এক বছরে সাড়া ফেলেছে ‘খান কিচেন’
বাঁচার জন্য প্রয়োজন খাবার। ভালো খাবার খেলে সুস্থ থাকবে দেহ। নগরীর কর্মজীবীদের কথা চিন্তা করে কম দামে স্বাস্থ্যকর গরম খাবার পৌঁছে দিতে জার্মান প্রযুক্তিতে দেশে বৃহৎ বাণিজ্যিক রান্নাঘর প্রতিষ্ঠা করেছে ‘খান কিচেন’।
রাজধানীর বাড্ডার বেরাইদে প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রায় শতকোটি টাকা ব্যয়ে ১৬ বিঘা জমির ওপর অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি ব্যবহার করে গড়ে উঠছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষের খাবার তৈরির সক্ষমতা রয়েছে এশিয়ার সবচেয়ে বড় এ রান্নাঘরে। প্রতিষ্ঠনটি শুধু মানসম্পন্ন খাবার উৎপাদনই নয়, সৃষ্টি করছে হাজারও যুবকের কর্মসংস্থান।
খান কিচেনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিশ্ববিখ্যাত রন্ধনশিল্পী টনি খান। এ ছাড়া নির্বাহী পরিচালক হিসেবে আছেন প্রবাসী ব্যবসায়ী আলিফ আহমেদ খান। আর প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) দায়িত্ব পালন করছেন সফল নারী উদ্যোক্তা আফরোজা খান।
বিশ্ব পরিচিত রন্ধনশিল্পী টনি খান ১৯৯৮ সালে ‘টপটেন শেফ’ অ্যাওয়ার্ড পান। ১৯৯১ সালে শেফ অব দ্য ইয়ার হিসেবে ঘোষিত হন। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্সসহ আরও অনেক দেশে রন্ধনশিল্পী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ সরকারের কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এবং আইএলও’র এক্সপার্ট হিসেবে কাজ করছেন।
খান কিচেনের বিষয়ে কথা হয় বিশ্ববিখ্যাত রন্ধনশিল্পী টনি খানের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘রন্ধন শিল্পের ওপর আমার দীর্ঘ ৪১ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। এটি কাজে লাগিয়ে দেশের মানুষকে স্বাস্থ্যকর খাবার দিতেই আধুনিক সব প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা ‘খান কিচেন’ প্রতিষ্ঠা করেছি। এক বছর হয়েছে। ভালো সাড়াও পাওয়া যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ফ্রেশ ও স্বাস্থ্যকর খাবার আমরা তৈরি করছি। এতে খরচ বেশি পড়ছে। তবে বেশি উৎপাদনের কারণে স্বাস্থ্যসম্মত এ খাবার ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দিতে পারছি। আমরা ইতোমধ্যে ইউএস অ্যাম্বেসিসহ বিভিন্ন ব্যাংক ও কর্পোরেট অফিসে খাবার সরবরাহ করছি। এভাবেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আগামীতে এয়ারলাইন্সগুলোতে খাবার সরবরাহ করা হবে।
দেশে ব্যবসার অভিজ্ঞাতা তুলে ধরে খান কিচেনের চেয়ারম্যান বলেন, রাজধানীর প্রধান সমস্যা যানজট, যার কারণে অর্ডারকৃত পণ্য সঠিক সময়ে পৌঁছে দেয়া কষ্টকর। এ ছাড়া বেশি অর্ডার এক সঙ্গে খুব কম পাওয়া য়ায়। অর্থাৎ একটি অফিস থেকে দুই তিনজন অর্ডার করে, যাদের আমরা খাবার দিতে পারি না। কমপক্ষে চারজন হলে খাবার দিচ্ছি এটিও একটি চ্যালেঞ্জ। মানসম্পন্ন খাবার তৈরি করতে দক্ষ শেফ দরকার। তবে চাহিদা অনুযায়ী পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া এখনও অনেক মানুষ খাবারের বিষয়ে সচেতন নন। তাদের বোঝাতে হবে। তবে আমরা বিশ্বমানের খাবার তৈরি করছি। আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছি। প্রথম দিন আমরা মাত্র ৩৫০ জনের খাবার দিয়ে শুরু করেছিলাম। আজকে প্রায় ৬ হাজার লোকের খাবার সরবরাহ করছি। তাই ধৈর্য ধরতে হবে। আশা করছি, কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাবো।
