ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

বিএনপিকে শক্তিশালী করতেই ড. কামাল ঐক্য করছেন

সায়েম সাবু | প্রকাশিত: ০৭:১৭ পিএম, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

শ ম রেজাউল করিম। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক এবং সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী।

চলমান রাজনীতির বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে সম্প্রতি মুখোমুখি হন জাগো নিউজ’র। আলোচনায় বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গঠন, নির্বাচন, নির্বাচনকালীন সরকার, খালেদা জিয়ার বিচার, উন্নয়ন ও ভারত প্রসঙ্গ উঠে আসে। ‘সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে বদ্ধপরিকর’ উল্লেখ করে ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই আগামী নির্বাচন এবং নির্বাচনে বিএনপিও অংশ নেবে’ বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের প্রথমটি থাকছে আজ

জাগো নিউজ : বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের ঘোষণা এল। নির্বাচন ঘিরে এমন জোট, ঐক্য আগেও হয়েছে। এবার কীভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন?

শ ম রেজাউল করিম : আমরা যে কোনো গণতান্ত্রিক দল বা জোট গঠনকে দলীয়ভাবে সাধুবাদ জানাই। তবে সে জোটের লক্ষ্য যদি থাকে গণতন্ত্রের জন্য কাজ না করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মাইনাস করা, অথবা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগকে যে কোনো মূল্যে ক্ষমতাচ্যুত করা, তাহলে অবশ্যই আমাদের কাছে তা উদ্বেগের।

জাগো নিউজ : এমন উদ্বেগ কিসের ভিত্তিতে প্রকাশ করছেন?

শ ম রেজাউল করিম : নির্বাচনে সাধারণত আওয়ামী লীগ ও আওয়ামীবিরোধী স্রোত দেখা যায়। যারা নির্বাচনের বাইরে থাকেন, তারা কীভাবে আওয়ামী লীগকে ঠকানো যায়- তারই পরিকল্পনা নিয়ে বসে থাকেন।

আমরা দেখেছি, ১/১১-এর সময় ড. কামাল হোসেন বিরাজনীতিকরণের চেষ্টা করেছিলেন। তিনি শেখ হাসিনার পক্ষে না দাঁড়িয়ে অসাংবিধানিক ব্যবস্থা কীভাবে স্থায়ী করা যায়, তার পক্ষে ছিলেন। বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিএনপির রাষ্ট্রপতি ছিলেন। আমরা দেখেছি, তিনি শাবাশ বাংলাদেশ নামের একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি নষ্টের চেষ্টা চালাতেন।

jagonews

স্বাধীনতার পর অস্থির রাজনীতির জন্য জাসদ দায়ী। আ স ম রব তখন জাসদের নেতৃত্বে ছিলেন। আমরা যখন এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সোচ্চার তখন তিনি ৭০ দলের একটি জোট করে গৃহপালিত বিরোধী দলের ভূমিকায় ছিলেন। কার্যত তিনি স্বৈরাচারের সহযোগী ছিলেন।

আমরা এখন আরও কিছু মানুষের তৎপরতা দেখছি, যারা কখনই গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে সহায়ক ভূমিকা রাখেননি বরং ভিন্ন স্রোতে সুবিধা নিতে চেয়েছেন। ড. কামাল হোসেনরা বিএনপিকে শক্তিশালী করতেই ঐক্য করছেন।

জাগো নিউজ : ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে একসময় আওয়ামী লীগও জোট করেছিল। এখন কেন তার প্রতি বিরাগভাজন?

শ ম রেজাউল করিম : সম্প্রতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে যারা একমত নন, তাদের সবাইকে পাব না মানসিক হাসপাতালে পাঠাতে হবে। কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ এই জাতীয় বক্তব্য দিতে পারেন না। এই ধরনের বক্তব্য শুনলে অবাক হই! তখন মনে হয়, আসলে তিনি কী চাইছেন?

ড. কামাল সংবিধানপ্রণেতা। জনদাবির পরিপ্রেক্ষিতে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা যুক্ত করা হয়েছিল। সর্বোচ্চ আদালত বললেন, এই সরকার ব্যবস্থা মূল সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বাতিল করে দিলেন আদালত। আদালত কর্তৃক বাতিলকৃত একটি ব্যবস্থাকে ড. কামাল হোসেনরা কীভাবে ফিরিয়ে আনতে চান?

জাগো নিউজ : সংবিধান তো বাইবেল নয়। জনদাবির কথা বলেই সংবিধান ১৬ বার সংশোধন হলো। আওয়ামী লীগও তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার জন্য আন্দোলন করেছিল। এখন কেন আদালতের রায়-ই গুরুত্ব পাচ্ছে?

শ ম রেজাউল করিম : আদালত বলেছে, সংবিধানের মূল স্পিরিটের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু হতে পারে না।

আমরা তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার দাবি করেছিলাম মাগুরার উপ-নির্বাচনের কেলেঙ্কারির জন্য। আর তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে বিএনপি। এটি সবারই জানা। সর্বোচ্চ আদালত যখন বাতিল ঘোষণা করেছে, তখন সরকারের আর কিছুই করার থাকে না। চাইলেই ওই ব্যবস্থা আর যুক্ত করা সম্ভব নয়।

জাগো নিউজ : কিন্তু রাজনীতি ঘিরে উদ্বেগ তো বাড়ছে। আপনার কাছে কোনো বার্তা আছে কি?

