যৌন হয়রানি : ঝিমিয়ে পড়েছে পহেলা বৈশাখের তদন্ত কাজ
পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে যৌন হয়রানির ঘটনার চার মাস চলছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত একজনকেও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন সংস্থা। আসামিদের তথ্য দিলে লাখ টাকা পুরষ্কার ঘোষণার পরও তারা জনগণ ও পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে। সম্প্রতি এ ঘটনায় ক্লোজ সার্কিড (সিসি) ক্যামেরা দেখে কয়েকজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ কার্যালয়ে আনা হয়। তবে যৌন হয়রানির ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ না পাওয়ায় তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়।
জাগো নিউজের পক্ষ থেকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন তিনজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, আসামি গ্রেফতার করতে না পারার পেছনে নানা কারণ রয়েছে। ফলে ঝিমিয়ে পড়েছে এ মামলার তদন্ত কাজ।
এর আগে এ বছরের ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শেষে টিএসসি এলাকায় নারীরা যৌন হয়রানির শিকার হন। ঘটনাস্থলে কয়েকজন পুলিশের উপস্থিত থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি তারা। পরদিন পুলিশ নিজেই বাদি হয়ে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করে।
মামলার তদন্তভার দেয়ার হয় ডিবি পুলিশকে। তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে প্রথমেই আসামিদের ছবি শনাক্ত করে ডিবি। এ ঘটনায় রাজধানী থেকে কয়েকজন যুবককে আটকও করে ডিবি।
ডিবি পুলিশের দক্ষিণ জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাশরুকুর রহমান খালেদ জাগো নিউজকে বলেন, আসামিদের শনাক্তকৃত ছবির সঙ্গে কিছুটা মিল থাকায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২-৩ জনকে ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়। তবে সেদিন তারা স্ত্রীর সঙ্গে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে টিএসসিতে গিয়েছিল বলে দাবি করে। এরপর ডিবি কার্যালয়ে তাদের স্ত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। পরে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট ডিবির এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, আসামি শনাক্তের পরপরই আসামিদের ধরতে রাজধানীর কয়েকটি বেসরকারি হোস্টেল, মেস, বসতবাড়িসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অভিযান চালানো হয়। তবে তাদের খোঁজ মেলেনি। তাদের ছবি নিয়ে বিভিন্ন এলাকার মানুষকে জিজ্ঞেস করা হলেও তাদের কাছ থেকে কোন সহযোগীতা পাওয়া যায়নি।
ওই কর্মকর্তা আরো জানান, পত্রিকায় নিজেদের ছবি দেখে হয়তো আসামিরা এতদিনে বেশ বদলেছে। সামনে পেলেও তাদের গ্রেফতার সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে তারা ঢাকার বাইরে নির্জন কোন এলাকায় গিয়ে লুকিয়ে আছে। দেশের সব জেলায় আসামিদের ছবি পাঠানো হয়েছে। তবে মামলায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই।
এ ঘটনায় আসামিদের শনাক্তের কাজটি করলেও ভুক্তভোগী নারীদের সঙ্গে কোন কথা বলেনি পুলিশ। জানতে চাইলে ডিসি জাগো নিউজকে বলেন, এ পর্যন্ত কাউকে পাইনি, কেউ আসেও না।
এ ঘটনার কয়েকদিন পর আট আসামিকে শনাক্ত করে তাদের ছবি জনসম্মুখে প্রকাশ করে পুলিশ হেড কোয়ার্টার্স। তাদের ধরিয়ে দিলে কিংবা তাদের বিরুদ্ধে পুলিশকে তথ্য দিলে ১ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) এ কে এম শহীদুল হক। তবে কাজ হয়নি এতেও।
পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা কামরুল আহছান জাগো নিউজকে জানান, আসামিদের বিষয়ে পুলিশকে কেউ কোন তথ্য দিতে আসেন নি। ৪ মাসে এ পর্যন্ত কেউই পুরষ্কার পায়নি।
এই মামলায় পুলিশের আসামি ধরার কৌশল একের পর এক ব্যর্থ হচ্ছে। তাহলে কি পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাচ্ছে এই মামলা? এমন প্রশ্নের জবাবে মাশরুকুর রহমান খালেদ জাগো নিউজকে বলেন, ডিবি এই মামলাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে। আশা করা হচ্ছে আসামিরা দ্রুত গ্রেফতার হবে।
এআর/আরএস/এএইচ/পিআর