ক্যাটারিং ব্যাবসার সম্ভাবনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঢাকা হচ্ছে পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম জনবহুল নগরী। এখানে প্রায় দেড় কোটি লোক বাস করে, যার অধিকাংশ মধ্যবিত্ত কর্মজীবী মানুষ। যেখানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭৫ লাখ লোক শুধু রাজধানীতেই খাবার খাচ্ছে। এটি বাসা থেকে রান্না করা কিংবা হোটেল রেস্টুরেন্ট থেকে কিনে; কোনো না কোনো উপায়ে মানুষ খাচ্ছে। তাই এখানে বড় একটি বাজার রয়েছে। সঠিক নিয়মে ব্যবসা করলে সফল হওয়া সম্ভব। তাই আমরা চাই বড়বড় কর্পোরেটগুলো এ ব্যবসায় আসুক। এতে করে মানুষের স্বাস্থ্যকর খাবারের নিশ্চয়তা হবে। একই সঙ্গে একটি মেগা কিচেন শুধু খাবার তৈরি করবে না, হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করবে।
প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান বলেন, খাবার উৎপাদনে দেশে আমরাই সর্বপ্রথম ব্যবহার করছি বিশ্বের খাবার ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের সর্বাধুনিক পদ্ধতি ফোর্থ জেনারেশনের হাই এফিসিয়েন্সি ক্ল্যাসিফায়ার প্রযুক্তি। এ ছাড়া আমরা নিশ্চিত করেছি স্টিমইনজেকশন সিস্টেম, অ্যাপেক্সি ফ্লোর এবং ইলেকট্রিক পদ্ধতিতে পরিবেশবান্ধব রান্না। এখানে খাবারে যেসব বিষয়ের বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে তা হলো স্বাস্থ্যকর, সুস্বাদু, পুষ্টিকর, জীবাণুমুক্ত ও সতেজ। নিশ্চিত করা হচ্ছে সর্বোচ্চ মানের কাঁচামাল, উৎপাদনের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি, কম্পিউটারাইজড ল্যাবরেটরি, নিজস্ব প্যাকেজিং ইউনিটের আধুনিক ব্যবহার।
এ ছাড়া ভোজন রসিকদের সুবিধার্থে খান কিচেন ব্যবহার করছে বিশেষ প্রযুক্তির বক্স, যা বাইরের আর্দ্রতা থেকে খাবারকে সুরক্ষিত ও টাটকা রাখে। ফলে খাবার গরম থাকে ছয় ঘণ্টারও বেশি সময়। অর্থাৎ অফিসে বসেই গরম গরম টাটকা দুপুরের খাবার খেতে পারছেন কর্মজীবীরা।
‘খান কিচেন’ নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে গ্রাহকদের চাহিদা অনুসারে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে। খাবারের দামও নাগালের মধ্যে। তাদের দুই ধরনের খাবার আছে। প্রিমিয়াম মেন্যু ও এক্সিকিউটিভ মেন্যু।
প্রিমিয়াম মেন্যুতে রয়েছে স্টিম রাইস, ভেজিটেবল স্যুপ, মুরগি অথবা মাছ, সবজি ও মিষ্টান্ন। মাছ ও মাংসের বিভিন্ন ধরনের ডিশ থাকে এই মেন্যুতে। দাম পড়বে ১৩৫ টাকা। আর এক্সিকিউটিভ মেন্যুতে আছে ভাত, মুরগির মাংস ভুনা অথবা মাছ, ডাল, সবজি বা ভাজি। এর দাম পড়বে ৯৫ টাকা। একেক দিন একেক ধরনের মেন্যু থাকে।
আগেরদিন বিকেল ৫টার মধ্যে ১৬৫২০ নম্বরে ফোন করলেই গ্রাহকের কাছে পৌঁছে যাবে পরের দিনের দুপুরের খাবার। তবে সর্বনিম্ন চারটি খাবারের অর্ডার দিতে হবে। মোবাইল (০১৮৭৯৪৬৬৬৬৬) ও ওয়েবসাইটেও (kk.com.bd ও www.facebook.com/KhansKitchenBD) অর্ডার দেয়া যাবে।
এসআই/এমবিআর/জেডএ/এমএস