ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

আলসেমিতেই অনীহা ওভারব্রিজে?

প্রকাশিত: ০১:০৫ পিএম, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

রাজধানীর ব্যস্ত সড়কগুলোর অন্যতম শাহবাগ মোড়। দিনের যেকোনো সময়ই এ মোড়ে মোটামুটি একই ব্যস্ততা থাকে মানুষের। একের পর এক গাড়ি চলছে, মানুষ রাস্তা পার হচ্ছে। সুযোগ বুঝে কেউ হেঁটে পার হচ্ছেন, কারো আবার সে সময়টুকুও অপেক্ষা করার সময় নেই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দৌড়ে রাস্তা পার হন তারা।

সব মিলিয়ে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেল- গুটি কয়েকজন ছাড়া রাস্তা পারাপারে বেশিরভাগ লোকই ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করছেন না। শুধু শাহবাগ নয়, রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে এ রকম চিত্র দেখা যায় প্রতিনিয়ত।

নিরাপদে রাস্তা পারাপারে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে তৈরি করা হরেছে ওভার ব্রিজ। কিন্তু বাস্তবে সে ওভার ব্রিজ ব্যবহার করছে না বেশিরভাগ পথচারী। ফলে বিভিন্ন সড়কে নির্মিত ওভারব্রিজগুলোর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে এত অনীহা কেন? এ নিয়ে বিভিন্ন মহলের রয়েছে নানা মত।

অভিযোগ রয়েছে, বেশিরভাগ ফুট ওভারব্রিজ পরিকল্পিতভাবে নির্মিত হয়নি। যেসব জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে সেখানে সঠিক নিয়ম মানা হয়নি। ওভারব্রিজের সিঁড়ির ধাপগুলো আনুপাতিকভাবে সঠিক নয়। ফলে বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষ চাইলেও তা ব্যবহার করতে পারে না।

অনেক ওভারব্রিজই ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীদের দখলে। ফলে সিঁড়ি ভেঙে সেসব ওভারব্রিজে উঠতে অনেকের সমস্যা হয়। ওভারব্রিজের ওপরের এবং সিঁড়ির পরিবেশও নোংরা অনেকগুলোতে। আবার ওভারব্রিজের ওপরে অনেকে শুয়ে থাকে। এসব প্রতিবন্ধকতার কারণে ওভারব্রিজে ওঠা হয় না অনেকেরই। আর ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার করতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছেন অনেকেই।

পাশে ফুটওভার ব্রিজ রেখে ব্যস্ত শাহবাগ মোড়ে হেঁটে পার হচ্ছিলেন মনির হোসেন নামে এক ব্যক্তি। কেন ওভারব্রিজ ব্যবহার করেন না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি অসুস্থ, ডাক্তার দেখাতে পিজি হাসপাতালে এসেছি। এখন রাস্তার ওপারে যাবো। ওভারব্রিজ যে উঁচু সেখানে উঠে আমার পক্ষে পার হওয়া সম্ভব নয়।

lazz

শুধু অসুস্থ বা বৃদ্ধ লোকই নয় অনেক সুস্থ লোকও রাস্তা পার হচ্ছে না। এ বিষয়ে আরেক পথচারী আরিফ জানান, ওভারব্রিজ আছে। ব্যবহার করছি না। কিন্তু কেন? এটাতো কর্তৃপক্ষের জানা উচিত। আমি রাস্তার ওপারে যাবো। এখন ওভারব্রিজ ব্যবহার করতে যেতে হলে আমাকে দেড়শ থেকে ২০০ গজ হাঁটতে হবে। অথচ মোড়ে থেকে সহজেই রাস্তা পার হওয়া যাচ্ছে। তাই কষ্ট করে কেন আমি ওভারব্রিজ দিয়ে রাস্তা পার হবো? সময় নষ্ট করবো? এখানে তিনটি ওভারব্রিজ আছে যার সবগুলোই মোড় থেকে দূরে নিমার্ণ করা হয়েছে। শুধু এখানে নয় রাজধানীর বেশিরভাগ ওভারব্রিজের একই অবস্থা।

শাহবাগে পথচারীদের জেব্রা ক্রসিং দিয়ে পারাপারে সচেতনতা ও সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির বেশ কিছু সদস্য। ওভারব্রিজ থাকার পরও এটিকে ব্যবহার করতে না বলে জেব্রা ক্রসিংয়ে কেন উৎসাহী করা হচ্ছে জানতে চাইলে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির বেশকিছু সদস্য বলেন, এখানে ব্রিজগুলো অনেক দূরে। মানুষ এতোদূর হেঁটে ওভারব্রিজ ব্যবহার করতে চায় না। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে জেব্রা ক্রসিং ব্যবহারে উৎসাহী করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে ট্রাফিক উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) প্রবীর কুমার রায় জাগো নিউজকে বলেন, ‘ফুটওভারব্রিজ ব্যবহারে আমরা নানা ধরনের সচেতনতামূলক কাজ করছি। রোভার স্কাউট সদস্যরা আমাদের সাহায্য করছেন। এরপরও অনেকে ওভারব্রিজ ব্যবহার করছেন না। সত্যি বলতে এটা আমাদের অনেক দিনের অভ্যাসের কারণে হয়েছে। অভ্যাস না থাকার কারণে কেউ ৫-১০ মিনিট অতিরিক্ত হেঁটে ওভারব্রিজে উঠতে চান না। তবে তাদের এই অভ্যাস পরিবর্তনের জন্য আইন রয়েছে। জরিমানাও রয়েছে। তবে একটা কথা- কেউ যদি নিজে থেকে নিজের নিরাপত্তার বিষয়টি না বিবেচনা করেন তাহলে স্কাউট আর পুলিশ কোনো কিছুতেই কাজ হবে না।

আসিফ নামে এক ব্যক্তি কমলাপুর ওভারব্রিজের বিষয়ে অভিযোগ করেন, ব্রিজের ওপরে হকাররা ব্যবসা করে, অনেকে শুয়ে থাকে। হাঁটা যায় না। এ ছাড়া দিনের আলো নিভে গেলেই ওভারব্রিজে চলে নানা অসামাজিক কার্যক্রম।

এ বিষয়ে ডিসি প্রবীর কুমার জানান, এখন সব পরিষ্কার করা হয়েছে। পথচারীদের কোনো সমস্যা হবে না।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের হিসাব মতে, রাজধানীর ৫১ স্পটে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছে মানুষ। সিগন্যাল না মেনে যেখানে-সেখানে রাস্তা পারাপারের কারণে অকালে ঝরছে অনেক প্রাণ। সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ পথচারীদের অসচেতনতা। এ ছাড়া রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে নগরবাসীর মধ্যে ওভারব্রিজ ব্যবহারে আগ্রহ কম।

এসআই/এনএফ/জেআইএম

আরও পড়ুন