সংলাপের পালে হাওয়া, আশাবাদী জাতি
অবশেষে হাওয়া লেগেছে সংলাপের পালে। বিরোধীদের সঙ্গে সংলাপ করতে রাজি হয়েছে ক্ষমতাসীন দল। ইতোমধ্যে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টকে সংলাপের জন্য গণভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপ করতে চান। এ খবরে পুরো জাতি এখন উজ্জীবিত। জাতি আশায় বুক বেঁধেছে যে, হয়তো রাজনৈতিক আকাশে যে মেঘের ঘনঘটা তা কেটে যাবে। সংকট থেকে মুক্তি পাবে জাতি।
সোমবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকের পর অনির্ধারিত আলোচনায় সংলাপ করার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুহূর্তের মধ্যে এটা অনলাইন, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং স্যোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে সংলাপের বিষয়টি প্রায় প্রতিটি স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। বলা চলে ঢাকাসহ সারাদেশে এটা এখন আলোচনার প্রধান বিষয়। এক কথায় বলা যায়, সংলাপের বিষয় এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। বাসে, চায়ের স্টলে, রাস্তার মোড়ে এমনকি বন্ধুদের আড্ডায়ও স্থান পাচ্ছে সংলাপ।
মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) সকালে ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে সকালের প্রাতরাশ শেষে কয়েকজন বসে গল্প করছিলেন। তাদের গল্পে স্থান পায় সংলাপের বিষয়টি। তারা আলোচনা করছিলেন আদৌ কি এ সংলাপের মাধ্যমে সংকটের কোনো সমাধান হবে? বরফ কি গলবে? এমন নানা প্রশ্ন।
আবার তাদেরই একজন শামসুল ইসলাম বলেন, আলোচনা যেহেতু শুরু হচ্ছে আশা করি সমাধান একটা হবে। আওয়ামী লীগও চায় একটা সমাধান হোক। বার বার একই পদ্ধতিতে ভোট ছাড়া আওয়ামী লীগও ক্ষমতায় যেতে চায় না।
তাদের মধ্যে আরেকজন আবদুর রাজ্জাক বলেন, দেশে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় থাকলে দেশের পরিস্থিতি ভালো থাকে। আর নির্বাচিত সরকার না থাকলে বিরোধীরা সুযোগ খোঁজে যে কোনো সময় পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হতে পারে।
দুপুরে জিগাতলার একটি হোটেলে চা- সিঙ্গারা খাচ্ছিলেন মধ্যবয়সী চারজন। সেখানেও সংলাপ নিয়ে আলোচনা করতে দেখা গেছে।
তারা বলাবলি করছিলেন-আদৌ কি আওয়ামী লীগ সাত দফা মেনে নেবে? আরেকজন বলছিলেন সাত দফা মানার দরকার নেই। বিরোধী পক্ষকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার মতো দাবি মানলেই তো সংকটের একটা সমাধান হয়। তাদের আলোচনা থেকে বোঝা যাচ্ছিল যে তারা নিজেরাও চাচ্ছেন সংকটের ফলপ্রসূ সমাধান হোক। তা না হলে দেশের অবস্থা ক্রমেই খারাপের দিকে যাবে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপ প্রসঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, একদিন আগেও কেউ এটা ভাবেননি। আগে আমিও বলেছি সংলাপ হবে না। সেটা ছিল আমার রাজনৈতিক কৌশল। এখন সংলাপ হচ্ছে। এখন দেখা যাক সংলাপে ‘সংকটের বরফ’ গলে কি-না! যদিও আমরা সংকট দেখছি না। সংকট তাদের (বিএনপি)। তাদের ভাষায় সংকট।
উল্লেখ্য, এর আগে সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়ে গত ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দেয় ঐক্যফ্রন্ট। সেখানে ৭ দফা দাবি এবং ১১টি লক্ষ্য সংবলিত চিঠি দেয় গণফোরাম-বিএনপিসহ কয়েকটি দলের সমন্বয়ে গঠিত এ জোট। এতে সাড়া দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৯ অক্টোবর সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ওবায়দুল কাদের জানান, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দেয়া সংলাপ প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে আওয়ামী লীগ। এরপর মঙ্গলবার সকালে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয় আওয়ামী লীগ।
এফএইচএস/এএইচ/আরআইপি