রোহিঙ্গাদের কারণে তহবিলে টান, নির্বাচনে অনীহা পর্যবেক্ষকদের
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে আগের মত আসছে না বিদেশি সংস্থাগুলো। না আসার কারণ হিসেবে তারা বলছে, রোহিঙ্গা সংকটের কারণে অনেক অর্থ খরচ হয়েছে। একই কারণ দেখাচ্ছে দেশি সংস্থাগুলোও। তাই বিগত সংসদ নির্বাচনের চেয়ে এবার কম পর্যবেক্ষক আসবে।
জানা যায়, আন্তর্জাতিক সংকট হিসেবে বাংলাদেশের নির্বাচন নয়, রোহিঙ্গা সমস্যাকেই বড় করে দেখছে আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো। এজন্য শুক্রবার নির্বাচন কমিশনের কাছে একটি চিঠিও দিয়েছে কয়েকটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান। সেই চিঠিতে আগের মত বেশি সংখ্যক পর্যবেক্ষক না পাঠানোর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলা হয়- এজন্য বাংলাদেশ দায়ী নয় বরং রোহিঙ্গা সংকটকে বেশি গুরুত্ব দেয়ায় তারা এবার বেশি সংখ্যক পর্যবেক্ষক পাঠাতে পারছেন না।
সূত্র জানায়, ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে এবার কেন্দ্র ও ভোটার সংখ্যা দুটিই বেড়েছে। কমছে শুধু পর্যবেক্ষক। সেই নির্বাচনে ৩৫ হাজার ২৬৩টি ভোট কেন্দ্র ছিল। ভোটার ছিল ৮ কোটি ১ লাখ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রায় ৪২ হাজার ভোট কেন্দ্র। আর ভোটার প্রায় ১০ কোটি ৪১ লাখ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে রেকর্ড ৫৯৩ জন বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন। আর এ নির্বাচনে দেশি পর্যবেক্ষকের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৫৯ হাজার ১১৩ জন। ইসির তথ্য অনুযায়ী অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩২টি দেশের ২১৫ জন পর্যবেক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন।
তবে ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইতিহাসে সবচেয়ে কম ৪ জন বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসেন। এর মধ্যে ভারত থেকে ২ জন আর ভুটানের ২ জন বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, পর্যবেক্ষকরা অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে ভূমিকা পালন করে। এবার তারা যদি না আসতে চান, সেটি কোনো ভালো ইঙ্গিত নয়। তবে ফান্ডের অভাবে না আসতে পারলে আমাদের করার কিছু নেই। রোহিঙ্গা সমস্যার কারণে বিশ্বব্যাপী যে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে তারই একটি ছোট্ট নমুনা এটি।
ইসি সূত্র জানায়, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) এবার বড় আকারের কোনো পর্যবেক্ষক পাঠাচ্ছে না। এবার দুই সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ মিশন আসছে। ডেভিড নোয়েল ওয়ার্ট ও আইরিন মারিয়া গুনারি আগামী দুই একদিনের মধ্যে ঢাকায় আসবেন। থাকবেন দুই মাস। এর মধ্যে তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের সঙ্গে কথাও বলবেন।
বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে নিববন্ধিত দেশীয় ১১৮টি সংগঠন। এবার নির্বাচনে কোন সংগঠনের কতজন অংশ নিবে তা জানতে চেয়ে ইসি চিঠি দিয়েছে তাদের। আগামী রোববারের মধ্যে তাদের তালিকা পাঠাতে বলেছে ইসি।
এ বিষয়ে পর্যবেক্ষকদের সংগঠন ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডাব্লিউজি) চেয়ারম্যান আবদুল আওয়াল জাগো নিউজকে বলেন, বিগত নির্বাচনে আমরা প্রায় ৭০ হাজার পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছিলাম। এবার আমরা অর্থ সংকটের কারণে কম পর্যবেক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এবার ৪০ হাজারের মত পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। রোহিঙ্গা সংকটের কারণে এবার আমরা বিদেশ থেকে ফান্ড পাচ্ছি না। তারা বলছেন- রোহিঙ্গা সমস্যা মোকাবেলা করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
পর্যবেক্ষক সংস্থা লাইট হাউসের প্রধান নির্বাহী হারুন উর রশীদ জাগো নিউজকে বলেন, গত সংসদ নির্বাচনে আমরা সাড়ে পাঁচ হাজার পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছিলাম। বিদেশি সাহায্য না পাওয়ায় এবার ৮০০ জনকে মাঠে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। গতবার আমরা ভোট কেন্দ্রে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিলেও এবার শুধু মোবাইল পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেব। যারা এক কেন্দ্র থেকে অন্য কেন্দ্র ঘুরে দেখবেন।
আরেক পর্যবেক্ষক সংস্থা কোস্ট ট্রাস্ট এর সহকারী পরিচালক ও প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল আকন্দ জাগো নিউজকে বলেন, বিগত নির্বাচনে আমরা তিন হাজার ৯শ পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছিলাম। এবার ১১’শ নিয়োগে দেব।
ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত রেঞ্চা টিয়েরিংক বেশ কয়েক মাস আগেই বড় আকারের পর্যবেক্ষক মিশন না পাঠানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, শেষ পর্যন্ত ইইউ যদি পর্যবেক্ষক মিশন না পাঠায় তবে তার জন্য বাংলাদেশ-পরিস্থিতি কোনোভাবেই দায়ী নয়। তহবিলের ঘাটতিই এর মূল কারণ।
জানা গেছে, দেশ থেকে পর্যবেক্ষক না পাঠালেও বাংলাদেশের দূতাবাসে কর্মরত অনেককেই তারা একাজে নিয়োগ দিবেন।
কতটি বিদেশি সংস্থা এবারের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে- এমন প্রশ্নে ইসির যুগ্মসচিব এস এম আসাদুজ্জামান বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণে কিছু কিছু বিদেশি সংস্থা এরই মধ্যে আগ্রহ দেখিয়ে ইসির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আগামী ২০ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারবো।
এইচএস/জেএইচ