ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

বাল্যবিবাহের বিশেষ বিধান ‘ধর্ষণে’ প্রযোজ্য নয়

মাসুদ রানা | প্রকাশিত: ০৫:৫৬ পিএম, ১৫ অক্টোবর ২০১৮

ধর্ষণ কিংবা দুই পক্ষের মধ্যে এ সংক্রান্ত মামলা বিচারাধীন থাকলে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের বিশেষ বিধান (বিশেষ অবস্থায় অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ে) প্রযোজ্য হবে না।

একই সঙ্গে বিশেষ অবস্থায় অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত দেবে উপজেলা যাচাই কমিটি। বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের বিশেষ বিধান বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে সম্প্রতি ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ বিধিমালা, ২০১৮’ চূড়ান্ত করেছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রিসভার অনুমোদন ও জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার পর ২০১৭ সালের ১১ মার্চ ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭’ এর গেজেট প্রকাশ করে সরকার। এই আইনেও আগের মতো বিয়ের বয়স মেয়েদের ১৮ বছর এবং ছেলেদের ২১ বছর রাখা হয়। তবে বিশেষ অবস্থায় অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ের সুযোগ রাখা হয় আইনে।

আরও পড়ুন >> বিশেষ ক্ষেত্রে কম বয়সীদের বিয়ের বিধান রেখে বিল পাস

আইনের ১৯ ধারার বিশেষ বিধানে বলা হয়- ‘এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, বিধি দ্বারা নির্ধারিত কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থে, আদালতের নির্দেশ এবং পিতা-মাতা বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতিক্রমে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে, বিবাহ সম্পাদিত হইলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না।’

কিন্তু ধারাটি নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিতর্ক ওঠে। বিশেষজ্ঞরা মতামত দেন, এ বিশেষ বিধান বাল্যবিবাহ বাড়িয়ে দেবে। বিশেষ বিধানের মাধ্যমে সরকার ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ের অনুমোদন দিচ্ছে- এমন বক্তব্য আসতে থাকে বিভিন্ন মহল থেকে৷

বিধিমালার বিষয়ে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছি, আইনের মধ্যে সবকিছু নিয়ে আসা যায় না। সেগুলো বিধির মধ্যে থাকবে। সেটা আমরা রেখেছি।’

তিনি বলেন, ‘সমাজে বাল্যবিবাহ আছে বলেই তো আমরা বাল্যবিবাহ আইন করেছি, এখন বিধিমালা করলাম। কিন্তু কালকেই বাল্যবিয়ে নির্মূল করে ফেলবো- সেটাও নয়। বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে যে প্রতিবন্ধকতাগুলো আছে সেগুলো সুন্দরভাবে আইন ও বিধিতে উপস্থাপন করা হয়েছে।’

আরও পড়ুন >> বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭ কেন সাংঘর্ষিক নয় : হাইকোর্ট

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিধিটা দেখলে আপনারা বুঝতে পারবেন যে, বিশেষ অবস্থায় যে বাল্যবিবাহ সেটাও কিন্তু সহজ বিষয় নয়। বিশেষ বিধানের আওতায় বিয়ের ক্ষেত্রে আদালতে আবেদন করতে হবে। আদালত এ বিষয়ে যাচাই কমিটিকে দায়িত্ব দেবে। যাচাই কমিটি সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে মতামত দেবে। সেই মতামতের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেবে আদালত।’

‘অনেকের ভুল ধারণা ছিল যে, ধর্ষণের বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে বিশেষ বিধানের মাধ্যমে বিয়ে দেয়া আমাদের চিন্তা। কিন্তু আমরা যে সেটা চাই না, বিধিমালায় তা পরিষ্কার করা হয়েছে’- বলেন মেহের আফরোজ।

বাল্যবিবাহ নিরোধ বিধিমালায় বাল্যবিবাহের বিশেষ বিধান প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, প্রত্যেক উপজেলায় অপ্রাপ্তবয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থ যাচাইয়ে কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটির সভাপতি হবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকবেন- উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মনোনীত একজন মেডিকেল অফিসার, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভা/ইউনিয়ন পরিষদের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মনোনীত একজন কিশোর ও একজন কিশোরী। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হবেন এই কমিটির সদস্য-সচিব।

বিধিমালায় বলা হয়েছে, বিশেষ বিধানের আলোকে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উপযুক্ত আদালতে উভয়পক্ষের পিতা-মাতা বা আইনগত অভিভাবক বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অপ্রাপ্তবয়স্কসহ উভয়পক্ষ বা বিয়ের পাত্র-পাত্রী উভয়ের যৌথ আবেদনের ভিত্তিতে কারণ উল্লেখ করে দালিলিক প্রমাণসহ (যদি থাকে) আবেদন করতে পারবেন। আদালত আবেদনটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য যাচাই কমিটিতে পাঠাবেন। কমিটি বিষয়টি যাচাই করে ১৫ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবে।

আরও পড়ুন >> বাল্যবিবাহ বন্ধে একটি সর্বজনীন আইন হচ্ছে

যাচাই কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, বিশেষ বিধানের আলোকে আবেদনপ্রাপ্তির পর যাচাই কমিটি অনুসন্ধান করে বিয়েটি অপ্রাপ্তবয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থে এবং সর্বশেষ বিকল্প হিসেবে হচ্ছে বলে নিশ্চিত হলে, নির্ধারিত বয়সসীমার আগে আবেদিত বিয়ের বিষয়ে সুস্পষ্ট মতামতসহ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবে।

তবে আবেদিত বিয়েটি জোরপূর্বক হলে; আবেদিত বিয়েটি ধর্ষণ, অপহরণ, জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন ইত্যাদি কারণে সংঘটিত হলে; আবেদিত বিষয়ে ধর্ষণ, অপহরণ, জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষের মধ্যে কোনো মামলা বিচারাধীন থাকলে যাচাই কমিটি বিয়ে সম্পাদন না করার বিষয়ে মতামত দিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবে বলে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর আদালতের কাছে যদি প্রতীয়মান হয় যে, অপ্রাপ্তবয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থেই বিশেষ বিধানের আওতায় আবেদিত বিয়ে হওয়া সমীচীন, সেক্ষেত্রে আবেদিত বিয়ের বিষয়ে অনুমতি দিতে পারবেন বা আদালত প্রয়োজন মনে করলে এ বিষয়ে অধিকতর তদন্ত/পুনঃতদন্ত করে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে পারবেন।

এতে আরও বলা হয়েছে, যাচাই কমিটি লিখিত প্রতিবেদন সিলমোহর করা খামে আদালতে পাঠাবে। আদালত প্রয়োজন মনে করলে কমিটিকে আদালতে উপস্থিত হওয়ারও আদেশ দিতে পারবে।

বিধিমালায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে জাতীয় কমিটি, জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে জেলা কমিটি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে উপজেলা কমিটি, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ইউনিয়ন কমিটি গঠন করে কার্যপরিধি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন >> বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ও এমপি কন্যার বাল্যবিয়ে

বাল্যবিবাহের উদ্যোগ বা বাল্যবিবাহ আয়োজনের সংবাদ পেলে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি ওই বিয়ে বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বা আদালতে অভিযোগ দিতে পারবে। অভিযোগ দেয়া হলে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি ওই অভিযোগ দেয়ার তথ্য লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট উপজেলা কমিটির সদস্য সচিবের কাছে পাঠাবেন। কমিটির সদস্য সচিব এ তথ্য নিবন্ধন বইতে সংরক্ষণ করবেন বলেও বাল্যবিবাহ নিরোধ বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

আরএমএম/এমএআর/পিআর

আরও পড়ুন