ভরা মৌসুমে পাটের অভাবে বন্ধ হতে বসেছে রাষ্ট্রায়ত্ত জুটমিল
>> জুটমিলগুলোর বর্তমান দেনা ৪৯৫ কোটি টাকা
>> গত বছরের তুলনায় অর্ধেকে নেমেছে উৎপাদন
>> ঘুরে দাঁড়াতে এক হাজার কোটি টাকা চায় বিজেএমসি
ভরা মৌসুমেও পাটের অভাবে বন্ধ হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত জুটমিলের।
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ জুটমিল কর্পোরেশন (বিজেএমসি) বলছে, বর্তমানে পাটকলগুলোর দেনা ৪৯৫ কোটি পাঁচ লাখ টাকা। দেনার এ বোঝা নিয়ে মিলগুলোর পক্ষে নতুন করে পাট কেনা দুরূহ হয়ে পড়েছে।
অনেক মিলে পাটের মজুত শূন্যের কোটায়। তাই পাট কেনা কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করতে না পারলে শিগগির উৎপাদন বন্ধ হবে বলে আশঙ্কা করেছে খোদ বিজেএমসি। এ জন্য দেনা পরিশোধ করে নতুন করে পাট কিনতে আবর্তক তহবিল হিসেবে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বিজেএমসির চেয়ারম্যান ড. মো. মামুদুল হাসান।
আরও পড়ুন : উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার ধারে-কাছেও নেই বিজেএমসি
তিনি বলেন, মিলগুলোতে গত ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের বকেয়াসহ বর্তমানে মোট ৪৯৫ কোটি পাঁচ লাখ টাকা পাট কেনা বাবদ বকেয়া রয়েছে। বর্তমানে পাটের ভরা মৌসুম চলছে। নতুন বছরে পাট কিনতে মিলঘাটসহ প্রয়োজনীয় সংখ্যক পাট ক্রয় কেন্দ্রের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কিন্তু বিপুল পরিমাণ দেনা নিয়ে মিলগুলোর পক্ষে নতুন করে পাট কেনা দুরূহ হয়ে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মিলগুলোতে পাটের মজুত ছিল ৯৪ হাজার ৪৪১ কুইন্টাল। যা দিয়ে মিলগুলো অল্প কিছু দিন চালু রাখা সম্ভব। তবে বেশিরভাগ মিলে মজুত শূন্যের কোঠায় এবং কিছু কিছু মিলে মান ও গ্রেড অনুযায়ী পাট মজুত না থাকায় উৎপাদন আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে।
তিনি বলেন, গত ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে প্রতিদিন গড় উৎপাদন ছিল ৪৭১ দশমিক ২৪ টন। কিন্তু ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে গড় উৎপাদন প্রায় অর্ধেক কমে দাঁড়িয়েছে ২৪৭ দশমিক ৭২ টন। পাট কলগুলোর গড় উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে ৬২৩ দশমিক ২২ টন।
আরও পড়ুন : সোনালি আঁশের রুপালি কাঠিতে আশার আলো
বিজেএমসি সূত্র জানায়, এখন পাট কেনা কার্যক্রম পুরোদমে শুরু করতে না পারলে শিগগিরই মিলগুলোর উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। মিলগুলোতে প্রয়োজন অনুযায়ী পাটের মজুত না থাকায় শ্রমিকরা অলস সময় পার করছেন। একই সঙ্গে শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধও দুরূহ হয়ে পড়েছে। এতে মিলে শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে। তাই চলতি মৌসুমে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর জন্য পাট কিনতে আবর্তক তহবিল হিসেবে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে বিজেএমসি।
গত ১১ অক্টোবর সংস্থাটির পক্ষে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব প্রদীপ কুমার সাহা স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে এ অর্থ চাওয়া হয়।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে করা অর্থ বিভাগের মূল্যায়নে এসেছে যে একইভাবে ২০০৯ থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিজেএমসিকে ছয় হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন : পাটের বিনিময়ে জ্বালানি তেল দিতে আগ্রহী ইরান
জানা গেছে, বিজেএমসির আওতায় তিনটি নন জুট প্রতিষ্ঠানসহ মোট ২৬টি মিল রয়েছে। এরমধ্যে ঢাকা অঞ্চলে সাতটি, চট্টগ্রামে ১০টি, খুলনায় ৯টি রয়েছে। পাট উৎপাদিত অঞ্চলের ১৮২টি কেন্দ্রের মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে পাট কেনা হচ্ছে।
এমইউএইচ/এএইচ/জেআইএম