চাঁপাইনবাবগঞ্জে জামায়াত-শিবির এখন কোনো চ্যালেঞ্জ নয়
আনোয়ারুল ইসলাম আনোয়ার। প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ অাওয়ামী যুবলীগ। দায়িত্ব পালন করছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবেও।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল-গোমস্তাপুর-ভোলাহাট) আসন থেকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়নপ্রত্যাশী। দীর্ঘদিন থেকেই নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। মনোনয়ন পেলে বিজয় নিশ্চিত করবেন বলেও উল্লেখ করেন এই যুবলীগ নেতা।
নির্বাচন প্রসঙ্গ নিয়ে মুখোমুখি হন জাগো নিউজ-এর। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু
জাগো নিউজ : নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। মনোনয়ন পাওয়া প্রসঙ্গে কি বলবেন?
আনোয়ারুল ইসলাম আনোয়ার : মনোনয়ন দেয়ার একমাত্র এখতিয়ার আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর। তিনি সব খবর রাখেন। তৃণমূলের সমর্থন, জনসম্পৃক্ততা এবং দলের প্রতি আনুগত্যের মূল্যায়নেই সভানেত্রী মনোনয়ন দিয়ে থাকেন।
১৯৮১ সাল থেকে আমি রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। বলতে পারেন, তখন থেকে একদিনের জন্যও রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন হইনি। বর্তমানে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবে কাজ করছি। সংগঠনের আরও দায়িত্ব পালন করেছি।
এলাকার মাটি-মানুষের সঙ্গে থেকে রাজনীতি করেই ঢাকায় এসেছি। তৃণমৃলের রাজনীতি মূল্যায়ন করে যদি নেত্রী সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে আমি অবশ্যই মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।
জাগো নিউজ : চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাজনীতিতে জামায়াত-শিবিরের বিশেষ প্রভাব লক্ষণীয়। এ প্রভাব চ্যালেঞ্জ মনে করেন কী-না?
আনোয়ার : হ্যাঁ, এই প্রভাবের কথা অস্বীকার করছি না। যখন ছাত্র রাজনীতি করেছি, তখন বহুবার জামায়াত-শিবিরের হামলার শিকার হয়েছি। একদিকে ছাত্রশিবির অন্যদিকে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। সে সময় শিবিরের দাপটের কাছে পেরে ওঠা মুশকিল ছিল। আমরা সে দুর্গ ভেঙে দিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে এলাকার মানুষ এখন একাট্টা। সাধারণ মানুষও বুঝতে পারছে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি।
আমার নির্বাচনী আসনে (নাচোল-গোমাস্তাপুর-ভোলাহাট) এখন জামায়াত-শিবিরের প্রভাব অনেকটাই কম। আমরা তৃণমূল মানুষের সঙ্গে মিশে অবস্থান তৈরি করেছি। এ কারণেই চাঁপাইনবাবগঞ্জে জামায়াত-শিবির এখন কোনো চ্যালেঞ্জ নয় বলে মনে করি।
জাগো নিউজ : সর্বহারা হচ্ছেন আদিবাসীরা। আপনার নির্বাচনী এলাকা নাচোল-গোমস্তাপুর-ভোলাহাটে প্রচুর আদিবাসীর বাস। অভিযোগ, রাজনৈতিক ক্ষমতার বলেই কেড়ে নেয়া হচ্ছে তাদের সবকিছু। অধিকারহারা এই নৃ-গোষ্ঠীর জন্য কী বলবেন?
আনোয়ার : আমার গ্রামের পাশেই আদিবাসী গ্রাম। আমি তাদের কষ্ট বুঝি। কারা, কীভাবে আদিবাসীদের ভূমিহারা করছে, তার অনেক কিছুই চোখে দেখা। তবে এখন কিন্তু আদিবাসীরা তাদের অধিকার নিয়ে জোর গলায় কথা বলছেন। এবং সেটা শেখ হাসিনার সরকারের কারণেই সম্ভব হচ্ছে।
আমি এলাকায় গেলেই আদিবাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ করি, ঢাকায় থাকলেও যোগাযোগ রাখি। প্রথমত, তারা দেশের নাগরিক। তারা আর দশজন মানুষের মতই রক্তে-মাংসে গড়া। এই বোধ থাকলে সমাজে বৈষম্যের পক্ষে অবস্থান নিতে পারে না।
আমি ব্যক্তিগতভাবে আদিবাসীদের অধিকার রক্ষার পক্ষে অবস্থান নিয়েছি। দল এখন আমাদের সঙ্গে। কেউ চাইলেই আর আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য হুমকি হয়ে আসতে পারে না। তাদের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা সোচ্চার। ভবিষ্যতে কেউ তাদের ক্ষতি করতে পারবে বলে মনে করি না।
জাগো নিউজ : স্থানীয় সাংসদও আওয়ামী লীগের। তার অবস্থান নিয়ে কী বলবেন?
আনোয়ার : সরকারের উন্নয়নের অংশীদার বর্তমান সংসদ সদস্যও। এর আগের সংসদ সদস্যও এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছেন। আমি কারো অবদানকেই ছোট করে দেখছি না। দলের সভানেত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে তারা জনসেবা করেছেন।
কিন্তু রাজনৈতিক ক্যারিয়ার কাজে লাগিয়ে আমারও তো ইচ্ছে আছে মানুষের পাশে দাঁড়ানো। কাউকে চ্যালেঞ্জ বা প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে নয়, বিবেকের তাড়নায় মানুষের জন্য কিছু করতে চাই।
জাগো নিউজ : যদি মনোনয়ন না পান?
আনোয়ার : আমি তো বলেছি, কারো প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে রাজনীতি করি না। নেত্রীর সিদ্ধান্তই আমার কাছে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। নেত্রী যাকে চাইবেন, তার পক্ষেই সর্বশক্তি দিয়ে মাঠে নামব।
প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হওয়ার আগে প্রত্যাশা থাকবেই। আমি শেষ পর্যন্ত আশাবাদী মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে। তবে নেত্রী যদি অন্য কাউকে মনোনয়ন দেন, তখন অবশ্যই তার পক্ষে কাজ করব। তখন আর নিজের চাওয়া বলতে কিছু থাকবে না। তখন একটিই চাওয়া এবং তা হচ্ছে নৌকার বিজয়।
জাগো নিউজ : জোটবদ্ধ হয়ে বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে অংশ নিলে চাঁপাইনবাবগঞ্জে নৌকার কী অবস্থান হবে?
আনোয়ার : মানুষ এখন উন্নয়নের পক্ষে। শেখ হাসিনার কারণেই এখন বাংলাদেশের নতুন পরিচয় মিলছে। আমার বরেন্দ্র এলাকা। এক সময় হেঁটেও চলাচল করা যেত না। এখন এমন কোনো রাস্তা নেই যেখানে গাড়ি চলে না। ফলে যারাই নির্বাচনে অংশ নিক, নৌকার জন্য বিজয় নিশ্চিত।
জাগো নিউজ : জয়ের ব্যাপারে আপনি আশাবাদী?
আনোয়ার : অবশ্যই মনোনয়ন পেলে আমি নৌকার নিশ্চিত করতে পারব। সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশেই আমি এমন আশাবাদ ব্যক্ত করছি। আর শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রাখছি বলেই মানুষ উন্নয়নের মহাসড়কে শামিল হয়েছেন, যা আমাদের জন্যও আশীর্বাদ।
এএসএস/এমআরএম/জেআইএম