ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

তফসিল পেছানোর প্রস্তাব থাকছে সংলাপে!

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৮:২৭ পিএম, ৩১ অক্টোবর ২০১৮

আগামীকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ পেছানোর প্রস্তাব আসতে পারে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে।

ঐক্যফ্রন্টের একাধিক নেতা মনে করেন, যেসব দাবি আর লক্ষ্যের কথা বলা হচ্ছে তা বাস্তবায়ন করতে সময়ের প্রয়োজন। তফসিল ঘোষণা করে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ এক নেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, তফসিল নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। সরকার তফসিল ঘোষণার যে দিনক্ষণ ধার্য করতে যাচ্ছে, সংলাপে সে বিষয়ে আপত্তি জানানো হবে। যদিও সংলাপের এজেন্ডা তফসিল নয়।

তিনি বলেন, আমরা সাত দফা দাবি নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি। সাত দফা দাবির কয়েকটি সংবিধান সম্পৃক্ত। এ কারণে এসব বিষয়ে আমরা সংলাপে জোর দেব। হয়তো সংবিধান পরিবর্তনও করতে হতে পারে। এজন্য অধিবেশনের প্রয়োজন পড়বে।

‘এছাড়া নির্বাচন কমিশনেরও বিষয় আছে। এসবের জন্য অবশ্যই সময়ের প্রয়োজন’- যোগ করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, দশম জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশনের শেষ কার্যদিবস শেষ হয় ৩০ অক্টোবর। এ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসেছিল ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি। এরপর থেকে ২৩ অধিবেশনে কার্যদিবস ছিল ৪১০টি। অবশ্য ২৩ অধিবেশন শেষ হলেও সংসদের মেয়াদ থাকবে আগামী বছরের ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না এ প্রসঙ্গে বলেন, আগে সংলাপ পরে তফসিল। আমরা আমাদের দাবি ইতোমধ্যে স্পষ্ট করে জানিয়েছি। আমাদের দাবির সঙ্গে জনগণের সম্মতি রয়েছে। সরকার আমাদের দাবির প্রতি ইতিবাচক সাড়া দেবে বলে বিশ্বাস করি।

‘আগামীকাল অনুষ্ঠিতব্য সংলাপের মধ্য দিয়ে হয়তো আলোচনার সূত্রপাত ঘটবে’- যোগ করেন মান্না।

সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একাদশ সংসদ নির্বাচনের দাবি তুলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গত রোববার সংলাপের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি পাঠান।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে ড. কামাল হোসেনের লেখা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, “যেসব মহান আদর্শ ও মূল্যবোধ আমাদের জনগণকে মুক্তির সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছিল, তার অন্যতম হচ্ছে ‘গণতন্ত্র’। গণতন্ত্রের প্রথম শর্তই হচ্ছে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান।’

চিঠিতে আরও লেখা হয়, ‘ইতিবাচক রাজনীতি একটা জাতিকে কীভাবে ঐক্যবদ্ধ করে ন্যায়সংগত অধিকার আদায়ের মূলশক্তিতে পরিণত করে- তা বঙ্গবন্ধু আমাদের শিখিয়েছেন। নেতিবাচক রুগ্ণ রাজনীতি কীভাবে আমাদের জাতিকে বিভক্ত ও মহাসংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তাও আমাদের অজানা নয়। এ সংকট থেকে উত্তরণে আজ আমাদের জাতীয় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সাত দফা দাবি ও ১১ লক্ষ্য ঘোষণা করেছে। শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে সবার অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে একটি অর্থবহ সংলাপের তাগিদ অনুভব করছে এবং সেই লক্ষ্যে আপনার কার্যকর উদ্যোগ প্রত্যাশা করছি।’

পরদিন সংলাপে রাজি হওয়ার কথা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গত মঙ্গলবার সকালে আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী আবদুস সোবহান গোলাপ শেখ হাসিনার আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেন কামাল হোসেনকে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণভবনে আমন্ত্রণ জানিয়ে পাঠানো ওই চিঠিতে শেখ হাসিনা লেখেন, ‘অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে সংবিধানসম্মত সকল বিষয়ে আলোচনার জন্য আমার দ্বার সর্বদা উন্মুক্ত।’

আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণপত্র পাওয়ার পর বিকেলে বৈঠকে বসেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মির্জা ফখরুল, খন্দকার মোশাররফ, মওদুদ আহমদ, জেএসডির তানিয়া রব, মালেক রতন, গণফোরামের মোস্তফা মহসিন মন্টু, সুব্রত চৌধুরী, জগলুল হায়দার আফ্রিক, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, জাহেদ উর রহমান, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মো. মনসুর আহমেদ, আ ব ম মোস্তফা আমীন, নুরুল হুদা মিলু চৌধুরী এবং গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

বৈঠকের পর জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব নিজেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ‘মুখপাত্র’ পরিচয় দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ সাদরে গ্রহণ করেছি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে যাব। ঐক্যফ্রন্টের ১৫ নেতা যাবেন। কামাল হোসেন আমাদের নেতা, উনি ১৫ জনের বাইরে।’

সংলাপ নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে রব বলেন, ‘জাতি আশা করে এই সংলাপের মাধ্যমে আগামী দিনে একটা সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। কোনো সংলাপ ব্যর্থ হয়নি। এ সংলাপে সাত দফাসহ সবকিছু নিয়ে আলোচনা হবে।

সংলাপ কতটুকু সফল হবে এ প্রসঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার রাজনীতি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘সংলাপ নিয়ে আশাবাদী হওয়ার আপাতত কোনো কারণ নেই। কারণ, আমরা আগেও এমন সংলাপ দেখেছি। অর্থবহ আলোচনা হয়েছে- এমন নজির আছে বলে আমার জানা নেই। এমনকি গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও সংলাপের আলোচনা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়।’

তিনি বলেন, ‘সংলাপ ফলপ্রসূ হবে কি-না তা নির্ভর করবে অংশগ্রহণকরীদের আন্তরিকতার ওপর। যেসব এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তার অনেক কিছুই সাংবিধানিক। সংবিধান পরিবর্তনের ব্যাপার আছে। আবার অনেক বিষয় আছে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে জড়িত।’

‘আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে। কী হবে, তা আলোচনা থেকেই বেরিয়ে আসবে। তবে এবার সংলাপ অর্থবহ না হলে বিপদ আরও বাড়তে পারে’ বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন সাখাওয়াত হোসেন।

তবে সংলাপের বিষয়ে আশাবাদী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। গতকাল তিনি বলেন, ‘জনগণই ক্ষমতার মালিক। কিন্তু রাজনীতির মধ্য দিয়ে জনগণকে ক্ষমতাবঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। আমরা জনগণের রাষ্ট্র জনগণকে ফিরিয়ে দিতে আন্দোলন করছি। এ আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

সংলাপের ফলাফল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের দাবি আর লক্ষ্য ঘোষণা করেছি। সময় বদলে গেছে। মানুষ এখন হিংসার রাজনীতি করতে চায় না। এই উপলব্ধি থেকে ক্ষমতাসীন দল সংলাপে ইতিবাচক সাড়া দেবে বলে আমি মনে করি।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, অতীতের সংলাপগুলো সাধারণত মাঝারি স্তরের নেতা অথবা মহাসচিব পর্যায়ের ছিল। এবার শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে সংলাপ হবে। এটাই আশার লক্ষণ। কারণ আলোচনা তাদের মধ্যে হচ্ছে যারা সরাসরি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা রাখেন।

তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ যে সাত দফার সবগুলো মেনে নেবে, এটা মেনে নেয়ারও কোনো কারণ নেই। একটি, দুটি অথবা তিনটি দফা মেনে নিয়ে যদি ভালো একটা নির্বাচন করা সম্ভব হয়, তাহলে সেটাই সবার জন্য মঙ্গল।

সংলাপের ইতিবাচক দিক হিসেবে তারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুব ভালো করেই জানেন যে, ড. কামাল হোসেনের পাশাপাশি বিএনপি নেতারাও ঐক্যফ্রন্টে আছেন। নির্বাচন নিয়ে তাদেরও বক্তব্য আছে। সেগুলো শুনবেন- এমনটি ভেবেই প্রধানমন্ত্রী তাদের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এটাই এই বৈঠকের ইতিবাচক দিক।

এএসএস/এমআরএম/এমএস

আরও পড়ুন