স্যার কি থাকছেন?
>> অক্টোবরে গঠিত হবে নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভা
>> কারা থাকছেন, জিজ্ঞাসা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর দফতর কর্মকর্তাদের
>> এ মন্ত্রিসভায় কারা থাকছেন, এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রীর
অক্টোবরে গঠিত হবে নির্বাচনকালীন সরকার। এ সরকারের মন্ত্রিসভায় কারা থাকছেন আর কারা থাকছেন না, এটা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা সচিবালয়ে। বিভিন্ন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর দফতরের কর্মকর্তাদের কৌতূহলী জিজ্ঞাসা- স্যার কি থাকছেন? নিজেদের মধ্যে আলোচনা তো বটেই, সাংবাদিক পেলে নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় তাদের দফতরের মন্ত্রীর স্থান হবে কি-না তা নিশ্চিত হতে চাইছেন।
সব মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর দফতরের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস), ব্যক্তিগত কর্মকর্তাসহ কিছু জনবল থাকেন, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর বিদায়ের সঙ্গে তাদেরও বিদায় নিতে হয়।
এক মন্ত্রীর দফতরের এমন একজন কর্মকর্তা, যিনি সচিবালয়ে ৬ নম্বর ভবনে বসেন, এই প্রতিবেদককে দেখে বললেন, ‘ভাই নির্বাচনকালীন সরকার কবে হবে? কে কে থাকছেন, জানেন কিছু? আমার মন্ত্রীর বিষয়ে কিছু শুনেছেন? আপনারা তো অনেক খবর রাখেন,’ বেশির ভাগ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখন এমন কৌতূহলী।
বর্তমানে মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ৩৩ জন মন্ত্রী, ১৭ জন প্রতিমন্ত্রী, দুজন উপমন্ত্রী রয়েছেন। তবে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী মিলে নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা ৩০ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও সংবিধানে নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে সুষ্পষ্টভাবে কিছু বলা নেই।
তবে একাধিক মন্ত্রী জানিয়েছেন, নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় কারা থাকছেন আর কারা থাকছেন না, সেটা পুরোপুরি নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর। তারপরও সিনিয়র মন্ত্রী, যারা দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন এবং জুনিয়রদের মধ্যে যারা ভালো করেছেন, তারা নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় থাকতে পারেন বলে আলোচনা চলছে।
তাই নির্বাচনকালীন সরকারে স্থান পাওয়া নিয়ে বেশিরভাগ মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী কিছুটা চিন্তিত।
যে মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন, সেখানকার প্রতিমন্ত্রী বাদ পড়তে পারেন। কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রীও টিকে যাবেন। গতবারের মতো এবারও কোনো কোনো মন্ত্রীর একাধিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পড়বে বলেও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। তবে এই সরকারে কোনো উপমন্ত্রীর থাকার সম্ভবনা নেই বলেই মনে করছেন সবাই।
নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় থাকছেন কি না- জানতে চাইলে মঙ্গলবার গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমি সেটা জানি না। এটা একান্তই প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার।’
এর আগে গত ১১ সেপ্টেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, অক্টোবরের মাঝামাঝি নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হতে পারে।
ওইদিন তিনি বলেছিলেন, ‘নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় কোনো টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী থাকবেন না। আকারটা ছোট হবে। তবে জাতীয় পার্টি তাদের দু-একজন আরও অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছে, অনুরোধ করেছে। সেটাও প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার, তিনি কতটা বিবেচনা করবেন, সেটা এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এগুলো আলাপ-আলোচনার পর্যায়ে আছে।’
নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় আবুল মাল আবদুল মুহিত, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, ওবায়দুল কাদের, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, রাশেদ খান মেনন, আ ক ম মোজাম্মেল হক, হাসানুল হক ইনু, নুরুল ইসলাম নাহিদ, শাজাহান খান, আবুল হাসান মাহমুদ আলী, আনিসুল হক, মো. মুজিবুল হক, নুরুল ইসলাম বিএসসি, আসাদুজ্জামান খান কামাল, মুজিবুল হক চুন্নু থাকতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
আগামী ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয়েছে।
কয়েকজন সিনিয়র মন্ত্রী ইতোমধ্যে জানিয়েছেন এবারও গতবারের মতোই নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে। গতবার নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের জন্য ২০১৩ সালের ১১ নভেম্বর মন্ত্রিসভা বৈঠকের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তারিখবিহীন পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা। পরে রাষ্ট্রপতি যে ত্যাগপত্রগুলো গ্রহণ করেন তারাই পুনর্গঠিত সরকারে স্থান পাননি।
পুনর্গঠিত সরকারে যোগ দিতে ওই বছরের ১৮ নভেম্বর আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জাসদের আরও নতুন করে ছয়জন মন্ত্রী ও দুজন প্রতিমন্ত্রী শপথ নেন। কয়েক দিনের কল্পনা-জল্পনার পর ২১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীসহ ২৯ সদস্যের নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। এর মধ্যে মন্ত্রী ছিলেন ২১ জন, প্রতিমন্ত্রী সাতজন। একই দিন তাদের দফতরও বণ্টন করা হয়। পুনর্গঠিত ওই মন্ত্রিসভায় মহাজোট সরকারের ১৬ জন মন্ত্রী ও ১৪ জন প্রতিমন্ত্রী বাদ পড়েছিলেন। মহাজোট সরকারের মন্ত্রিসভায় তখন ৩১ জন মন্ত্রী ও ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।
তখন প্রধানমন্ত্রীর আরও দুই উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। পুনর্গঠিত মন্ত্রিসভায়ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন।
আরএমএম/জেডএ/পিআর