ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

নির্বাচনের আগে পদোন্নতির হিড়িক

মাসুদ রানা | প্রকাশিত: ০৩:৩৫ পিএম, ০৩ নভেম্বর ২০১৮

আগামী ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারির শুরুতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই হিসেবে নির্ধারিত মেয়াদের শেষ সময়ে বর্তমান সরকার। কিন্তু কয়েক মাস ধরে প্রশাসনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। অনেকেই বলছেন, নির্বাচন সামনে রেখে কর্মকর্তাদের খুশি রাখতে যেন পদোন্নতির হিড়িক পড়েছে।

শেষ সময়ে এসে সরকার প্রশাসনের বিষয়ে কোনো ঝুঁকি নিতে চাইছে না। যে প্রান্ত থেকে দাবি আসছে, সেটাই পূরণের চেষ্টা করছে সরকার। শুধু পদোন্নতি নয়; পদমর্যাদা উন্নীতকরণ, আর্থিক সুবিধা চালু ও বৃদ্ধিকরণ এবং সুবিধাজনক পদায়নের মাধ্যমেও সরকার কর্মকর্তাদের সন্তুষ্ট রাখতে চাইছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘পদোন্নতির একটা নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন আছে। তা অনুসরণ করে পদোন্নতি হচ্ছে কিনা- সেটাই হচ্ছে বিষয়। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সবসময়ই গুরুত্ব দেয়া হয়। দরকার হোক বা না হোক তাদের পদোন্নতির বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে নেই।’

সাবেক মহাহিসাবরক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) হাফিজ উদ্দিন আরও বলেন, ‘আমরা দেখছি নির্বাচনের আগে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের উদ্বোধন হচ্ছে। পদোন্নতির মাধ্যমে কর্মকর্তাদের খুশি রাখার বিষয়টিও আছে বটে।’

নির্বাচনের আগে প্রশাসনে অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিবের পর সর্বশেষ গত ২৪ অক্টোবর উপ-সচিব পদে পদোন্নতি দিয়েছে সরকার। সিনিয়র সহকারী সচিব ও সমমর্যাদার ২৫৬ কর্মকর্তাকে উপ-সচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়।

উপ-সচিব পদে পদোন্নতির মাধ্যমে আগামী নির্বাচন সামনে রেখে জনপ্রশাসনে তিন স্তরে পদোন্নতির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। এর আগে ২৯ আগস্ট ১৬৩ কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত সচিব এবং ২০ সেপ্টেম্বর ১৫৪ কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ৬৪ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা (এও) ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) নন-ক্যাডার কোটায় সহকারী সচিব পদে পদোন্নতি পান।

নির্বাচনের আগে পদোন্নতির মাধ্যমে সরকার প্রশাসনকে নিজের অনুকূলে রাখতে চাই- এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি প্রেষণ (এপিডি) অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, ‘প্রশাসনে পদোন্নতি একটি কন্টিনিউয়াস প্রসেস। এটা বেইজলেস (ভিত্তিহীন) কথা। পদোন্নতির সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির এক বছর গ্যাপের পর আমরা আবার পদোন্নতি দিয়েছি। পদোন্নতির সময় হলে আমরা দেব না কেন?’

কয়েকদিনের ব্যবধানে শিক্ষা প্রশাসনে এক হাজার ৬১৭ শিক্ষক পদোন্নতি পেয়েছেন। অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকের পর গত ৩১ অক্টোবর সহকারী অধ্যাপক পদে প্রভাষক ও সমপর্যায়ের ৬৩৪ কর্মকর্তাকে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়।

এর আগে ১০ সেপ্টেম্বর ৪০৯ জনকে অধ্যাপক এবং ২৫ অক্টোবর ৫৭৪ জনকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের ভিত্তিতে গত ২১ অক্টোবর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ২৪০ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে (গ্রেড-১১) সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (গ্রেড-১০) পদে পদোন্নতির সুপারিশ করে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর পদোন্নতি পান সরকারি হাই স্কুলের ৪২০ জন সহকারী শিক্ষক। পদোন্নতিপ্রাপ্তদের মধ্যে ১৯৬ জনকে সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং ৫২ জনকে জেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে পদায়ন করা হয়।

১৫০ জন চিকিৎসককে ষষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি দিয়ে গত ২ অক্টোবর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি হয়।

সরকারের শেষ সময়ে পুলিশে বড় ধরনের পদোন্নতির বিষয়টিও আলোচিত হচ্ছে। অক্টোবরের শুরু থেকে পদোন্নতির এ তোড়জোড় শুরু হয়েছে। শিগগিরই এ পদোন্নতি চূড়ান্ত হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।

পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে পদোন্নতি না পাওয়ায় পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছিল। এ কারণে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে সরকারের শেষ সময়ে পদোন্নতি পেতে যাচ্ছেন বঞ্চিতরা।

সুপার নিউমারারি (সংখ্যাতিরিক্ত পদ সৃষ্টি) ভিত্তিতে ৪৯৫ জনের পদোন্নতি চাওয়া হয় পুলিশ সদর দফতর থেকে। গত জুলাই মাসে প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে পুলিশ বিভাগে পদোন্নতির ক্ষেত্রে বৈষম্যের একটি চিত্র তুলে ধরে চিঠি পাঠানো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।

চিঠিটি নিয়ে গত ২ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৪৯৫ জনের প্রস্তাবনাটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

গত ২২ অক্টোবর কৃষি ডিপ্লোমাধারী উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও সমমানের পদের কর্মকর্তাদের জাতীয় বেতন স্কেলের ১০তম গ্রেডে (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) উন্নীত করে সরকার। আগে তারা ১১তম গ্রেডে (তৃতীয় শ্রেণি) বেতন পেতেন।

আরএমএম/এমএআর/জেআইএম

আরও পড়ুন