চাকরির পাশাপাশি ক্যাটারিংয়ে সফলতা
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন রায়হানুল ইসলাম। চাকরির বেতন দিয়ে নগরীতে জীবনযাত্রার ব্যয় বহন বড়ই দায়। ভাবছিলেন, কী করে আয় বাড়ানো যায়। চাকরি বদলাবেন নাকি পাশাপাশি কিছু করবেন। নাকি চাকরি ছেড়ে দিয়ে শুধু ব্যবসা করবেন। কিন্তু ব্যবসায় তো ঝুঁকি আছে। তাই সিদ্ধান্ত নিলেন, চাকরির পাশাপাশি ভিন্ন কিছু করার।
দুই বন্ধুর সঙ্গে বিষয়টি শেয়ার করলেন। অবশেষে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলেন ক্ষুদ্র পরিসরে ক্যাটারিং ব্যবসা (খাবার প্রস্তুত ও সরবরাহ) শুরু করবেন। গড়ে তুললেন ‘এফসি ক্যাটারিং’ নামের প্রতিষ্ঠান। আস্তে আস্তে সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করলেন তারা। শুরুতে ১০ জনের খাবার, এখন শতাধিক মানুষের দুপুরের খাবার সরবরাহ করছেন রায়হানুল ইসলাম ও তার দুই বন্ধু।
রাজধানীতে রায়হানের মতো অনেকেরই এখন বাড়তি আয়ের উৎস ক্যাটারিং সার্ভিস। ফলে এ ব্যবসা এখন খুবই জনপ্রিয়। অনেকে আবার এটিকে একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে নিয়েছেন। নিজেরা স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানও হচ্ছে অনেকের।
নতুন এ ব্যবসার ধরন সম্পর্কে জাগো নিউজ’র সঙ্গে কথা হয় রায়হানুল ইসলামের। ক্যাটারিং ব্যবসায় নিজেদের প্রত্যাশা, প্রাপ্তি, সমস্যা ও সম্ভাবনার বিষয়গুলো তুলে ধরেন তিনি।
এ ব্যবসার শুরুটা সম্পর্কে রায়হানুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমেই মাথায় আসলো চাকরির পাশাপাশি কিছু একটা করা দরকার। অনেকেই তো অনেক ধরনের ব্যবসা করে। আমরা তিনজন একসঙ্গে হলেই আলোচনা করতাম, কী করা যায়। নতুন কিছু করতে পারি কি-না। এমন চিন্তা থেকে ক্যাটারিং ব্যবসায় নামা।’
“আমাদের মধ্যে একজন হোটেল ব্যবসায়ী ছিল। তাকে বললাম, তুমি খাবার রান্না করবা, আমরা পৌঁছে দেব। আমাদের প্রথম চিন্তা ছিল, ভালো পরিবেশে রান্না করা টাটকা ও সুস্বাদু খাবার মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া। সেই লক্ষ্যে ‘এফসি ক্যাটারিং’র পথচলা শুরু।”
তিনি বলেন, ‘স্বল্প পরিসরে আমাদের যাত্রা শুরু হয়। প্রথমে মাত্র ১০ জনের কাছে দুপুরের খাবার পৌঁছে দিতাম। এখন রাজধানীর বিভিন্ন অফিসে প্রতিদিন শতাধিক মানুষের দুপুরের খাবার সরবরাহ করছি। পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের অর্ডারও পাচ্ছি।’
‘এক বছর হলো এ ব্যবসায় আসা। আগামীতে এর পরিধি আরও বড়ানোর চিন্তা রয়েছে। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি’- যোগ করেন তিনি। এ ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বড় সমস্যা হচ্ছে ব্যবস্থাপনা। এখানে যারা কাজ করেন অর্থাৎ শ্রম দেন তারা কোনো নিয়মের মধ্যে আসতে চান না। তাদের নিয়ম মানাতেই হিমশিম খেতে হয়।’
‘যারা এ ব্যবসায় নতুন, তাদের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। নানাভাবে সমস্যা আসতে পারে। যেমন- খাবার তৈরির ব্যয় বাড়িয়ে দেয়া, খাবার নষ্ট করা, অনেকেই বিভিন্ন অযৌক্তিক পরামর্শ দিতে পারেন, ইত্যাদি। কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি সবচেয়ে জটিল। যারা এটি করতে পারবেন না, তাদের জন্য এ ব্যবসায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।’
ক্যাটারিং ব্যবসায় আরেকটি বড় সমস্যা হলো- আপনি যেখানে বা যে অফিসে খাবার দিচ্ছেন, সেখানকার অফিস পিয়ন বা অফিস সহকারী যারা আছেন, তাদের বিশেষ সুবিধা দেয়া। তবে সব অফিসে এমনটি হয় না। অফিস পিয়নদের বিশেষ সুবিধা না দিলে আপনার খাবারের মানের বিষয়ে ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হবে। এছাড়া কিছু এলাকা আছে, যেখানে ব্যবসা শুরু করতে হলে আপনাকে ওই এলাকার বড় ভাইয়ের (রাজনৈতিক নেতা বা প্রভাবশালী ব্যক্তি) মাধ্যমে যেতে হবে, অন্যথায় আপনি ব্যবসা করতে পারবেন না।
আর কী কী চ্যালেঞ্জ আছে?
‘আরও বেশকিছু চ্যালেঞ্জ আছে। এটা যেহেতু খাবারের ব্যবসা, মানুষ একটা নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খেতে চায়। তাই যানজটের এ নগরীতে সঠিক সময়ে খাবার সরবরাহ করাটাই বড় চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি খাবারের মান ও স্বাদ ঠিক রেখে স্বল্পমূল্যে তা সরবরাহ করা। তবে একটু সচেতন হলে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব।’
‘এ ব্যবসা এখন অনেক প্রতিযোগিতামূলক। এর কয়েকটি ধাপ রয়েছে। প্রথমত, খাবারের মান ঠিক রাখা। দ্বিতীয়ত, সাধ্যের মধ্যে দাম রাখা। অনেকে আছেন, যারা খাবারের মান দেখেন, আবার দামটা তাদের নিজেদের মতো করে চান। এটা সমন্বয় করতে পারলে সফলতা মিলবে। এ কারণে আপনাকে একটু কৌশলী হতে হবে।’
এ ব্যবসার সম্ভাবনা সম্পর্কে রায়হানুল ইসলাম বলেন, ‘ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ক্যাটারিং ব্যবসায় অপার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, এটা সম্ভাবনাময় খাত। দিনদিন অফিস আদালতে কর্মীর সংখ্যা বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে বিয়ে, জন্মদিনসহ সামাজিক ও ব্যবসায়িক বিভিন্ন অনুষ্ঠান। এসব অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা ও খাবারের সরবরাহ ক্যাটারিং সার্ভিসের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। এসব কারণে দিন যত যাচ্ছে, এ সেবার চাহিদা তত বাড়ছে।’
‘রাজধানীতে এখন অনেকেই এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। বেশির ভাগই চলছে স্বল্প পরিসরে। পরিকল্পিতভাবে বিনিয়োগ করতে পারলে এ খাতে ভালো করা সম্ভব’- যোগ করেন তিনি।
এসআই/জেডএ/এমএআর/এমএস