শ ম রেজাউল করিম : আমাদের কাছে অনানুষ্ঠানিক ম্যাসেজ আছে, যে কোনো মূল্যে সরকারের পতন ঘটিয়ে তাদের নির্যাতনের খড়গ নামানো যায় কি-না? ড. কামালরা বলছেন, ক্ষমতায় গেলে তারা নাকি প্রথম দুই বছরেই সব ঠিক করে ফেলবেন। আমাদের ধারণা, বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের মূল টার্গেট শেখ হাসিনা। গণতন্ত্রের কথা তারা মুখে বলছেন। কিন্তু তাদের কর্মকাণ্ড থেকে ভিন্ন অর্থ মিলছে।

জাগো নিউজ : এই শঙ্কার ভিত্তি কী?

শ ম রেজাউল করিম : সমস্ত ষড়যন্ত্রের মা হচ্ছে গোপনীয়তা। প্রযুক্তির যুগ। কী কথা হচ্ছে, কাদের সঙ্গে কথা হচ্ছে, তা আমরাও জানতে পারছি।

জাগো নিউজ : বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের আত্মপ্রকাশে আওয়ামী লীগ ভয় পাচ্ছে কি-না? অন্তত সরকারের প্রতিক্রিয়ায় এমনটি মনে করা যায় কিনা?

শ ম রেজাউল করিম : আওয়ামী লীগ মোটেও ভীতু নয়। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভয়ঙ্কর কিছু ঘটবে, তা আওয়ামী লীগ মনে করছে না। আওয়ামী লীগ সবসময় প্রতিকূল পরিবেশকে মোকাবিলা করেই রাজনীতি করে। ১৫ আগস্টের মতো বড় ঘটনা তো আর বাংলাদেশের ইতিহাসে আসবে না। জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল। অনেকেই এরশাদের দলে ভিড়েছিলেন। বহুবার আঘাত এসেছে। ১/১১-এর পর অনেক নেতাই আওয়ামীবিরোধী অবস্থান নিয়েছিল। তাতে কিছুই আসে যায়নি আওয়ামী লীগের।

jagonews

জাগো নিউজ : এসব ঘটনা দলকে তো চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলেছে বটে…

শ ম রেজাউল করিম : চ্যালেঞ্জ থাকবেই। সব মোকাবিলা করে আওয়ামী লীগ আরও কর্মীবান্ধব ও আদর্শবাদী দলে রূপ নিয়েছে।

যারা ঐক্য করছেন, তারা অনেক ষড়যন্ত্র করতে চাইছেন। কিন্তু সে ষড়যন্ত্র নিয়ে আমরা কোনোভাবেই শঙ্কিত নই।

জাগো নিউজ : স্বাধীনতার পর জাসদের ষড়যন্ত্রের কথা বলছিলেন। সেই জাসদ নিয়ে এখন আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনা করছে। আবার নিজ দলের ষড়যন্ত্রের কথাও বললেন। শঙ্কা তো থেকেই যায়…

শ ম রেজাউল করিম : দলের প্রধান শেখ হাসিনা যে দৃঢ়তার সঙ্গে দল পরিচালনা করছেন, তাতে কোনো প্রকার ষড়যন্ত্রের আলামত আমরা দেখতে পাই না। শেখ হাসিনা যে আস্থা ও বিশ্বাসের মাধ্যমে দলের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলেছেন, তার বিপরীতে কারও কোনো সুপ্ত বাসনা থাকলেও প্রকাশ পাবে না।

জাগো নিউজ : এমন আস্থা নেতৃত্বকে একনায়ক বা স্বৈরশাসক করে তোলে। এমন ইতিহাসও আছে…

শ ম রেজাউল করিম : শেখ হাসিনাকে একনায়ক বলা যাবে না এই কারণে যে, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগে নিয়মিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সম্পাদকমণ্ডলীর সভা অনুষ্ঠিত হয়। যৌথসভা হয়। সহযোগী সংগঠনগুলোর সভা হয়। সভানেত্রী সবার মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।

শেখ হাসিনা দল ও সরকারের মধ্যে এমন একটি জায়গায় পৌঁছেছেন, যে কারণে তাকে বলা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে পরিশ্রমী প্রধানমন্ত্রী। তিনি সৎ প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে একজন। শ্রেষ্ঠ রাজনীতিকের মধ্যে একজন। শেখ হাসিনা এখন একটি প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে। তাকে কোনোভাবেই একনায়ক বলা যাবে না। ট্রাস্টের মাধ্যমে তিনি দল পরিচালনা করছেন।

জাগো নিউজ : এই আস্থার প্রশ্নে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে নেতৃত্বের সংকট দেখা দিতে পারে কিনা?

শ ম রেজাউল করিম : প্রধানমন্ত্রী বারবার দলীয় ফোরামে পরবর্তী নেতৃত্বের ব্যাপারে তাগিদ দিয়ে আসছেন। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই।

তবে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় শেখ হাসিনা যখন থাকবেন না, তখন নেতৃত্ব তৈরি হয়ে যাবে। অনেকেই তৈরি হচ্ছেন। দলের সিদ্ধান্তেই নেতৃত্ব আসবে।

এএসএস/এমএআর/আরআইপি

আরও পড়ুন