গমের আবাদ কেন কমছে?
বাংলাদেশে মানুষের খাদ্যে গমের চাহিদা বাড়ছে। প্রতি বছর দেশে প্রায় ৫০ লাখ টন গমের চাহিদা রয়েছে। তবে নানা কারণে উৎপাদন দিন দিন কমছে। গমের চাহিদার তুলনায় দেশে উৎপাদন হয় পাঁচ ভাগের এক ভাগ। ফলে এই চাহিদার চার ভাগ গমই আমদানি করতে হয়।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) গম গবেষণা উইং জানায়, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে তিন লাখ ৮৮ হাজার হেক্টর জমিতে গম উৎপাদন হয় ৮ লাখ ৪৯ হাজার টন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে গমের উৎপাদন বাড়ে। সেবছর চার লাখ ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে ১৩ লাখ ৪৭ হাজার টন গম উৎপাদন হয়। তবে ২০১৮ সালে গম উৎপাদন কমেছে। এ বছর উৎপাদন হয়েছে ১১ লাখ ৫৩ হাজার টন গম।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, দেশে উৎপাদন কমে যাওয়ায় প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ৩৮ লাখ টন গম আমদানি করতে হয়। আর খাদ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর দেশে প্রায় ৫০ লাখ টন গমের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে দেশে উৎপাদন হচ্ছে ১১ লাখ ৫৩ হাজার টন গম। বাকি গম সরকারি-বেসরকারি খাতের মাধ্যমে আমদানি হচ্ছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোট গম আমদানি হয় ৪২ লাখ ৮০ হাজার টন।
কেন গমের আমদানি বাড়ছে?
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তনের ফলে খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন এসেছে। ভাতের পরিবর্তে রুটি, পাউরুটি, পরোটাসহ আটা-ময়দায় তৈরি ফাস্টফুডের চাহিদা বেড়েছে। ফলে দেশে আটা ও ময়দার চাহিদা বেড়েছে। এ ছাড়া আটা বা ময়দা ব্যবহারে তৈরি প্রক্রিয়াজাত খাবারের চাহিদাও আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এ কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান গমকেন্দ্রিক ব্যবসায় নামছে। আবার আগে যেসব প্রতিষ্ঠান এ ব্যবসা করত তারা ব্যবসা সম্প্রসারণ করছে। ফলে আমদানি বাড়ছে।
চাহিদা থাকার পরও গমের আবাদ কমছে কেন?
গবেষকরা বলছেন- সবজি, রবি শস্য ও বোরো ধানের চাষের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না গমের আবাদ। এদিকে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন হলেও সে অনুযায়ী মাঠপর্যায়ে সম্প্রসারিত হচ্ছে না গমের চাষ।
কৃষকরাও একই কথা বলছেন। তারা বলছেন, রবি মৌসুমে আলু, শবজি, সরিষা ও মরিচসহ অন্যান্য শস্য চাষ করলে গমের চেয়ে লাভ বেশি হয়। ফলে কৃষক রবি শস্যের দিকেই ঝুঁকছে।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কৃষি কর্মকর্তা গোলাম মওলা জাগো নিউজকে বলেন, আমরা গমের উচ্চফলনশীল জাতের সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ নিয়েছি। নতুন জাত মাঠে সম্প্রসারিত করতে একটু সময় দরকার। তবে চরাঞ্চলসহ কিছু এলাকায় গমের আবাদ বাড়ছে এবং তাপসহিষ্ণু জাতের গমের বিস্তৃতি ঘটছে। ফলে আগামীতে গমের উৎপাদন বেড়ে যাবে।
এফএইচএস/জেডএ/জেআইএম