ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

অস্তিত্ব সংকটে খালেদা-তারেক : রায়ের কপি পেলে ব্যবস্থা

মুহাম্মদ ফজলুল হক | প্রকাশিত: ০৪:২৩ পিএম, ০২ নভেম্বর ২০১৮

দলীয় গঠনতন্ত্রের একটি ধারা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের আদেশের ফলে একাধিক মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের যথাক্রমে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে থাকার অনিশ্চিতা দেখা দিয়েছে।

রিটের এই আদেশের ফলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপাসন তারেক রহমানের পদে থাকা নিয়ে নিজ দলেই সংকট তৈরির সংকেত পাওয়া যাচ্ছে।

দণ্ডিত বা দুর্নীতিপরায়ণ কোনো ব্যক্তি বিএনপির কোনো পদে থাকতে পারবেন না— এমন বিধান বাতিল করে দলটি যে গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা বাদ দিয়ে বিএনপি যে সংশোধনী প্রণয়ন করেছে, তা গ্রহণ না করতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

দলটির সংশোধিত গঠনতন্ত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দাখিল করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে গত বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ অন্তর্বর্তীকালীন এক আদেশ দিয়ে রিটটি ৩০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির আদেশ দেন।

বিএনপির গঠনতন্ত্র সংশোধনের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে মোজাম্মেল হোসেন নামে এক ব্যক্তি রিট আবেদন করেন। দণ্ডিত ব্যক্তিদের দলীয় কমিটিতে না রাখার যে বিধান বিএনপির গঠনতন্ত্রে ছিল, সংশোধনীতে তা বাদ দেয়া কেন বেআইনি হবে না এবং সংবিধানের পরিপন্থী হবে না, তা-ও জানতে চেয়েছেন আদালত। এই আদেশের ফলে, বিএনপির চেয়ারপার্সন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দলীয় নেতৃত্বে রাখা এবং দলীয় মনোনয়ন দেয়ার সুযোগ আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন বিএনপির সংশোধনী গ্রহণ না করলে দলের গঠনতন্ত্র অনুসারে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান বিএনপির নেতৃত্বে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। তবে, বিএনপির আইনজীবীরা বলছেন, কে কী বললো, তাতে কিছু আসে–যায় না। এ বিষয়ে আরও অনেক পথ দেখছে দলটি।

এদিকে, সরকারপন্থী আইনজীবীরা বলছেন, হাইকোর্টের এ নির্দেশ মানতে বাধ্য ইসি। ফলে ইসি বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করলে বা বাতিল করে দিলে বিএনপির কোনো কমিটিতে দণ্ডিত কোনো ব্যক্তি থাকতে পারবেন না। এ কারণে বিএনপি চেয়ারপার্সন কারাবন্দি খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন হিসেবে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলটির কোনো পদে থাকতে পারবেন না বলে অভিমত আইন বিশেষজ্ঞদের।

তারা বলছেন, হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ রয়েছে বিএনপির। বিএনপি যদি আপিল করে এবং আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন, সে ক্ষেত্রে খালেদা জিয়া বা তারেক রহমানের দলের শীর্ষ পদে থাকতে কোনো সমস্যা হবে না। যদি দলটি কোনো স্থগিতাদেশ না পায়, তবে তারা পদে থাকতে পারবেন না।

আইনজ্ঞরা বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি নির্বাচনের অযোগ্য। এ কারণেই দণ্ডিত কোনো ব্যক্তির বিএনপির পদে রাখার উদ্দেশ্যে দলটির গঠনতন্ত্রে সংশোধনী আনা দেশের সংবিধানের পরিপন্থী।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের আগে এ বছরের ২৮ জানুয়ারি সাত ধারা বিলুপ্ত করে বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হয়। সেখানে বলা হয়, ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির কাউন্সিলে এই সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।

উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার যথাক্রমে ১০ ও সাত বছর কারাদণ্ড হয়েছে। অন্যদিকে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও একটি অর্থপাচার মামলায় তারেক রহমানের যথাক্রমে যাবজ্জীবন ও সাত বছরের কারাদণ্ড হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৭ নম্বর ধারায় ‘কমিটির সদস্যপদের অযোগ্যতা’ শিরোনামে বলা আছে, ‘নিম্নোক্ত ব্যক্তিগণ জাতীয় কাউন্সিল, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, জাতীয় স্থায়ী কমিটি বা যেকোনো পর্যায়ের যেকোনো নির্বাহী কমিটির সদস্যপদের কিংবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থীপদের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।’ তারা হলেন- (ক) ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশ নম্বর ৮-এর বলে দণ্ডিত ব্যক্তি। (খ) দেউলিয়া, (গ) উন্মাদ বলে প্রমাণিত ব্যক্তি, (ঘ) সমাজে দুর্নীতিপরায়ণ বা কুখ্যাত বলে পরিচিত ব্যক্তি।

খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার রায় ঘোষণার ১০ দিন আগে ৭ নম্বর ধারা বাদ দিয়ে বিএনপি সংশোধিত দলীয় গঠনতন্ত্র নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়।

আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচন শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আজ সংলাপে বসবেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। সংলাপ বিষয়ে চিঠি চালাচালি ও বিভিন্ন কথার মধ্যে গত মঙ্গলবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ হয়। ওই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড হয়েছিল।

সংবিধানের ৬৬ (২) (গ) অনুচ্ছেদে সংসদ নির্বাচনের যোগ্যতা-অযোগ্যতার বিষয়ে বলা আছে। ওই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এটি পরিষ্কার যে, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের পদে থাকার অযোগ্যতার বিষয়ে বিএনপির গঠনতন্ত্রের সাত ধারায় উল্লেখ রয়েছে।

ওই সাত ধারায় দলের সদস্য পদের অযোগ্যতার বিষয়ে বলা হয়েছে ‘নিম্নোক্ত ব্যক্তিগণ জাতীয় কাউন্সিল, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, জাতীয় স্থায়ী কমিটি বা যেকোনো পর্যায়ের যেকোনো নির্বাহী কমিটির সদস্য পদের কিংবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী পদের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।’

তারা হলেন- (ক) ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশ নম্বর ৮-এর বলে দণ্ডিত ব্যক্তি। (খ) দেউলিয়া, (গ) উন্মাদ বলে প্রমাণিত ব্যক্তি, (ঘ) সমাজে দুর্নীতিপরায়ণ বা কুখ্যাত বলে পরিচিত ব্যক্তি, কিন্তু ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ জাতীয় কাউন্সিলে এই ৭ ধারা বাদ দিয়ে নতুনভাবে ৭ ধারা প্রতিস্থাপন করা হয়।

সংশোধিত নতুন এই ধারায় বলা হয়েছে, ‘প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে দলের একজন চেয়ারম্যান থাকবেন। ৩০ বছরের কম বয়স্ক কোনো ব্যক্তি দলের চেয়ারম্যান হতে পারবেন না।’ রিটে এই সংশোধনীকে অসৎ উদ্দেশ্য থেকে করা হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।

এদিকে ইসিতে মোজাম্মেল হোসেনের দায়ের করা আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নীতি ও আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমি বিএনপিতে যোগদান করি। বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৭ ধারায় সমাজের দুর্নীতিপরায়ণ ও কুখ্যাত বলে পরিচিত কোনো ব্যক্তি বিএনপির জাতীয় কেন্দ্রীয়, নির্বাহী, স্থায়ী কমিটি বা যেকোনো পর্যায়ের কমিটিতে বা কমিটির সদস্য পদে কিংবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী বলে বিবেচিত হবে না মর্মে উল্লেখ ছিল। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার আশঙ্কায় বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা সংশোধিত আকারে উপস্থাপন করে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হয়। এ পরিবর্তনে জাতীয়তাবাদী আদর্শে উজ্জীবিত কর্মী হিসেবে আমি বিস্মিত ও হতবাক। এই পরিবর্তন গ্রহণ না করার অনুরোধ করছি।

আদালতের আদেশের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘যেহেতু আদেশটি হয়েছে আমাদের আদালত বর্জনের দিনে, আমরা ওই আদালতেও যেতে পারি, আপিলও করতে পারি। এটা তো শেষ আদেশ নয়। এরপরও আপিল আছে বা এই আদালতে স্টে-ভ্যাকেটের (স্থগিতাদেশ তুলে নেয়া) জন্য যেতে পারি, কেননা রিটে আমাদের পক্ষ করা হয়নি।’

জয়নুল আবেদীন আরও বলেন, যে ব্যক্তি রিট পিটিশন করেছেন, তার এই রিট পিটিশন করার কোনো এখতিয়ার নেই। একটি রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্র, এখানে রিট পিটিশন মেইন্টেনেবল নয়। এখানে বিএনপির লোকজনকে পক্ষ করা হয়নি, বিএনপির অথরিটিকে পক্ষ করা হয়নি।

তিনি বলেন, ‘আমরা আদেশের কপি সংগ্রহ করছি, যদি দেখি যে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া দরকার, সে ক্ষেত্রে সেটাই নেব। অনেক সময় আদালতকে ভুল বুঝিয়ে অর্ডার নেয়া হয়। এটা নিয়ে আমরা বসবো, সিনিয়র আইনজীবীরা বসবেন, তারপর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

এ বিষয়ে বিএনপি নেতা ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরোদ্দোজা বাদল জাগো নিউজেকে বলেন, ‘প্রায় নয় মাস আগে সংশোধিত গঠনতন্ত্র ইসিতে দাখিল করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন অনেক আগেই সেটি গ্রহণ করেছে। এখন যিনি রিট করেছেন তার রিট দায়েরের কোনো এখতিয়ার (লোকাস স্ট্যান্ডি) নেই।

