দিনে লাখো মানুষের খাবার সরবরাহ করছে ‘ডিস ক্যাটারিং’
দেশের অর্থনীতিতে সংযোজিত হয়েছে ব্যবসায়িক ধারণা ‘ক্যাটারিং ব্যবসা’। স্বাস্থ্যসম্মত ও ঘরোয়া পরিবেশে রান্না করা খাবার অফিস কিংবা পার্টিতে সর্বোপরি আপনার দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়ে অনেকেই ভালো আয় করছেন। সম্ভাবনাময় এ খাতে শুধু নতুন উদ্যোক্তা নন, অনেক বড় প্রতিষ্ঠানও ঝুঁকছে আধুনিক ব্যবস্থায়। এমনকি অনেক গ্রুপ অব কোম্পানিও নিজ কর্মীদের খাবার সরবরাহ করছে। এ অভিজ্ঞতা থেকেই ক্যাটারিং ব্যবসায় নেমেছে ‘ডিস ক্যাটারিং’। দেশের অন্যতম শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ-আরএফএল তার বিভিন্ন অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের নিয়মিত খাবার সরবরাহ করছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানীজুড়ে ক্যাটারিং ব্যবসার কারণে সাশ্রয়ী দামে খাবার পাচ্ছেন চাকরিজীবী থেকে বিভিন্ন পেশার মানুষ। অন্যদিকে স্বাস্থ্যগত ও মানের দিকে নিশ্চিত থাকছেন তারা। চাকরি বা অন্য ব্যবসার পাশাপাশি সহজেই এ ব্যবসা করা সম্ভব। আগ্রহ থাকলে যে কেউ এ ব্যবসায় ভালো করতে পারেন। কারণ ক্যাটারিং একটা শিল্প।
তাই ডিস ক্যাটারিং-এর সিনিয়র ম্যানেজার সুবাস কুমার দেব বলেন, ‘কাজকে ভালোবাসতে হবে। শুধু জীবিকার জন্য কাজকে বেছে নিলে হবে না। লক্ষ্য সেট করে গ্রাহকের চাহিদা বিবেচনায় রেখে এগিয়ে যেতে হবে মন থেকে, থাকতে হবে ডেডিকেশন। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রত্যেক কর্মীকেই সেবা দিচ্ছে ডিস ক্যাটারিং। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ৫ বেলা আমরা খাবার সরবরাহ করে আসছি। আমাদের সার্বক্ষণিক প্রস্তুতি থাকার কারণে সুবিধাও পাচ্ছে গ্রুপের সর্বস্তরের কর্মীরা।’
‘সারাদেশে ১৩টি ফ্যাক্টরিতে রান্না হয়। আমাদের দেশব্যাপী যেসব ডিপো রয়েছে- সেখানেও রান্নার ব্যবস্থা রয়েছে। শুধু ঢাকাতেই ৪ হাজার কর্মীকে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খাবার সরবরাহ করছি। এসব খাবারের মধ্যে ভাত, মাছ, মাংস, নান রুটি, রিচ ফুড রয়েছে। এছাড়া চাইনিজসহ হরেক রকমের আইটেমও রয়েছে। সবই আমাদের নিজস্ব প্রশিক্ষিত বাবুর্চি দিয়ে রান্না করা হয়। রান্নাঘরের পরিবেশও শতভাগ স্বাস্থ্যকর। এই পরিবেশ উন্নয়নে ব্যবহৃত হচ্ছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি’, -বলেন তিনি।
প্রতিদিন এক লাখ মানুষের জন্য খাবার পরিবেশন করা হয় জানিয়ে সুবাস কুমার দেব আরও বলেন, আমাদের এখানে খাবারের মান ও পরিচ্ছন্নতা নিয়ে কখনও প্রশ্ন ওঠার সুযোগ নেই। কারণ, আমরা খাবারের গুণগত মান ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করছি। এর সুফলও পাওয়া গেছে। আমাদের নিজস্ব ক্যাটারিং সার্ভিস চালু হওয়ার পর থেকে কখনও কেউ অভিযোগ করেননি।
তিনি বলেন, ‘প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আগে টিফিন বক্স হাতে করে আনতে হতো। এখন তারা টাটকা খাবার পাচ্ছেন অফিসেই। এটা তাদের কর্মস্পৃহা বাড়িয়েছে। আমরা আপাতত প্রাণ-আরএফএল সংশ্লিষ্ট সব অনুষ্ঠানে খাবার সরবরাহ করছি। এ কাজে এক হাজার লোকের কর্মসংস্থানও হয়েছে। অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের পার্টটাইম কাজেরও সুযোগ দিয়ে থাকি।’
খাবার পরিবেশন করে অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সক্ষম হচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি জানান, রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় চাল, ডাল, মাছ, মাংস ও অন্যান্য কাঁচামাল বাইরে থেকে ক্রয় করছি। এতে আমাদের মাধ্যমে অন্য ব্যবসায়ীরাও স্বাবলম্বী হচ্ছেন। এছাড়া একটি গ্রুপের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেয়ে সুস্থভাবে তাদের শ্রম দিতে পারছেন। এটা নিশ্চয় বড় বিষয়।
ডিস ক্যাটারিং নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেন, শিগগিরই ক্যাটারিং নিয়ে বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু করতে চাই। আমাদের ক্যাটারিং ব্যবসার মূল উদ্দেশ্য হবে- ভেজালমুক্ত, উন্নত মানসম্পন্ন ও স্বাস্থ্যকর খাবারের নিশ্চয়তা শতভাগ অর্জন করতে সক্ষম হওয়া। সাশ্রয়ী মূল্যে খাবার সরবরাহ করে সবার মন জয় করতে চাই। আশা করি, সেটা আমরা পারব।
এ ব্যবসার চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে তিনি বলেন, এটা অবশ্যই একটি শৌখিন ব্যবসা। এ ব্যবসার জন্য বাইরে থেকে সবকিছু আনতে হয়। বাইরে থেকে খাদ্যসামগ্রী কিনলে অনেক সময় স্বাস্থ্যকর বিষয়টি নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। এটাই টিকে থাকার মূল সমস্যা। যদি নিজস্ব লজিস্টিক সাপোর্ট থাকে তাহলে টিকে থাকা সহজ।
এমএ/জেডএ/আরএস/পিআর/জেআইএম