ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

৭ দিনের সংলাপ, অর্জন কী?

সায়েম সাবু | প্রকাশিত: ০৭:০৭ পিএম, ০৭ নভেম্বর ২০১৮

রাজনীতির ঘূর্ণিপাক এখন সংলাপে। যদিও ‘আপাতত’ সংলাপের আনুষ্ঠানিক দিনক্ষণ শেষ হচ্ছে আজ বুধবারই। তবে আলোচনার রেশ থাকছে সংলাপ ঘিরেই। কী অর্জন হলো সাতদিনের আলোচনায়, রাজনীতির চলমান জট কী খুলবে, নাকি ফের আন্দোলনেই সমাধান, সংলাপের টেবিল থেকে কোথায় যাচ্ছে রাজনীতি- এমন সব প্রশ্ন এখন জনমনে।

সম্প্রতি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের চিঠির জবাবে সংলাপে বসার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। গত ১ নভেম্বর থেকে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে টানা সাতদিন সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বা জোটের সঙ্গে একবার করে সংলাপ অনুষ্ঠিত হলেও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে দুই দফা বৈঠকে বসে ক্ষমতাসীনরা।

মূলত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং ক্ষমতাসীনদের মধ্যকার সংলাপ নিয়েই নানা আগ্রহ এবং কৌতূহল দেখা দেয় রাজনীতিতে। তবে এখনও উভয়পক্ষ তাদের স্ব-স্ব অবস্থানে অনড়।

সংলাপের অর্জন নিয়ে প্রশ্ন করা হয় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাককে। সংলাপে অংশ নেয়া এই রাজনীতিক বলেন, ‘আলোচনার টেবিলে বসতে পারাও একপ্রকার অর্জন বলে মনে করি। সংকট উত্তরণে আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। সেদিক বিবেচনা করেই প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে। সাতদিন ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। সংবিধান এবং আইনের ওপর আস্থা রেখে সরকার যে অবস্থান জানিয়েছে, তার সঙ্গে অনেকেই একমত পোষণ করেন, আবার অনেকে করেননি।’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দাবির ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘তাদের (জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট) সাত দফার কয়েকটির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। রাজনৈতিক মামলার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন। সংলাপে বসা হয়েছে বলেই বিষয়টি সামনে এসেছে। সংসদ ভেঙে দেয়া, নির্বাচনকালীন সরকার, সেনাবাহিনীর বিচারিক ক্ষমতার বিষয়গুলো সংবিধানসিদ্ধ নয়। এগুলো নাকচ করে দেয়া হয়েছে। তবে আলোচনা আরও হতে পারে।’

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না অবশ্য সংলাপকে ‘আপাতত অসফল’ বলেই মনে করছেন। তিনি বলেন, ‘যে কারণে রাজনৈতিক সংকট, তা আমরা স্পষ্ট করে ব্যাখ্যা করেছি। সংসদ ভেঙে না দিয়ে একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠন না করলে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না। সংকট মূলত এখানেই। ক্ষমতাসীনরা মূলত এই প্রশ্নে সংবিধানের দোহাই দিচ্ছেন। অথচ সংবিধানেই সমাধান রয়েছে। মানুষের কল্যাণেই সংবিধান, আর সংবিধান বহুবার সংশোধন করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হলে সবার মঙ্গল। নইলে আন্দোলনের বিকল্প থাকবে না, আর তাতে নতুন করে কোনো সংকট সৃষ্টি হলে সরকার দায় এড়াতে পারবে না।’

একই বিষয় নিয়ে কথা হয় রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘একমাত্র সংলাপেই সমাধান আসবে- এমন সভ্য জাতি এখনও আমরা হইনি। রাজনীতিতে সংলাপ আগেও দেখেছি। ব্যর্থ হয়েছে। আবার সংলাপকে কেন্দ্র করেই নতুন করে সংকট তৈরি হয়েছে।’

‘সংলাপ আলোচনায় সাধারণ মানুষের ভরসা কতটুকু ছিল সেটাও এখন প্রশ্নের ব্যাপার। কারণ লোক দেখানো সংলাপ এবং এর ফলাফল নিয়ে জনগণ অবগত। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে আন্দোলনের সঙ্গে সবাই পরিচিত। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এদেশে পরিবর্তন এসেছে। আমি মনে করি, গত সাতদিনের সংলাপে সংকট উত্তরণে দৃশ্যমান কোনো পথ বের হয়নি।’

একই ধরনের মন্তব্য করেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও ‘সুজন’র (সুশাসনের জন্য নাগরিক) সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারও। তিনি বলেন, ‘বল সরকারের কোর্টে এবং তা যথাযথভাবেই নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে। সংলাপের সময়ও আমরা গ্রেফতার, মামলা দেখেছি। আগামীকাল তফসিল। রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার হচ্ছে এখনও। এ থেকেই প্রমাণিত হয় আসলে সংলাপের অর্জন কী? সরকার যে কোনো উপায়ে একটি নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসতে মরিয়া। সংলাপ আলোচনায় সাড়া দিয়ে সাতটি দিন পার করলো মাত্র।’

‘রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে সংকট আরও বাড়বে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, ‘২০১৪ সাল আর ২০১৮ সাল এক বিষয় নয়। সরকার নিজেও তা উপলব্ধি করছে। আঞ্চলিক রাজনীতিও পরিবর্তন হচ্ছে। আন্দোলনে যে সমাধান আসে, তা টেকসই হয় না। সুতরাং আপাতদৃষ্টিতে সংলাপ ব্যর্থ হলেও আলোচনার মাধ্যমেই সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। এজন্য হয়তো আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে।’

এএসএস/এমএআর/জেআইএম

আরও পড়ুন