‘আমরা রিটে সংক্ষুব্ধ পার্টি, কিন্তু রিট আবেদনের কোনো কপি আমাদের দাখিল করা হয়নি। এছাড়া সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রিট গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ একটি রাজনৈতিক দল সরকারের কোনো বিধিবদ্ধ সংস্থা নয়। তাই এ বিষয়ে রিট চলে না। আমরা রিটের আদেশের কপি পেলে আইনগত পদক্ষেপ নেবো।’

রিট আবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিএনপির সাবেক চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট’ দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি দণ্ডপ্রাপ্ত হন। ওই রায় ও আদেশের বিরুদ্ধে দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া হাইকোর্টে আপিল করেন, যেটি আংশিক শ্রুত অবস্থায় রয়েছে। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দুর্নীতির মামলায় ১০ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন। এছাড়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন। পলাতক থাকায় ওইসব দণ্ডের বিরুদ্ধে এখনও কোনো আপিল করেননি।

এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশটি যথাযথ হয়েছে বলে মনে করি। কারণ আমাদের সংবিধানের ৬৬ (২) ঘ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নৈতিক স্খলনজনিত কারণে যদি কারও দুই বছরের বেশি সাজা হয়, তাহলে সাজা ভোগ করার পর আরও পাঁচ বছর তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।’

তিনি বলেন, ‘এটা নৈতিকতা পরিপন্থী। দুর্নীতিবাজদের রাখার জন্য কোনো রাজনৈতিক দল হতে পারে না। এ কারণেই মনে করি, হাইকোর্ট যথাযথ আদেশ দিয়েছেন। তবে, এ আদেশের বিরুদ্ধে নিশ্চয়ই বিএনপি বা সংক্ষুব্ধ পক্ষ আপিল বিভাগে যাবে। আপিল বিভাগ যদি হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন, তবে পদে থাকতে বাধা থাকবে না।’

রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘দণ্ডিত কেউ দলের পদে থাকতে পারবে না— এটাই স্বাভাবিক। দুনিয়ার সব রাজনৈতিক দলের এটাই নৈতিক মানদণ্ড। বিএনপির গঠনতন্ত্রে সেটাই তো ছিল। এখন এটা যদি পরিবর্তন করা হয়, দণ্ডিত বা সাজাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তিকে রাখতে রাজনৈতিক দলের পক্ষে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া খুবই অনভিপ্রেত।’

তিনি বলেন, ‘এই সংশোধিত গঠনতন্ত্র যদি ইসি গ্রহণ না করে তাহলে সাজাপ্রাপ্তরা দলটির কোনো পদে থাকতে পারবে না।‘

নির্বাচনী আইন বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক দলের পদে নায়ক বা জেলে বা কৃষককে নেবে কিনা— সেটা সেই দলের গঠনতন্ত্রের ব্যাপার। এ রকম রাজনৈতিক বিষয় আদালতে টেনে আনা উচিত নয়।’ তবে, তিনি বলেন, ‘দেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো কিছু কোনো রাজনৈতিক দলে থাকতে পারে না। রাখাটাও উচিত নয়।’

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের আইন শাখা হাইকোর্টের নির্দেশের বিষয়টি সম্পর্কে করণীয় নির্ধারণের জন্য ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে।’

প্রসঙ্গত, গঠনতন্ত্রের ৭ নম্বর ধারা সংশোধন করে তা গত ২৮ জানুয়ারি ইসিতে দাখিল করে বিএনপি। ওই সংশোধনী প্রস্তাবের বিষয়ে দলীয় চেয়ারপারসন ও কাউন্সিল অধিবেশনের সভাপতি হিসেবে খালেদা জিয়া ইসিতে পাঠানো চিঠিতে বলেন, ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির কাউন্সিলে এসব সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে।

বিএনপির সংশোধিত ওই গঠনতন্ত্র যাতে গ্রহণ না করা হয় সেজন্য গত ৩০ অক্টোবর ইসিতে আবেদন করেন রাজধানীর কাফরুলের বাইশটেকীর বাসিন্দা মো. শাহ আলম মিয়ার ছেলে মো. মোজাম্মেল হোসেন। তিনি নিজেকে বিএনপির কর্মী দাবি করে ওই আবেদন করেন। ইসি ওই দিন দুপুর পৌনে ২টায় আবেদনটি গ্রহণ করেন। এরপর একই দিন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদন (রিট নম্বর ১৩৫৬৮/২০১৮) করেন তিনি। রিট আবেদন দাখিলকারীর আইনজীবী হলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মমতাজউদ্দিন আহমদ মেহেদী।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, রাজনৈতিক দল হিসেবে ইসিতে নিবন্ধিত হওয়ার সময়ই দলীয় গঠনতন্ত্র জমা দিতে হয়। আর সংশোধন করা হলে তা-ও ইসিকে জানানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কোনো দলের গঠনতন্ত্র বাংলাদেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিনা— তা দেখার দায়িত্ব ইসির।

এফএইচ/এমএআর/এমএস

আরও পড়ুন