ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

সংকুচিত হচ্ছে খুলনা

প্রকাশিত: ১১:২১ এএম, ১৩ আগস্ট ২০১৫

খুলনায় প্রতিনিয়ত সংকুচিত হয়ে আসছে কৃষি জমি।  এ জেলায় আবাদযোগ্য জমির তুলনায় অনাবাদি জমির পরিমাণও বেড়ে চলেছে।  তার উপর প্রাকৃতিক কারণে গত বছর আবাদযোগ্য জমির মধ্যে ৩৪ হাজার ৭৯২ হেক্টর জমিতে কোনো আবাদ বা চাষ হয়নি।  বর্তমানে আবাদযোগ্য জমিতে ধান, তরমুজ, তিল, সরিষাসহ বেশ কিছু খাদ্য শস্য আবাদ হয়ে আসছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী খুলনার মোট জনসংখ্যা ২৩ লাখ ৩২ হাজার ৪৩৮ জন।  এর মধ্যে কৃষক পরিবারের সংখ্যা ২ লাখ ৬৪ হাজার ৫২৫ জন।  প্রতিটি কৃষক পরিবারের ৪ থেকে ২৫ জন সদস্য রয়েছে।

খুলনা জেলায় খাদ্য উৎপাদনে ঘাটতি রয়েছে।  এর অন্যতম কারণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে জনসংখ্যা সেই সাথে খাদ্য চাহিদাও।  যদিও কৃষি জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই, বরং প্রতিনিয়ত জমি সংকুচিত হয়ে আসছে।

খুলনায় প্রতি বছর সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান, স্থাপনা বা ইমারত গড়ে উঠছে।  এ কাজে ব্যবহৃত অধিকাংশ জমি কৃষি বা ফসলি জমি।  এসব জমিতে কোথাও বছরে ২ বার আবার কোথাও বছরে ৩ বার ফসল উৎপাদন হয়েছে।  এরপরও জমির মালিকদেরকে এক প্রকার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জমি ছাড়তে হচ্ছে।

অপরদিকে, ক্রমান্বয়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে মানুষের আবাসনের জন্য গড়ে উঠছে নতুন নতুন বাড়ি।  এসব ইমারত বা প্রতিষ্ঠান এবং বাড়ি-ঘরের জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে ফসলি বা কৃষি জমি।

সরকারি হিসেব মতে প্রতি বছর শতকরা ২ ভাগ হারে ফসলি জমিতে ইমারত গড়ে তোলা হচ্ছে। তবে বেসরকারি হিসেবে এর পরিমাণ শতকরা ৬ ভাগ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে জেলায় আবাদযোগ্য বা ফসলি জমির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩৬ হাজার ৩৫৮ হেক্টর।  ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এসে এই জমির পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৪৭ হেক্টর।  অর্থাৎ তিন বছরের ব্যবধানে ৩৪ হাজার ৭৯২ হেক্টর ফসলি জমি কমে যায়।  এর পুরোটাই ব্যবহার হয়েছে ইমরাত বা বাড়ি-ঘর নির্মাণ কাজে। এভাবে প্রতিবছর কমে আসছে ফসলি জমির পরিমাণ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র মতে, গত বছরের হিসেবে জেলায় মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ছিলো ১ লাখ ৪৮ হাজার ৭৬৪ হেক্টর।  এর মধ্যে ৩৪ হাজার ৭৯২ হেক্টর আবাদযোগ্য জমি আবাদ করা হয়নি।  এছাড়া জেলায় অনাবাদি জমির পরিমাণ ২ লাখ ৬১ হাজার ২১১ হেক্টর।

খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কাজী আনিসুজ্জামান বলেন, গ্রাম অঞ্চলে অপরিকল্পিত নতুন নতুন বাড়ি-ঘর এবং শহর অঞ্চলে পুকুর-ডোবা-খাল ভরাট করে আবাসন, শিল্প-কারখানা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করার কারণে খুব দ্রুত কৃষিজমি কমে যাচ্ছে।  জনসংখ্যা বাড়ছে।  এক জমিকে ২ ফসলি থেকে ৩ ফসলি আর সার-বীজ-কিটনাশক ব্যবহার করে উৎপাদন বাঁড়ানো সম্ভব।  কিন্তু তা অসীম পরিমাণে বাড়ানো সম্ভব নয়।  সে কারণে কৃষি জমি কমে যাওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা ডিসিপ্লিনের প্রধান প্রফেসর মো. রেজাউল করিম এ প্রসঙ্গে প্রতিবেদককে বলেন, উন্নত বিশ্বে নিজের জমি হলেও ব্যক্তি নিজের খেয়াল-খুশি মতো ব্যবহার করতে পারে না।  আমাদের সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখনি প্রতি ইঞ্চি কৃষিজমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।  স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে ভূমির ঊর্ধ্বমুখী ব্যবহারকে (ভার্টিক্যাল এক্সপানসন) উৎসাহিত করতে হবে।  প্রয়োজনে কৃষিজমি ব্যবহার সম্পর্কিত নতুন আইনের প্রয়োগ ঘটাতে হবে।

এমএএস/পিআর