেছেন। পোস্টার, ব্যানার, গান ও মতবিনিময় সভার মাধ্যমে পুরোদমে চালাচ্ছেন প্রচারণা। ঢাকা উত্তর মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগের সভাপতি এবং দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনকে নিয়ে একাধিক মতবিনিময় সভা করেছেন তিনি। আদায় করেছেন তাদের সমর্থনও। এছাড়া বোরকা পরে মেয়েরা চকলেট হাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হাজী সেলিমের জন্য ভোট চাচ্ছেন। হাজারীবাগ এলাকা ঘুরে এলাকাবাসীর মধ্যে নিজ হাতে কমলা বিতরণও করেন তিনি।

অপরদিকে, কেরানীগঞ্জের গণফোরাম নেতা মন্টুকে চেনেন না এলাকাবাসী। দীর্ঘ ৬২ বছর ধরে লালবাগে বসবাস করা জাহেদ-উর রহমান বলেন, উনি কেরানীগঞ্জে রাজনীতি করেছেন। লালবাগ, চকবাজার, বংশাল ও কোতোয়ালি থানার অধিকাংশ মানুষই তাকে চেনেন না। তিনি এখনও সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে ভোট চাননি, আলোচনায়ও নেই।

এ বিষয়ে মোস্তফা মোহসীন মন্টু জাগো নিউজকে বলেন, শুক্রবার আমি আজিমপুরে নামাজ পড়ে গণসংযোগ করি। সেখানে ১০ হাজার মানুষের একটি মিছিল নিয়ে নির্বাচনী এলাকা প্রদক্ষিণ করি। এ আসনের অধিকাংশ মানুষই ধানের শীষের সমর্থক।

শুক্রবার জুমার নামাজের পর এ আসনে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে তারেক আদেলকেও প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে।

ঢাকা-৮ আসনে গিয়ে দেখা যায়, মগবাজার, রমনা ও বাংলামোটর এলাকাজুড়ে শুধুমাত্র নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেয়া বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেননের পোস্টার। একই আসনে মহাজোটের শরিক লাঙ্গলের আরেক প্রার্থী থাকলেও আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ক্যাম্পগুলোতে চলছে শুধুই মেননের প্রচারণা।

এ আসনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন মো. ইউনুছ আলী আকন্দ। বেইলি রোডের ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আশপাশে তার হাতেগোনা কয়েকটি পোস্টার দেখা গেলেও অন্যসব এলাকায় প্রচারণা চালাননি তিনি। এ নির্বাচনী এলাকায় গত ২০ বছর ধরে বসবাস করছেন- এমন তিন বাসিন্দাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা কেউ ইউনুছ আলী আকন্দকে চেনেন না বলে দাবি করেন।

এ আসনে বিএনপির অন্যতম প্রার্থী মির্জা আব্বাস উদ্দীন আহমেদ (মির্জা আব্বাস)। স্ত্রী-কর্মীসহ কয়েকদিন প্রচারণা চালিয়েছেন তিনি। এ আসনে মোট ১৪ প্রার্থী থাকলেও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. আবুল কাশেম (হাতপাখা) ছাড়া এলাকায় অন্য কাউকে প্রচারণা করতে দেখা যায়নি।

ঢাকা-৯ আসনে আওয়ামী লীগের ‘ক্লিন ইমেজের প্রার্থী’ সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে সমানে সমান প্রচারণা চালাচ্ছেন বিএনপির আফরোজা আব্বাস। প্রতিদিন সবুজবাগ-মুগদা এলাকা ঘুরে প্রচারণা চালানোসহ লিফলেট বিতরণ করছেন তিনি।

ঢাকা শহরে সবচেয়ে বেশি ধানের শীষের পোস্টার দেখা গেছে ঢাকা-১১ (রামপুরা-বাড্ডা) আসনে। এ আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন আব্দুল কাইয়ুমের স্ত্রী শামীম আরা বেগম। প্রতিদিন এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে দাঁড়িয়ে লিফলেট বিতরণ করতে দেখা যায় তাকে। দেয়ালে তার পোস্টারও কম নয়। এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে এ কে এম রহমতুল্লাহ নির্বাচন করছেন। এলাকায় তিনিও জোরেশোরে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

ঢাকা-১২ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তার প্রচারণাও চলছে জোরেশোরে। গত তিনদিন বিজয় সরণি ফুটওভার ব্রিজের নিচে পথসভা, মহাখালীর আড়জতপাড়ায় পথযাত্রাসহ প্রতিদিন ২-৩টি স্থানে সমাবেশ করছেন তিনি। ফেসবুকে নিজের ভেরিফাইড পেজেও চলছে প্রচারণা। তবে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সাইফুল আলম নিরবের পোস্টার চোখে পড়েনি এলাকায়।

jagonews

এ আসনে লড়াইয়ের মাঠে আছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মো. জোনায়েদ আব্দুর রহিম সাকি (জোনায়েদ সাকি)। কোদাল প্রতীকে নির্বাচন করা সাকি এলাকায় পরিচিত হলেও সরকারদলীয়দের কারণে তিনি প্রচারণায় সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে দাবি করেন।

হেভিওয়েটদের ছড়াছড়ি ঢাকা-১৭ আসনে সমানে সমান প্রচারণা চালাচ্ছেন নৌকার মাঝি আকবর হোসেন পাঠান ফারুক (নায়ক ফারুক) এবং মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। গান গেয়ে প্রচার শুরু করা ফারুক এবং বিদেশে চিকিৎসা নেয়া এরশাদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে গোটা গুলশান-বনানী-ভাষাণটেক এলাকা। শুক্রবার পর্যন্ত মাঠে নামেননি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়া বিজেপির প্রার্থী আন্দালিব রহমান পার্থ। প্রচারণা নিয়ে ফোনে কথা বলতেও রাজি হননি তিনি।

তবে গুলশানের ‘সিংহ’ হওয়ার ইচ্ছা নিয়ে শুক্রবার এলাকায় প্রচারণা চালিয়েছেন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। এদিন ভাষাণটেক মসজিদে জুমার নামাজ পড়ে প্রচারণায় নামেন তিনি। মুসল্লিদের সঙ্গে কোলাকুলিও করেন। প্রচারণা ও নিজের অবস্থান নিয়ে জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী পরিবেশ ভালো। আশা করছি জয় পাবো।’ সিংহ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন তিনি।

ঢাকা-১৭ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. আমিনুল হক তালুকদার (হাতপাখা) ছাড়া আর কাউকে প্রচারণা চালাতে দেখা যায়নি।

এআর/এমএআর/আরআইপি

আরও পড়ুন